‘দাবি মোদের একটাই, নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই’

প্রকাশিত: ২:১৪ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৫, ২০১৮

‘দাবি মোদের একটাই, নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই’

শাবি সংবাদদাতা:  জাফর ইকবালের ওপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় দিনভর বিক্ষোভ হয়েছে সিলেটে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি)।

রোববার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে দফায় দফায় দিনভর বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শত শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী।

অধ্যাপক জাফর ইকবাল শাবিপ্রবির কম্পিউটার বিজ্ঞান ও ইঞ্জিনিয়ারিং (সিএসই) বিভাগের শিক্ষক। শনিবার নিজ ক্যাম্পাসেই হামলার শিকার হন তিনি। একটি বিভাগের অনুষ্ঠানে তাঁর মাথায় পেছন থেকে ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্ত।

অধ্যাপক জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনায় আজ ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নেননি ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া শিক্ষকদের বড় একটি অংশ ক্লাস নেওয়ার মানসিক শক্তি হারিয়ে ফেলেন বলে জানান। একই কথা বলেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

দিনব্যাপী কর্মসূচি পালন করে শাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি, শাবিপ্রবি কর্মকর্তা কর্মচারী ঐক্য পরিষদ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, আওয়ামী ও বিএনপিপন্থী শিক্ষকদের দুটি প্যানেল, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, ছাত্রলীগ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। তাঁরা বিক্ষোভ প্রদর্শন করে হামলায় জড়িতদের শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

সকাল সাড়ে ৯টায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে আয়োজিত কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শত শিক্ষার্থী অংশ নেন। বিক্ষোভ মিছিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু চত্বর থেকে শহীদ মিনারের রাস্তা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সারি লক্ষ্য করা যায়।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে সিএসই বিভাগের বিভাগের অধ্যাপক শহীদুর রহমান বলেন, ‘জাফর স্যার কখনোই ইসলাম বিদ্বেষী ছিলেন না।

আরও পড়ুন  ইউটিউব বিজ্ঞাপন নীতিমালায় পরিবর্তন

যদি তিনি ইসলাম বিদ্বেষী হতেন তাহলে দাঁড়ি-টুপি পরিহিত আমরা কেউই সিএসই বিভাগের শিক্ষক হতে পারতাম না। সাদাকে সাদা, কালোকে কালো বলায় আজ জাফর ইকবালের এই পরিণতি।’

বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে মানববন্ধনের আয়োজন করে শিক্ষক সমিতি। মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের দুই শতাধিক শিক্ষক অংশগ্রহণ করেন। একই সময়ে কর্মকর্তা সমিতি ও কর্মচারী সমিতির ব্যানারে মানববন্ধনে অংশ নেন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।

মানববন্ধন শেষে শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক সৈয়দ হাসানুজ্জামান শ্যামল বলেন, ‘অধ্যাপক জাফর ইকবাল মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একজন ধারক ও  বাহক।

তাঁর ওপর হামলার মানে হলো মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর আঘাত। তাই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বপক্ষের শক্তিকে আজ জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।’


দুপুর ১২টায় বিক্ষোভ মিছিল করে সম্মিলিত সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও স্বেচ্ছাসেবী জোট। বিক্ষোভ মিছিলটি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়। তা বঙ্গবন্ধু চত্বরে এসে শেষ হয়। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জোটের বিক্ষোভ মিছিলের সঙ্গে যোগ দেয়। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজকেও ওই বিক্ষোভ মিছিলে যোগ দিতে দেখা যায়। একই সময়ে সাধারণ শিক্ষার্থীরা গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করে।

দুপুর দেড়টায় বিক্ষোভ মিছিল বের করে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট। মিছিলটি পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে এসে সমাবেশে মিলিত হয়। পরে দুপুর ২টায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। এ সময় ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।

স্লোগানে মুখর ক্যাম্পাস 
দিনব্যাপী স্লোগানে মুখর ছিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। মানববন্ধন-মিছিল-সমাবেশ প্রত্যেক জায়গাতেই স্লোগান দেন প্রতিবাদী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘সাস্টিয়ান সাস্টিয়ান, এক হও, এক হও’, ‘জাফর স্যারের ওপর হামলা কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘তোমার আমার অধিকার, নিরাপত্তা জোরদার’, ‘দাবি মোদের একটাই, নিরাপদ ক্যাম্পাস চাই’, ‘জঙ্গিবাদের আস্তানা, এই ক্যাম্পাসে হবে না’, ‘ক্যাম্পাসে রক্ত কেন, প্রশাসন জবাব চাই’  ইত্যাদি স্লোগান দিতে থাকে।

আরও পড়ুন  তিন ট্যুরিজম পার্কের মহাপরিকল্পনা দেখলেন প্রধানমন্ত্রী

তদন্ত কমিটি গঠন
বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। রোববার শাবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ জানান, তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটির প্রধান হলেন সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল গণি। তদন্ত কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম ও সিএসই বিভাগের অধ্যাপক ড. শহীদুর রহমান।

শিক্ষার্থীদের তিন দফা
অধ্যাপক জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনায় তিন দফা দাবি পেশ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলো হচ্ছে, হামলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে সঠিক তথ্য  প্রকাশ করা, জড়িতদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা এবং ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ ছাড়া ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের প্রবেশ কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ এবং দ্রুততম সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণের দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

সর্বশেষ সংবাদ