সিলেট ১৯শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |
প্রকাশিত: ১২:৪৬ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ৫, ২০১৭
শাহবাগী হুজুরকে নিয়ে না বলা কথা-০৪
মাওলানা মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, কাতার:
দ্বীনি ইলম এর চর্চা ছাড়া দ্বীন কায়েম হবেনা-এই মূলনীতিতে আমাদের উস্তাদ শাইখ আজিজুর রাহমান শাহবাগী আল মারহুম ছিলেন একরোখা। উনার এই দৃষ্টিভংগীর পক্ষে উনাকে দেখেছি আমৃত্যু তৎপর। উনি যখন অবসর গ্রহণের সময় এলো তখন তাঁর সেই দূর্দান্ত প্রতাপ আর ছিলনা। ছাত্ররা উনার সামনে দিয়েই অফিস বাজারে যেতো আসতো, কিন্তু তিনি যেন তা দেখেননি। কিন্তু দ্বীনি ইলমের ব্যাপারে তার আন্তরিকতা ও আগ্রহ ছিল সীমাহীন-যা একটি ঘটনার বিবরণ দিলে পরিস্কার হবে।
মাদ্রাসার বর্তমান বিএসসি শিক্ষক আব্দুল আজিজ। তিনি এই মাদ্রাসারই ছাত্র ছিলেন। তিনি যখন ১০ম শ্রেণী পাশ করে সিদ্ধান্ত নিলেন কলেজে ভর্তি হবেন, তখন আমাদের শাহবাগী হুজুর বেঁকে বসলেন। আজিজ ভাই দাখিল পাশ করেছেন বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে। উনার আব্বার প্রতি উনার ছিল সীমাহীন দখল। আব্বাকে ম্যানেজ করে প্রিন্সিপাল বরাবরে নিয়ে এসেছেন টিসি নেয়ার জন্য। কিন্তু শাহবাগী হুজুর টিসি দেবেন না। ছাত্র সংসদের জিএস হিসাবে হোক আর সেই সময়কার দায়িত্বশীল ছাত্র নেতা হিসাবে হোক, এক সময় বিষয়টাতে আমাকেও সম্পৃক্ত হতে হলো। শাহবাগী হুজুরের সাথে বিষয়টা নিয়ে একান্তে আলাপ হলো। তিনি আক্ষেপ করে বললেন, সবাই যদি কলেজে চলে যায়, বিশেষ করে আব্দুল আজিজের মতো ব্রেইনওয়ালা ছেলেরা যদি কলেজে চলে যায়, তাহলে দ্বীনি ইলমের কি হবে? তোমরা যারা দ্বীন কায়েম করতে চাও, তারা মনে রেখো, দ্বীনি ইলমের খাদেমদের ছাড়া বা দ্বীনি শিক্ষায় শিক্ষিত কর্মী ছাড়া দ্বীন কায়েম হবেনা।
আজকের এই দিনে সত্যিকার ইসলামী আন্দোলনের নেতৃত্বের দিকে আমি যখন তাকাই, তখন দেখি যারা দ্বীনি ইলমকে যথাযথ ভাবে অর্জন করেছেন, তারাই গঠনমূলক সত্যিকার নেতৃত্ব দিতে পেরেছেন। আজীজ ভাইয়ের টিসি অবশেষ হয়েছিল। তিনি সিলেটে চলে গেলেন। বিএসসি পাশ করার পর সেই শাহবাগী হুজুরই তাকে নিজের প্রতিষ্ঠানে চাকুরী দিলেন। আজীজ ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ খুব একটা না থাকলেও দিলের মধ্যে সব সময় আছেন, আছেন দ্বীনের পথে। আর দ্বীনের পথে থাকার পেছনে প্রধান ভূমিকা পালন করে সেই দ্বীনি ইলম। দ্বীনি ইলমের ক্ষেত্রে উনার চর্চা ব্যতিক্রমী।
শাইখ আজিজুর রাহমান শাহবাগীবুখারীর ক্লাসে প্রস্তুতি ছাড়া খুব একটা হাজির হতেন না। আগামীকাল কি পড়াবেন, তা পূর্বের রাত্রে ভাল ভাবে পড়ালেখা করে সম্ভাব্য প্রশ্ন সমূহের উত্তর নিয়ে তিনি ক্লাশে হাজির হতেন। সাধারণতঃ ২য় পিরিওডে তিনি বুখারীর ক্লাস নিতেন। একদিন তিনি ক্লাশে হাজির হলেন দেরীতে। বিয়ানী বাজারের সুপাতলার তাজ উদ্দিন আমাদের ক্লাশের মুখকাটা সহপাটি ছিলেন। যেমন বয়সে ছিলেন সবার বড়, তেমনি স্বাস্থ্য, উচ্চতার দিকে দিয়েও ছিলেন সবার বড়। তিনি যা মনে আসতো তা অনায়াসে বলে ফেলতেন। শাহবাগী হুজুরকে তিনি দেরীর কারণ জিজ্ঞেস করলেন। আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় শিক্ষক জনাব মাওলানা আজিজুর রাহমান শাহবাগী জানালেন, তিনি আমাদের যা পড়াবেন গত রাতে তার উপর পড়ালেখা করতে গিয়ে সম্ভাব্য প্রশ্ন সমূহের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে হঠাৎ করে ফজরের আজান শুনতে পান। বিধায় ফজর নামায পড়ে ঘুমান। আর ঘুম থেকে উঠতে দেরী হওয়ার কারণে ক্লাশে আসতে দেরী হলো। উনার এই বর্ণনা আমার মনের মধ্যে দাগ কাঠলো। আমি গতকাল যা পড়ানো হয়েছে বা আজ যা পড়ানো হচ্ছে তার কোন অংশই বাড়ীতে পড়িনি। হুজুর ২ঘন্টার ক্লাশ শেষ করে চলে গেলেন। আমি একজন একজন করে সকল উপস্থিত ছাত্রের কাছে প্রশ্ন রাখলাম যে, কে কে গতকালের এই দারসের উপর হোমওয়ার্ক করেছে বা আজকের পড়াটা বাড়ীতে পড়ে এসেছে? কেউ পড়েনি। আমার মন শাহবাগী হুজুরের প্রতি শ্রদ্ধায় ভরে উঠলো। চাকুরীই যদি উদ্দেশ্য হতো, তা হলে একজন শিক্ষক রাতের ঘুমকে হারাম করে এভাবে পড়ালেখা করতেন না। কেবলমাত্র দ্বীনি ইলমের চর্চা, একদল সত্যিকার আলেম তৈরী করার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যেই তার এই প্রচেষ্ট। আল্লাহ তার এই প্রচেষ্টাকে কবুল করুন। তার প্রতি সন্তুষ্ট হোন। তাকে জান্নাতের মেহমান করুন।
লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও আলেমে দ্বীন।
সম্পাদক : কবীর আহমদ সোহেল
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ আব্দুল হক
ঢাকা অফিস : ২৩৪/৪ উত্তর গোড়ান, খিলগাঁও, ঢাকা ।
সম্পাদক কর্তৃক প্রগতি প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিঃ, ১৪৯ আরামবাগ, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।
সিলেট অফিস: ২৩০ সুরমা টাওয়ার (৩য় তলা)
ভিআইপি রোড, তালতলা, সিলেট।
মোবাইল-০১৭১২-৫৯৩৬৫৩, ০১৭১২-০৩৩৭১৫
E-mail: provatbela@gmail.com,
কপিরাইট : দৈনিক প্রভাতবেলা.কম
আমাদের সর্ম্পকে গোপনীয়তা যোগাযোগ
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি