অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ রয়েছেন বলে মনে করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তাদের দাবি, উপদেষ্টাদের মধ্যে যাঁরা ‘সফট আওয়ামী লীগার’ বা ফ্যাসিস্ট দলের প্রতি সহানুভূতিশীল, অবিলম্বে তাঁদের সরিয়ে দিতে হবে। ছাত্র-জনতার অংশীদারত্বের বাইরে গিয়ে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে সেটি মেনে নেবে না বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
‘ছাত্র-জনতার অংশীদারত্ববিহীন সিদ্ধান্তে উপদেষ্টা নিয়োগের’ প্রতিবাদে সোমবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। কাছাকাছি সময়ে প্রায় একই বিষয়ে একই জায়গায় ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ’ ব্যানারে মানববন্ধনের পৃথক কর্মসূচি ছিল। পরে দুটি কর্মসূচি যৌথভাবে পালন করা হয়।
ফ্যাসিবাদের ‘দোসরদের’ উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের প্রতিবাদে ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী ও যশোরে সোমবার বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল হয়েছে।
ঢাকার বিক্ষোভ সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, শিক্ষার্থীরা যখন আওয়ামী দোসরদের তাড়াতে ব্যস্ত, ঠিক তখন খবর আসে, নতুন করে উপদেষ্টা নিয়োগ (রোববার সন্ধ্যায়) দেওয়া হচ্ছে। যাঁরা ধানমন্ডি ৩২-কে ‘কাফেলা’ মনে করেন, তাঁদের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থী, শ্রমিক ও সাধারণ মানুষের রক্তকে পুঁজি করে যদি কেউ ভেবে থাকেন তাঁরা উপদেষ্টা হবেন, পদ বাগিয়ে নেবেন, তাহলে তাঁরা ভুল ভাবছেন। কাদের ‘প্রেসক্রিপশনে’ আওয়ামী দোসরদের পুনর্বাসন হচ্ছে, সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।
আহ্বায়ক বলেন, ‘আপনারা বিপদে পড়বেন, আওয়ামী পুনর্বাসন হবে আর আপনারা বললে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসবে, এটি আর বেশি দিন থাকবে না। ফ্যাসিবাদের যারা দোসর, ফ্যাসিবাদের সঙ্গে যাদের দূরতম সম্পর্ক আছে, গত ১৬ বছর ফ্যাসিবাদের নুন খেয়ে যারা গুণ গেয়েছে, ’২৪-পরবর্তী বাংলাদেশে কোনো ফরম্যাটেই আমরা তাদের পুনর্বাসন দেখতে চাই না। উপদেষ্টাদের স্পষ্ট করতে হবে, যাঁদের আপনারা নিয়োগ দিচ্ছেন, গত ১৬ বছরে তাঁদের অবদান কী।’
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আপনারা যদি মনে করে থাকেন আমাদের কণ্ঠরোধ বা প্রতিরোধ করবেন, ক্ষমতাকে প্রশস্ত করার জন্য বাধা মনে করলে আমাদের মাইনাস করে দেবেন, তাহলে আপনারা ভুল ভাবছেন। খুনি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনাকে আমরা উৎখাত করেছি তার লিগ্যাসি মেইনটেইন করার জন্য নয়।…ছাত্র-নাগরিকের অংশীদারত্বের বাইরে গিয়ে আপনারা যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেন, তা মেনে নেওয়া হবে না এবং অতীতে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেগুলোর আমরা রিভিশন (পুনর্বিবেচনা) চাই। আমরা বিশ্বাস করতে চাই, ছাত্র উপদেষ্টারা আমাদের হতাশ করবে না।’
বিক্ষোভ সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব আরিফ সোহেল বলেন, ‘আমাদের কাউকে বিন্দুমাত্র অবহিত না করে উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়া হলো।…এভাবে চলতে থাকলে নতুন আরেকটি সরকার তৈরি করতে আমাদের বিন্দুমাত্র সময় লাগবে না।’
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন যে গণ-অভ্যুত্থানে হয়, তার নেতৃত্বে ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।