আশফাককে নিয়ে হুজুরের যত টেনশন

প্রকাশিত: ৩:৩৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১২, ২০১৭

আশফাককে নিয়ে  হুজুরের যত টেনশন
(শাহবাগী হুজুরকে নিয়ে না বলা কথা-০৯))
মাওলানা মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম, কাতার:
শাহবাগী হুজুরের একমাত্র ছেলে আশরাফ। দেখতে শাহবাগী হুজুরের মতো লম্বা চওড়া। চেহারা ধবধরে সাদা। স্বাস্থ্যে হালকা পাতলা। ক্লাসের সেরা ছাত্র না হলেও লেখাপড়ায় ভাল। অপর দিকে লেখাপড়ার বাহিরের জ্ঞান তার অনেক-আমার বিবেচনায় ক্লাসের সকল ছাত্রের চেয়ে বেশী। আমার সাথে ছিল তার অন্যরকম হৃদ্যতা।
কোন এক অজানা কারণে আমি ১০শ্রেণীর নিচের সকল ছাত্রকেই নাম ধরে ডাকতাম। যেখানে অন্যরা অমুক ভাই, তমুক ভাই ইত্যাদি বলতেন। আশফাককেও আমি নাম ধরেই ডাকতাম। আমি যখন সুজাউল মাদ্রাসায় কামিল পড়তে গেলাম, তখন সামান্য দিনের ব্যবধানে আশফাকের সাথে আমার ভাল একটা সম্পর্ক হয়ে উঠলো।
দৈনিক সিলেটের ডাকে তখন লিখতেন আব্দুল কাদের তাপাদার।বড়লেখা কেন্দ্রিক  বেশ কিছু রিপোর্টসহ বিভিন্ন প্রতিবেদন ছাপা হতো তার নামে। তার সাথে সে সময় ছিল ভাল সম্পর্ক।  তাপাদার ব্যক্তিগত জীবনে যেমন ছিলেন অত্যন্ত পরিপাটি, লিখনির জগতেও তার প্রতিটি শব্দ ছিল তেমন পরিপাটি। তিনি এক সময় আমার পোষ্টাল এড্রেসে দৈনিক সিলেটের ডাক পাঠানো শুরু করলেন। সুজাউল আলিয়া মাদ্রাসার কোনায় পোষ্ট অফিস-নাম “সুজাউল মাদ্রাসা পোষ্ট অফিস”। আশফাকের আবাস ছিল মাদ্রাসার আশপাশ এলাকায়। সেই সুবাদে সিলেটের ডাক পোষ্ট অফিস থেকে আমি নেয়ার আগেই নিয়ে যেতো আশফাক। গুরুত্বপূর্ণ খবরগুলো পড়ে এর পর আমাকে দিতো।
একদিন শাহবাগী হুজুর চরম বিরক্ত হয়ে আমাকে তলব করলেন।
– নজরুল! তুমি মাদ্রাসার ছাত্রদের নিয়ে সংগঠন করো। আমি কি কখনো নিষেধ করেছি?
= না, করেননি।
– তোমার সংগঠনের বিরুদ্ধে আমি কি কখনো কোন বক্তব্য দিয়েছি?
= না, দেননি।
– তোমার সংগঠনের প্রোগ্রাম এই মাদ্রাসা ক্যাম্পাসে হয়। আমি কি কখনো বাঁধা দিয়েছি?
= না, বাঁধা দেননি।
– তাহলে কেন তুমি আমাকে ডিস্টার্ভ দেও?
= আমি বুঝিনি হুজুর, আপনি কি বুঝাতে চাচ্ছেন।
হুজুর বললেন, আমার একটি মাত্র ছেলে। কোথায় পড়ালেখা করবে। তা না করে শুধু সিলেটের ডাক নিযে ঘুরে। সিলেটের ডাক নাকি তুমি তাকে দাও!
আমি বললাম, দেখেন হুজুর! আপনি যদি বিব্রত বোধ করেন, তাহলে আপনার ছেলের সাথে সব ধরণের যোগাযোগ আমরা বন্ধ করে দেবো। আমরা তাকে আমাদের সংগঠনের কোন প্রোগ্রামে দাওয়াত দেবোনা। কিন্তু আজ থেকে আশফাকের সম্পূর্ণ দায়িত্ব আপনার থাকবে।
শাহবাগী হুজুর বললেন, তাই-ই যেন হয়।
আমরা সব ধরণের যোগাযোগ তার সাথে বন্ধ করে দিলাম। আশফাককে এড়িয়ে চলতে শুরু করলাম। কিন্তু আশফাক খুব মেধাবী এবং চৌকস ছেলে। বিধায় সব বুঝে গেলো। সে তার আব্বার উপর চরম চটে গেলো এবং নামায ও পড়াশুনা একদম বাদ দিয়ে দেয়ার ঘোষান দিল। একমাত্র ছেলের এমন আচরণে শাহবাগী হুজুর ভেঙে পড়লেন।
মাত্র ক’দিন পর আবার শাহবাগী হুজুরের তলব। আমার কাছে দূঃখ প্রকাশ করে বললেন, ছেলে জন্ম দিয়েছি আমরা। লালন পালন করছি আমরা। আর তোমরা কি যাদু করেছো। আমাদের সন্তানরা এখন তোমাদের কথা শুনে আমাদের কথা শুনেনা। ওকে তুমি নামাযের তাকিদ দাও।
আবার তিনি আশফাকের দায়িত্ব আমাদের হাতে তুলে দিলেন।
লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও আলেমে দ্বীন।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

সর্বশেষ সংবাদ