আদালতে অমানবিকতা : চাই একটি মানবিক বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২০

আদালতে অমানবিকতা : চাই একটি মানবিক বাংলাদেশ

পৃথিবীতে মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল আদালত। এখানেই মানুষ তার অধিকার প্রাপ্তির প্রত্যাশা করে। ন্যায় বিচার আশা করে। ইনসাফ চায়। জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শংকামুক্ত থাকতে চায়।মানুষ হিসেবে স্বাভাবিক আচরণের দাবী রাখে। অপরাধী হোক বা না হোক একজন মানুষ হিসেবে নূন্যতম এই দাবী বা প্রত্যাশাটুকু খুবই ন্যায্য ও যুক্তিসঙ্গত এটা বিবেকবান যে কেউ মনে করেন।

 

বাংলাদেশ। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি, জন্মভূমি। এদেশে আইন রয়েছে। রয়েছে আদালত। দেশের নাগরিক হিসেবে আইনের আশ্রয় যে কেউ নিতে পারে। নিজের অধিকার আদায়ে কিংবা অন্যায়ের স্বীকার নাগরিকরাই আইনের আশ্রয় নেন। আদালতের শরনাপন্ন হন।

 

সাম্প্রতিককালে সরকারও আইন আদালতের আশ্রয় নিচ্ছে। অন্যকথায় আইন আদালত প্রয়োগ করছে। সরকার নিজস্ব কার্যক্রম গতিশীল রাখতে প্রয়োজনে আইনের প্রয়োগ করতেই পারে। সরকার বিরোধী কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করতে আইনের প্রয়োগ বা আদালতের আশ্রয় নিতেই পারে। নাগরিকের যেমন আইন অধিকার রয়েছে সরকারেরও রয়েছে তেমন। সরকার যদি হীন উদ্যেশ্যে রাজনৈতিক হীন স্বার্থে আইন – আদালতের প্রয়োগ করে তবেই প্রশ্ন দেখা দেয়। বাংলাদেশ সরকার আইন-আদালত রাজনৈতিক উদ্যেশ্যে ব্যবহার করছে এমন অভিযোগ বিরোধীমতের লোকের। বুদ্ধিজীবী ও সচেতন মহল এবং বিরোধী রাজনৈতিক মহলও এমনটা মনে করেন। বিষয়টি বিস্তর আলোচনার দাবী রাখে।

 

আমি সেদিকে যাচ্ছিনা। সরকার কিংবা নাগরিক যে-ই আইন আদালতের সরনাপন্ন হোন না কেন আদালতে তার অধিকার হরণ মেনে নেয়া যায়না। অথচ সিলেটসহ দেশের প্রতিটি আদালতের প্রতিটি ধাপে, প্রতিটি পদে নাগরিক অধিকার হরণের স্বীকার হয় বিচার প্রার্থীরা। কারাহাজত, আদালত হাজত বা পুলিশ হেফাজতে থাকা ব্যক্তি এবং তার স্বজন পরিজন আদালত অঙ্গনকে ভোগান্তির স্থান বলে মনে করেন। ‘কোর্ট বারান্দা’র যন্ত্রণা বলে লোকমুখে নাগরিক অধিকার হরণের কথাটির প্রকাশ আছে বহুকাল থেকেই। কালের পরিবর্তনে তা বাড়ছে বৈ কমেনি।

আরও পড়ুন  বর্ণচোররাও মিথ্যাবাদী

 

আইন-শৃংখলা বাহিনীর হাতে আটক বা গ্রেফতারকৃত ব্যক্তির প্রথম অবস্থান হয় থানা হাজত বা সংশ্লিষ্ট বাহিনীর দপ্তর। প্রথম ভোগান্তি শুরু হয় এখান থেকেই। ‘ম্যানেজ’ শব্দটি এই অঙ্গনে খুবই পরিচিত। ঐখানে ‘ম্যানেজ’ করে নিতে পারলে প্রাথমিক দখল সামলে নেয়া যায়। এক্ষেত্রে বিত্ত ও প্রভাবশালীরা সফল হলেও দরিদ্র শ্রেণীর মানুষ দুর্ভোগের স্বীকার হন ।

 

আটক বা গ্রেফতার কিংবা কারাহাজতে থাকা ব্যক্তির ভোগান্তির আরেক স্থান আদালত। এখানে নাগরিক অধিকার বলতে কিছু নেই। আদালতে হাজতখানা বলে যে স্থান আছে তা মনুষ্য প্রজাতির অবস্থানের জন্য বড়ই বেমানান। ৫০ জনের জায়গায় অবস্থান করতে হয় ১শ’ দেড়শো জনকে। বদ্ধ, আলো বাতাসহীন এ কক্ষেই ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয় বিচারপ্রার্থীকে। হাজতখানায় অবস্থানকারী সুত্রে জানা যায়, এখানকার টয়লেটগুলোর অবস্থা খুবই নোংরা দুর্গন্ধময়। ব্যবহার অনুপোযোগী। বিচারপ্রার্থী তার প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারবার সুযোগ সুবিধা পাবে-এটা তার নাগরিক অধিকার। আমরা এ অধিকার নিশ্চিতের আহবান জানাই।

 

হাজতখানায় স্বজন পরিজন তথা দর্শনার্থীদের ভীড়- ভোগান্তি গোটা পরিবেশকে বিপর্যস্ত করে তোলে। এখানেও ‘ম্যানেজ’ ব্যবস্থা। যার টাকা-ক্ষমতা আছে তার সুযোগ আছে। যার নেই সে হয়রানি বঞ্চনার স্বীকার। তা হতে পারেনা। আমরা হাজতখানায় স্বাস্থ্য সম্মত পরিবেশসহ সকল ব্যবস্থার নিশ্চয়তার দাবী জানাই। হাজতখানায় থাকা লোকদের সাথে তার পরিবার স্বজন পরিজনদের সাক্ষাতের যে বিধান আছে তা সুষ্টুভাবে কার্যকর করার দাবীও আমাদের।

আরও পড়ুন  জঙ্গি আস্তানা, আইনশৃংখলা বাহিনী ও মিডিয়ার ভূমিকা

 

‘হ্যান্ডকাফ’ পরিয়ে আসামীদের যেভাবে আনা নেয়া করা হয় তা অমানবিক। বিচারাধীন ব্যক্তি তো অপরাধী হিসেবে আদালত কর্তৃক স্বীকৃত হয়নি। সুতরাং তার মান-ইজ্জতের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করাই হবে আদালতের নৈতিকতা। একই কথা প্রযোজ্য প্রিজন ভ্যানের ক্ষেত্রে। কারাগার থেকে আসামীদের আনা নেয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তার প্রয়োজন রয়েছে। ঠিক তেমনি প্রয়োজন রয়েছে প্রিজন ভ্যানে আসামীদের বসবার ব্যবস্থা থাকা। তখন আসন অনুপাতে আসামী আনা নেয়া করার সুযোগ থাকবে। বর্তমান ব্যবস্থায় পশুপাখির মত আসামীদের গাড়ীতে উঠিয়ে আনা নেয়া করা হয়। যা সুস্থ বিবেকের অন্তরায়। এটা রাষ্ট্রের জন্য কোন কল্যাণ বয়ে আনেনা। আদালত পাড়ায় আরো বহুক্ষেত্রে বহুবিষয়ে নাগরিক অধিকার ভুলুন্ঠিত হয়। কেউ কোন কিছুর তোয়াক্কা করেন না।

 

আমরা এ অবস্থার উত্তরণ চাই। চাই রাস্ট্রের সবখানে নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তা। আমরা মনে করি, সব আসামীই অপরাধী না। আর অপরাধী মানে অমানুষ না। অপরাধ তো মানুষই করে। অন্তত মানুষের আচরণ প্রাপ্তি তার পাওনা। সেটা থানা হাজত, কোর্ট হাজত, জেল হাজত সবখানে সব সময়।

 

আমরা চাই একটি মানবিক বাংলাদেশ।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

সর্বশেষ সংবাদ