বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ: ৩লাখ মানুষ পানিবন্দি

প্রকাশিত: ৮:৩১ অপরাহ্ণ, জুন ১৭, ২০১৮

নিজস্ব সংবাদদাতা, মৌলভীবাজার:  ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে মৌলভীবাজারের বন্যার সার্বিক পরিস্থিতি।বন্যার পানি মৌলভীবাজার শহর প্রতিরক্ষা বাঁধের ভাঙন দিয়ে শহরে প্রবেশ করেছে।গতকাল শনিবার মধ্যরাতে পৌর এলাকার বাড়ইকোনা এলাকায় মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙন দেখা দেয়। এর পরই পৌর এলাকার ৬, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বির্স্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। এর পাশাপাশি মোস্তফাপুর ইউনিয়ন ও  কনকপুর ইউনিয়নেরও কিছু এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।

শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় গতকাল দুপুর থেকে সেনাবাহিনীর একটি দল, পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), মৌলভীবাজার পৌরসভা, জেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় জনসাধারণ বালিভর্তি বস্তা ফেলে বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করে।গত কয়েকদিন ধরে ভারতের উত্তর ত্রিপুরা এলাকায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় মনু, কুশিয়ারা ও ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধি পায়।

অপরদিকে কুলাউড়া, কমলগঞ্জ, রাজনগর ও সদর উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। তলিয়ে গেছে এসব এলাকার বাড়িঘরসহ রাস্তাঘাট। পানিবন্দি রয়েছে জেলায় প্রায় পাঁচশ গ্রামের তিন লাখ মানুষ।জেলা সদরের সঙ্গে এসব উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।

গত চারদিনে ভারতের উত্তর ত্রিপুরা এলাকায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় মনু, কুশিয়ারা ও ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। মনু ও ধলাই নদীর এ পর্যন্ত ২২টি স্থানে প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে বন্যার পানি প্রবেশ করে কুলাউড়া, কমলগঞ্জ, রাজনগর ও সদর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত করেছে। ১৩ জুন সকাল থেকে তলিয়ে গেছে এ সব বাড়ি ঘর সহ রাস্তাঘাট। পানি বন্দী রয়েছে জেলায় প্রায় ৫ শত গ্রামের ৩ লাখ মানুষ। জেলা সদরের সাথে উপজেলা সদরের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। গত ৪ দিনে জেলার বিভিন্ন স্থানে বন্যার পানির তোড়ে ভেসে গিয়ে ৫ জন মারা গেছে।
সেনাবাহিনীর মেজর মোহাইমিন বিল্লার নেতৃত্বে ২১ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাটালিয়ন সিলেট সেক্টরের ৭০ সদস্যের একটি টিম কাজ করছে। সেনাবাহিনীর দলটি মনু নদীর শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ রক্ষায় বালি ভর্তি বস্তা ফেলে চেষ্টা চালাচ্ছে। বন্যায় তলিয়ে যাওয়া এলাকায় আটকা পড়া মানুষ উদ্ধারে কুলাউড়া, কমলগঞ্জ ও রাজনগরে সেনাবাহিনী কাজ করছে। flood
পাশাপাশি শহরের বাসা বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালামাল নিরাপদ স্থানে অনেকেই সরিয়ে নিচ্ছেন। অনেকেই নীচ তলা ছেড়ে আত্মীয় স্বজনের দোতালা বাড়িতে আগে থেকেই আশ্রয় নিয়েছেন। প্রাইভেট কার সহ ব্যক্তিগত গাড়ী উঁচু স্থানে রেখেছেন। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এম সাইফুর রহমান সড়ক দিয়ে সকল প্রকার যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সরকারী ও বে-সরকারী প্রতিষ্ঠানের মূল্যবান কাগজপত্র উঁচু স্থানে নিয়ে রাখা হচ্ছে।
ঈদের আগের রাতে বাঁধ ভাঙ্গার আতঙ্কে শহরবাসী রাত জেগে কাটান, আজও তাদের একই ভাবে রাত কাঠাতে হবে। শহর রক্ষার জন্য মনু নদীর উত্তর পাড়ের প্রতিরক্ষা বাঁধ প্রশাসন থেকে কেটে দেয়ার গুজবে রাত জেগে বাঁধের উপর দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছেন ওই এলাকার মানুষ।
রাত ৮টায় মনু নদী মৌলভীবাজার শহরের চাঁদনীঘাটের কাছে বিপদ সীমার ১৮০ সেঃ মিটার ও মনু রেলওয়ে ব্রিজের কাছে ১১৫ সেঃ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপর দিকে কুশিয়ারা নদী শেরপুরে কাছে ৪০ সেঃ মিঃ ও কমলগঞ্জে ধলাই নদী বিপদ সীমার ১২ সেঃ মিঃ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মনু নদীর শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় শহরবাসীকে সতর্ক থাকতে মাইকিং করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মোঃ তোফায়েল ইসলাম জানান, জেলার ৩টি উপজেলায় সেনাবাহিনী কাজ করছে। মনু নদীর শহর প্রতিরক্ষা বাঁধের ঝুঁকিপূর্ণ স্থান গুলো শুক্রবার রাতে সেনাবাহিনীর একটি টিম পরিদর্শন বাঁধ রক্ষায় কাজ করেছে। এ পর্যন্ত ৩৪৩ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। নগদ ৫ লক্ষ টাকা বন্যা আক্রান্ত এলাকায় বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও আরো ৫শ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ নগদ টাকা চাওয়া হয়েছে।
মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মোঃ ফজলুর রহমান জানান, শহর এলাকায় মনু নদীর শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ ঝুঁকিতে রয়েছে। পৌর সভার উদ্যোগে গত ৩দিন থেকে বাঁধ রক্ষায় তিনি সহ পৌরসভার কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা কাজ করে যাচ্ছেন। ১৯৮৪ সালে শহরে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। ওই সময়ের নদীর পানির উচ্চতার চেয়ে ২ থেকে আড়াই ফুট নদীতে পানি বেশী হয়েছে। বন্যায় জানমালের ব্যাপক ক্ষতি সহ হতাহতের ঘটনা ঘটেছিল।flood_2 সে দিনের ঘটনা পৌরবাসি আজও ভুলতে পারেনি। ১৬ জুনু দুপুর থেকে সেনাবাহিনী মনু নদীর শহর প্রতিরক্ষায় কাজ শুরু করছে। পাশাপাশি জেলা প্রশাসক মোঃ তোফায়েল ইসলাম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহজালাল ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী সার্বক্ষণিক শহর প্রতিরক্ষা বাঁধের তদারকি করছেন।
মৌলভীবাজার-৩ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দা সায়রা মহসীন মনু নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ পরিদর্শন শেষে জানান, হঠাৎ করে উজান থেকে পানি এসে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। মনু নদীর শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ রক্ষায় সেনাবাহিনীর পাশাপাশি সর্বস্তরের মানুষকে এগিয়ে আসার আহবান করেন।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী জানান, এ পর্যন্ত ২২টি স্থানে ভাঙ্গন দিয়েছে। ভারতের উত্তর ত্রিপুরায় প্রচুর বৃষ্টি পাত হওয়াতে বন্যা হয়। আজ উজানে অর্থাৎ ভারতে বৃষ্টি না হওয়ায় মনু ও ধলাই নদী উজানে পানি বৃদ্ধি কমেছে। তবে শহরের কাছে মনু নদীর পানি বিপদ সীমার ১৮০ সেঃ মিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পুনরায় উজানে বৃষ্টি না হলে মনু ও ধলাই নদীর পানি কমে আসবে। তবে আবারও বৃষ্টি হলে মনু নদীর শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ উপচিয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করে শহর তলিয়ে যেতে পারে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

সর্বশেষ সংবাদ