অভিমানী মহাবীর

প্রকাশিত: ২:২০ অপরাহ্ণ, মে ২৫, ২০১৭

অভিমানী মহাবীর

মুনশী ইকবাল: মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে নিয়ে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন কিংবা গণতন্ত্রের মুক্তি, মানবতার জয়গান সবখানে আছেন তিনি। তার গান, কবিতা, গল্প কিংবা প্রবন্ধ যুগিয়েছে প্রেরণা বারবার। তা হোক রনাঙ্গনে নয়তো আন্দোলনের মাঠে। কখনো তিনি নিজে নেমেছেন মাঠে। সৈনিকের বেশে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধের ময়দানে অথবা হারমোনিয়াম নিয়ে রাজপথে। আর তাই তিনি তার বিচরণের রাজ্যে অন্য সবার চেয়ে আলাদা। তাকে আলাদা করে ডাকতে হয়। আলাদা করে বুঝতে হয়। তার সাথে আলাদা করে পরিচিত হতে হয়। তার সাথে মিশতে হলে আলাদা হতে হয়। তিনি বিদ্রোহী মহাবীর, বিদ্রোহী কবি, আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
১১৮ বছর আগের ১১ ই জ্যৈষ্ঠ পশ্চিমবঙ্গের এক গ্রাম চুরুলিয়ায় তিনি পৃথিবীতে আলোর মুখ দেখেন। বাংলা ১৩০৬ সাল আর খ্রীষ্টিয় ১৮৯৯ সালের ২৫ মে। স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাকে দেশে নিয়ে আসেন। তবে স্বাধীন বাংলার বাতাসে তিনি বুক ভরে সেভাবে নিঃশ্বাস নিতে পারেননি। এখানে বেঁচে ছিলেন তিনি মাত্র ৪ বছর। তার জীবনের শেষ দিনগুলো কাটে ঢাকার পিজি হাসপাতালে বড়ো কষ্টে। অবশেষে অভিমানী এ কবি ১৯৭৬ সালের ২৯ আগষ্ট বাংলা ১৩৮৩ সালের ১২ই ভাদ্র পৃথিবীর জীবন থেকে বিদায় নেন।

আরও পড়ুন  দেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক : কাদের

নজরুল প্রেমের কবি, সাম্যের কবি, বিরহের কবি। তবে সবকিছু ছাপিয়ে অন্যায়ের সাথে তার আপোষহীন বিদ্রোহী সত্ত¡া রচনা কিংবা কাজে ঘুরে ফিরে এসেছে বারবার। তার প্রেম, সাম্য, বিরহে বিদ্রোহ উছলে উঠেছে শৈল্পিক গুনে। আর এখানেই নজরুল নিজের মতো করে আলাদা আর সকল থেকে। আর তাই তিনি বিদ্রোহী কবি।
নজরুল ছিলেন একাধারে কবি, গীতিকার, সুরকার, সুর¯্রষ্টা, সংগীত শিল্পী, নাট্যকার, অভিনেতা, গল্পকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, দার্শনিক। মূলকথা বাংলা সাহিত্যের এমন কোনো দিক নেই যেখানে নজরুল বিচরণ করেননি। বাংলা সাহিত্যে নজরুল এনেছেন নয়া এক মাত্রা। বাংলা গানে তিনি নতুন এক ধারার জন্ম দেন। আর তা হলো ইসলামী গান। এর পাশাপাশি তিনি অনেক শ্যামাসংগীত এবং হিন্দু ভক্তিগীতি রচনা করেন। নজরুল প্রায় ৩ হাজার গান রচনা করেন, তার বেশির ভাগে সুর তিনিই করেন। তার সে গান নজরুল সংগীত না নজরুল গীতি নামে পরিচিত।
বাংলা কবিতায় তিনি সমসাময়িক সকল ধারা ভেঙ্গে নিয়ে আসেন নতুন এক সুর। যে সুরে বেজে ওঠে বিদ্রোহের আওয়াজ। তার বিদ্রোহী কিংবা সাম্যবাদী আজো প্রতিধ্বনিত হয় প্রতিটি বাঙালি হৃদয়ে অবিকল ধারায়। আজকের এই দিনে কবিকে মনে করছি গভীর শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায়। তিনি আমাদের কবি, মানুষের কবি। আমাদের জাতীয় কবি। তিনি মিশে আছেন আমাদের জাতি সত্তায়। আমাদের হৃদয়ে আবেগের সাথে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

সর্বশেষ সংবাদ