পরিবেশ দুষণের শুনানীতে লাফার্জ লাপাত্তা

প্রকাশিত: ১:৫৬ পূর্বাহ্ণ, জানুয়ারি ৩১, ২০১৭

সংবাদদাতা, ছাতক (সুনামগঞ্জ): সুনামগঞ্জের ছাতকে বৃহত্তম সিমেন্ট উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠান লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট লিমিটেডের বিরুদ্ধে পরিবেশ দুষণের ব্যাপক অভিযোগ উঠেছে। গত৩০জানুয়ারি ছিল এসংক্রান্তে শুনানীর ধার্য্য কারিখ। কিন্তু লাফার্জ কর্তৃপক্ষ শুনানীতে হাজির না হয়ে সময়ের প্রার্থনা করেছেন বলে জানা গেছে। ছাতক উপজেলা ভূমি অফিসের স্মারক নং ৩১.৪৬.৯০২৩.০০০.২২.০০২.১৭-১০৯ (৩), তাং ২৩.০১.২০১ইং ছাতকের ঠেঙ্গারাঁও গ্রামের নাগরিক পরিবেশও যুব সমাজকল্যাণ সংস্থা (রেজিঃ নং ৯২৩/২০১৬ইং) এর সভাপতি/সম্পাদককে ১ম পক্ষ এবং ছাতকস্থ লাফার্জ সুরমা সিমেন্ট লিঃ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালককে ২য় পক্ষ করে নোটিশ করা হয়। নোটিশে বলা হয়, ২য় পক্ষের বিরুদ্ধে পরিবেশ দুষনের বিষয়ে একটি আবেদন পাওয়া গেছে। আবেদনের প্রেক্ষিতে ৩০জানুয়ারি এবিষয়ে শুনানীর তারিখ ধার্য্য করা হয়েছে। এশুনানীতে দু’পক্ষকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ এসিল্যান্ড অফিসে উপস্থিত থাকার জন্যে অনুরুধ করা হয়। কিন্তু ধার্য্য তারিখে লাফার্জ কর্তৃপক্ষ উপস্থিত না হয়ে সময় প্রার্থনা করেন। এতে লাফার্জের মূল প্ল্যান্ট এলাকাসহ কনভেয়ার বেল্টের দু’পার্শ্বে অবস্থিত বসত বাড়ি মারাত্মক শব্দ দুষণের কবলে এবং নির্গত ডাষ্টে টিনের চালসহ গাছ-পালার পাতা ধুসর রং ধারণ করেছে। ফলে এসব এলাকার ফলবতী গাছগুলোতে কোন ধরনের ফসল উৎপাদন হচ্ছেনা। এভাবে সিমেন্ট উৎপাদনের প্রধান স্থানীয় কৃষি জমি থেকে সংগ্রহ করায় লাফার্জের পশ্চিম বিস্তীর্ণ কৃষি জমি এখন জলাশয়ে পরিণত হয়েছে। এসব পরিবেশ দুষণের বহুবিধ ঘটনার ক্ষতিকর দিকগুলোর প্রতিকার চেয়ে সংগঠনের একাধিক নেতৃবৃন্দ ২০১৪সালের ২০মে’ সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক বরাবরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন করেন। এতে ২০১৪সালের ১৯জুন ছাতক উপজেলা কৃষি অফিসার সরেজমিন তদন্ত করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার স্মারক নং ৬৪৫/০১, ০৩.০৭.২০১৪ইং মূলে জেলা প্রশাসক বরাবরে এর সত্যতার ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। এতে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কার্যাল থেকে লাফার্জ কর্তৃপক্ষকে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করেন। প্রতিবেদনে বলা হয়, কৃষি জমির অবস্থা বিরান ভূমি ছাড়া আর কিছুই চোখে পড়েনি ও বসত বাড়িতে গাছ-পালাগুলো পর্যবেক্ষণকালে কোন ফল গাছে মৌসুমি ফল দেখা যায়নি। এর কারণ, লাফার্জের বিষাক্ত ডাষ্ট পাতার উপর পড়া, যা- একটি আবরন তৈরি করে গাছের সালোক সংশ্লেষনে (ঢ়যড়ঃংুহঃযবংরং) বাঁধা প্রদান করে। এই এলাকার শতকরা ৯০ভাগ মানুষ স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তদন্তকালে তাদের স্বাস্থ্যর কংকালসার অবস্থা পরিলক্ষিত হয় বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। অভিযোগকারি আইনুল আহমদ জানান, পরিবেশ দুষণের ব্যাপারে তৎকালীন প্ল্যান্ট অসিম চট্টোপাধ্যায়কে টেলিফোনে পরিবেশ দুষণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরুধ করলে কমিউনিটি রিলেশন ম্যানেজার সাব্বির হোসেন সংগঠনের নেতা আইনুল আহমেদকে ডেকে নিয়ে বলেন, পরিবেশ দুষণ হবেই, পারলে নাকে মাস্ক ও চোখে চশমা দিয়ে থাকো, অন্যথায় এলাকা ছেড়ে চলে যাও। এসময় তিনি তার বিরুদ্ধে মামলা হামলার ভয়-ভীতি প্রদর্শন করেন। এরপর তদন্ত অফিসার সাব্বির হোসেনকে বলেন, আবেদনে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকার কথা বলে পাঁচ মিনিট সময় দেয়ার দাবি জানালে সাব্বির হোসেন এতে অপারগতা প্রকাশ করেন। সর্বোপরি এই তদন্তে পরিবেশ দুষণের বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়। তাই জনস্বার্থে ও কৃষি জমি রক্ষার স্বার্থে ফ্যাক্টরী কর্তৃক যে বিষাক্ত ডাষ্ট নির্গত হয় তা- বিশুদ্ধ করার যদি বৈধ কোন উপায় থাকে তা- অতিস্বত্তর বাস্তবায়নসহ কৃষি জমির টপ সয়েল কেটে নেয়ার বিষয়টি আইনের আওতায় এনে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তদন্ত কর্মকর্তা। ২০১৬সালের ৭ডিসেম্বর সংস্থা জেলা প্রশাসরে কাছে আরেকটি লাফার্জের শব্দও পরিবেশ দুষণের অভিযোগ করে। বিষাক্ত ডাষ্টের কারণে কারখানার পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোর ফলজ গাছ-গাছালীর অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। এসব গাছের পাতাগুলো ধুসর রঙ্গে পরিণত হয়েছে এবং বসত বাড়ির টিনে জং ধরেছে। ফলজ উৎপাদন এখন শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। প্রায় শতকরা ৯০ভাগ মানুষ পরিবেশ দুষণ জনিত রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছে। ইতিমধ্যে ঠেঙ্গারগাঁও গ্রামের উকিল আলী ও সফিকুল ইসলাম ক্যান্সার রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। শ্বাস কষ্ট, এলার্জি ও সাইনোসাইটিসসহ বিভিন্ন রোগে এলাকাবাসী মারাত্মকভাবে আক্রান্ত হচ্ছে। এর যেন কোন প্রতিকার নেই। এছাড়া কৃষি জমি হতে মাঠি সংগ্রহের ফলে ঠেঙ্গারগাঁও, নোয়ারাই, শারফিননগর ও বাতিরকান্দি মৌজার প্রায় কয়েক শ’একর জমি ৪ফুট থেকে ৮ফুট পর্যন্ত খনন করায় অনাবাদি ও জলা ভূমিতে পরিণত হয়েছে। কনভেয়ার বেল্টের শব্দ দুষণের ফলে অনেক শিশু-কিশোর বধির হওয়ার উপক্রম। এভাবে ঠেঙ্গারগাঁও, নেয়ারাই, শারফিননগর, জয়নগর, জোড়াপানি, মৌলা, বন্দরগাও, সিঙ্গেরকাছ, আঙ্গারুকা, কালাপসি, সামরগাঁও, বড় ময়দান, পূর্ব ঘিলাতলী, হাতিরভাঙ্গা, তেরাপুরসহ এলাকার লোকজন প্রচন্ড শব্দ দুষণে ভোগছেন বলে অভিযোগে বলা হয়। এব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর এর মহাপরিচালক রইছ উল আলম মন্ডল, পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ছালাহ উদ্দিন চৌধুরী, সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম, লাফার্জের কমিউনিটি রিলেশন্স অফিসার সাব্বির হোসেন, ইমাম তৌফিক (ঢাকা), তানভীর রহমান, ছাতক ইউএনও আরিফুজ্জামান ও এসিল্যান্ড শেখ হাফিজুর রহমান পরিবেশ দুষণের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিয়েছেন।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

সর্বশেষ সংবাদ