সিলেট ২৯শে মার্চ, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৫ই চৈত্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ |
প্রকাশিত: ১২:৫৬ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১৬, ২০১৯
ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার বিষয়ে সব জানতেন সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন। এমনকি রাফির গায়ে আগুন দিয়ে নিরাপদ দূরত্বে পালানোর পর খুনি শাহাদাত হোসেন শামীম প্রথম ফোন করে রুহুল আমিনকে।
রোববার ফেনীর আদালতে এ দুই আসামি রাফি হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এদিন বেলা ৩টা থেকে দীর্ঘ ৯ ঘণ্টা ফেনী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইন তাদের দু’জনের জবানবন্দি রেকর্ড করেন।
সে সোমবার বিকালে টেলিফোনে গণমাধ্যমে বলে, ‘সবই ভিত্তিহীন। তারা হয়তো আমার প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে নাম বলেছে। আমি তাদের অধ্যক্ষকে (সিরাজ উদ্দৌলা) জেলে পাঠিয়েছিলাম। এ কারণেই হয়তো তারা আমার নাম বলেছে।’
এছাড়া ওই দুইজনের জবানবন্দিতে উঠে এসেছে, কিলিং মিশনে অংশ নিয়েছে পাঁচজন। তারা হল- শাহাদাত হোসেন, জোবায়ের আহম্মেদ, জাবেদ হোসেন, অধ্যক্ষ (বহিষ্কৃত) সিরাজ উদ্দৌলার দূর সম্পর্কের ভাগনি উম্মে সুলতানা পপি ও তার বান্ধবি কামুরন্নাহার মণি। রাফিকে শেল্টার হাউসের ছাদে কৌশলে ডেকে আনে পপি। সে (পপি) নিজেকে ঘটনার সময় শম্পা বলে পরিচয় দিয়েছিল।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, রাফির গায়ে আগুন ধরিয়ে হত্যার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত অন্তত ১৯ জনের নাম এসেছে। দুই আসামির জবানবন্দিতেও অনেকের নাম এসেছে। তাদের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন, সদ্য প্রত্যাহার হওয়া ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন ছাড়াও মাদ্রাসার কয়েকজন শিক্ষক রয়েছেন। এছাড়া আছে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার বেশ ক’জন আলিম ও ফাজিল শিক্ষার্থী।
এর আগে শম্পা সন্দেহে তাকে আটক করা হয়েছিল। তদন্তে পিবিআই নিশ্চিত হয়েছে, রাফি যে শম্পার কথা বলেছিল, পপিই প্রকৃতপক্ষে শম্পা। মামলার এজাহারভুক্ত আরেক আসামি কাউন্সিলর মাকসুদ আলমকে সোমবার ৫ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি পেয়েছে পিবিআই।
তদন্তের বিষয়ে পিবিআই’র প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার যুগান্তরকে বলেন, প্রথমে আমরা ১৩ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছি। পরে আমরা আরও দু’জনের সংশ্লিষ্টতা পাই। এখন পর্যন্ত আমরা ১৯ জনের সম্পৃক্ততা পেয়েছি। যাদের নাম আসছে, তাদের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। তদন্তে আরও কারও কারও সম্পৃক্ততা থাকতে পারে।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে নুরুদ্দিন জানিয়েছে, ৪ এপ্রিল সে (নুরুদ্দিন), শাহাদাত হোসেন শামীম, জাবেদ হোসেন, হাফেজ আবদুল কাদেরসহ আরও কয়েকজন ফেনী কারাগারে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার সঙ্গে দেখা করে। সেখানে তারা অধ্যক্ষকে বলে, ‘রাফি আপনাকে (সিরাজ) জেলে পাঠিয়ে আলেম সমাজকে চরমভাবে হেয় করেছে। এ কারণে রাফিকে কঠিন শিক্ষা দিতে হবে। রাফিকে কঠিন শিক্ষা দিতে তারা সিরাজের কাছে ‘হুকুম’ চায়। ওই সময় রাফিকে পুড়িয়ে মারার প্রস্তাব দেয় শাহাদাত। এ প্রস্তাবকে সিরাজ উদ্দৌলা সমর্থন করে। তখন সিরাজ উদ্দৌলা বলে, ‘কর, তোমরা কিছু একটা কর’। এ সময় সিরাজ উদ্দৌলা তাদের বেশকিছু গোপন টিপসও দেয়।
রাাফির প্রতি ক্ষোভের কথা জানিয়ে শাহাদাত হোসেন জবানবন্দিতে বলেছে, দেড় মাস আগে সে রাফিকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল। রাফি তা প্রত্যাখ্যাত করে তাকে অপমান করে। এ কারণে রাফির প্রতি তার ক্ষোভ ছিল। সিরাজের সঙ্গে ঝামেলা শুরু হওয়ার পর সে এটিকে সুযোগ হিসেবে নেয়। সে রাফিকে শিক্ষা দিতে সিরাজের দলে যোগ দেয়।
এর আগে ২৭ মার্চ ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়নের অভিযোগে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই ঘটনার পর থেকে সে কারাগারে আছে। যৌন নিপীড়নের ঘটনায় রাফির মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। ওই মামলা তুলে নিতে অস্বীকৃতি জানানোয় রাফির গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়।
সে ৭০ টাকা দিয়ে এক লিটার কেরোসিন কেনে। সে দোকানদারকে পলিথিনে কেরোসিন দিতে বললে দোকানদার তাকে সন্দেহ করে। তখন শাহাদাত বলে, লাকড়িতে আগুন ধরানোর জন্য কেরোসিন লাগবে। পরে তাকে কেরোসিন দেন দোকানদার। পরিকল্পনা অনুযায়ী তিনজন পুরুষের জন্য তিনটি বোরকা দরকার ছিল। পপির বান্ধবী কামরুন্নাহার মণিকে দুই হাজার টাকা দেয়া হয় বোরকা কেনার জন্য।
জবানবন্দিতে শাহাদাত হোসেন শামীম জানায়, এ ঘটনার সময় নুরুদ্দিন ও হাফেজ আবদুল কাদেরসহ আরও পাঁচজন গেটে পাহারায় ছিল। নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়ার পর শামীম দৌড়ে নিচে নেমে উত্তর দিকের প্রাচীর টপকে বের হয়ে যায়। বাইরে গিয়ে সে সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিনকে ফোনে বিষয়টি জানায়। রুহুল আমিন বলে, আমি জানি। তোমরা চলে যাও।
সিরাজকে কারাগার থেকে বের করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন সভাপতি : জবানবন্দিতে শাহাদাত হোসেন শামীম বলেছে, ২৭ মার্চ রাফিকে যৌন হয়রানি করার অভিযোগে তার মা শিরিন আক্তারের করা মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজ গ্রেফতার হয়। আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহুল আমিন তাকে মুক্ত করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। এমনকি থানা ম্যানেজ করার দায়িত্বও নিয়েছিলেন। এ জন্য রুহুল আমিন অধ্যক্ষের পরিবারের কাছ থেকে টাকাও নিয়েছিলেন।
এদিকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলাকে যৌন হয়রানির অভিযোগ থেকে বাঁচাতে সব ধরনের প্রচেষ্টা ছিল তৎকালীন সোনাগাজী থানার ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের। এমনকি আইনবহির্ভূতভাবে রাফিকে জেরা করে সেটি ওসি মোয়াজ্জেম প্রচার করেন। এমনকি রাফির গায়ে দুর্বৃত্তরা আগুন দিলে তিনি এটিকে আত্মহত্যার চেষ্টা বলে প্রচার চালান।
কাউন্সিলর মাকসুদ পাঁচ দিনের রিমান্ডে : ফেনী ও সোনাগাজী প্রতিনিধি জানান, রাফির গায়ে কেরোসিন ঢেলে হত্যা মামলার অন্যতম আসামি মাকসুদ আলমকে ৫ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। ফেনী জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সরাফ উদ্দিন আহম্মেদ এ আদেশ দেন।
আত্মগোপনে স্ত্রী-সন্তানরা : ফেনী ও সোনাগাজী প্রতিনিধি আরও জানান, রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা মামলার আসামি অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ১৮ লাখ টাকা তুলে স্ত্রী ফেরদৌস আক্তার পরিবার-পরিজন নিয়ে আত্মগোপনে রয়েছে। বর্তমানে ফেরদৌস আক্তার কোথায় আছে তা জানেন না আত্মীয়স্বজন কেউই।
তবে এসব টাকার কিছু অধ্যক্ষ সিরাজের মুক্তির আন্দোলন ও রাফিকে পুড়িয়ে হত্যা করতে খুনিদের পেছনে ব্যয় করা হয়েছে বলে জানা গেছে। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে স্থানীয় একাধিক সূত্র।
সম্পাদক : কবীর আহমদ সোহেল
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ আব্দুল হক
ঢাকা অফিস : ২৩৪/৪ উত্তর গোড়ান, খিলগাঁও, ঢাকা ।
সম্পাদক কর্তৃক প্রগতি প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিঃ, ১৪৯ আরামবাগ, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।
সিলেট অফিস: ২৩০ সুরমা টাওয়ার (৩য় তলা)
ভিআইপি রোড, তালতলা, সিলেট।
মোবাইল-০১৭১২-৫৯৩৬৫৩, ০১৭১২-০৩৩৭১৫
E-mail: provatbela@gmail.com,
কপিরাইট : দৈনিক প্রভাতবেলা.কম
আমাদের সর্ম্পকে গোপনীয়তা যোগাযোগ
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি