জামায়াত জামায়াত বলে খুনিদের আড়ালের চেষ্টা: এমপির বোন

প্রকাশিত: ১২:২০ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৫, ২০১৭

প্রভাতবেলা প্রতিবেদক: গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকাণ্ডে বিএনপি-জামায়াত জড়িত বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপি সরকার উৎখাতে ব্যর্থ হয়ে গুপ্তহত্যা করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বুধবার (০৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের যৌথসভার সূচনা বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী।

বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের সহিংসতার বিরুদ্ধে মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের শক্ত অবস্থানের কথা উল্লেখ করে তার হত্যাকাণ্ডের জন্য বিএনপি জামায়াতের দিকেই অভিযোগ তোলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, গাইবান্ধা এমন একটা জায়গা, বিশেষ করে সুন্দরগঞ্জ। এখানে একেবারে জামায়াতের একটা সন্ত্রাসী এলাকা। ওই এলাকাতে একসময় জামায়াতের এমপিও ছিলো। সেখানে আওয়ামী লীগ করা যায় এমন অবস্থা ছিলো না। সেখান থেকে লিটন নির্বাচিত প্রতিনিধি হয়ে এসেছে।
তিনি বলেন, গোলাম আজম ওখানে মিটিং করতে চেয়েছিলো, সেই মিটিং ও (লিটন) করতে দেয়নি। সেই থেকে জামায়াতের একটা ক্ষোভ ওর ওপর ছিলো। ওকে বেশ কয়েকবার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। আর অবশেষে তারা সেই হত্যাকাণ্ডটা ঘটালো।

 

এর আগে ‘এমপি লিটন হত্যায় জামায়াত-শিবির জড়িত।জামায়াত-শিবির অনেক দিন থেকেই লিটনকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছিল। অবশেষে তার শেষ রক্ষা হলো না’গাইবান্ধা-১ আসনের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনের হত্যা নিয়ে রবিবার এমন মন্তব্য করেছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক।

আরও পড়ুন  এবি পার্টির সঙ্গে ইইউ নির্বাচনী বিশেষজ্ঞ দলের সাক্ষাৎ

তবে লিটনের স্ত্রীসহ দলের নেতারা হত্যাকাণ্ডের জন্য জামায়াতে ইসলামীকে সন্দেহ করলেও এই সংসদ সদস্যের বোনেরা তদন্তে সব বিষয়কেই মাথায় রাখতে বলছেন।

এরপর মঙ্গলবার নিহত এমপি লিটনের বড় ভাই শহিদুল ইসলাম বলেন, হত্যাকাণ্ডের আগে মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন এমপির নিরাপত্তাকর্মীদের ছুটি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ এবং প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি জানতে চেয়েছেন কে ওই নিরাপত্তাকর্মীদের ছুটি দিয়েছিল। কেনইবা এই ছুটি দেওয়া হলো।

শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘তার (লিটন) শত্রুদের বিষয়ে আমার ধারণা নেই। তবে এলাকার লোক তাকে হত্যা করতে পারে না। আমার ভাইকে ভাড়াটে খুনিদের দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।’

নিহত এমপি লিটনের বড় ভাই শহিদুল ইসলামের এমন বক্তব্যে সর্বত্র তোলপাড় সৃষ্টি হয়। অনেকেই বলছেন, লিটনের বড় ভাইয়ের এমন বক্তব্যে লিটন হত্যাকাণ্ডের মোটিভ নতুন মোড় নিতে পারে।

এদিকে এতো আলোচনা সমালোচনার পর মুখ খুলেছেন এমপি লিটনের বোন তৌহিদা বুলবুল ও ফাহমিদা বুলবুল কাকলী। তারা বলেন, শুধু জামায়াতকে ঘিরে যেন হত্যা মামলার তদন্ত আটকে না থাকে।

মঙ্গলবার লিটনের বাড়িতে দোয়া মাহফিল হয়। এর মাধ্যমে সাংবাদিকদের সামনে আসেন লিটনের দুই বোন ও স্ত্রী। তাদের চোখে মুখে ছিল আতঙ্কের ছাপ, আতঙ্কিত যে তা লুকানোর চেষ্টাও তারা করেননি।

তৌহিদা বুলবুল বলেন, শুধু জামায়াত-জামায়াত করলেই তো হবে না। যদি জামায়াত হয়, জামায়াত। যদি আওয়ামী লীগ হয়, আওয়ামী লীগ। যদি আমি হই, আমি। এনি বডি। আমরা তার পানিশমেন্ট চাই। আমাদের আর কিছু চাওয়ার নেই।

আরও পড়ুন  কাশ্মীরে বোমাবর্ষণ করেছে ভারত

এমপি লিটনের বন্ধু ও তার পরিবারের নিকটজন হিসাবে পরিচিত মুকুট বলেন, জামায়াত হতে পারে। কিন্তু ডাইরেক্ট জায়ামাত করছে-এ কথাটা কখনো বলা হয়নি।
মামলার বাদী ফাহমিদা কাকলী বলেন, আমার ভাইয়ের হত্যাকারী কে, কারা করল- সেটা আমি জানতে চাই এবং তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।

তবে জামায়াতে ইসলামী এক বিবৃতিতে এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, প্রকৃত খুনিদের আড়াল করতে তাদের উপর দোষ চাপানো হচ্ছে।হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা পাঁচজনকে আসামি করে মামলা করেন লিটনের বোন ফাহমিদা। বেশ কয়েকজনকে আটক করলেও তিন দিনেও খুনিদের শনাক্ত কিংবা গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

উল্লেখ্য, গত ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় নিজের বাড়িতে গুলি করে হত্যা করা হয় গাইবান্ধা-১ আসনের সরকারি দলের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে। ঘরের ভেতর ঢুকে খুব কাছ থেকে এমপিকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে সন্ত্রসীরা। মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

 

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

সর্বশেষ সংবাদ