সিলেট ১৭ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |
প্রকাশিত: ২:৫৬ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৩, ২০২০
প্রভাতবেলা প্রতিবেদক♦ আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী চলে গেলেন প্রভূর ডাকে। বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী এই ইসলামী ব্যক্তিত্বের ইন্তেকালে শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশের কওমী অঙ্গনে। শোকাতুর ইসলাম দরদী, আলেম উলামা প্রিয় জনতা। ইন্তেকালের সময় তার বয়স ছিল ৭৫ বছর।
হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ রোববার(১৩ নভেম্বর) দুপুর ১টায় ইন্তেকাল করেন । ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
নূর হোসাইন কাসেমীর ছেলে জাবের হোসেন কাসেমী প্রভাতবেলা’কে এ তথ্য জানিয়েছেন।
গত ১ ডিসেম্বর শ্বাসকষ্টজনিত অসুস্থতার কারণে আল্লামা কাসেমীকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গত বৃহস্পতিবার রাতে হঠাৎ শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাৎক্ষণিক তাঁকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। নূর হোসাইন কাসেমীর ঠান্ডা ও শ্বাসকষ্ট থাকলেও কয়েক দফা করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ ফলাফল আসে বলে জানিয়েছিলেন তাঁর প্রেস সেক্রেটারি মুনির আহমেদ।
নূর হোসাইন কাসেমী হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠার পর থেকে সংগঠনটির ঢাকা মহানগর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন। সংগঠনের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী (রহ.)-এর মৃত্যুর পর গত ১৫ নভেম্বর নতুন করে কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে আল্লামা বাবুনগরীকে আমির ও নূর হোসাইন কাসেমীকে মহাসচিব নির্বাচিত করা হয়।
নূর হোসাইন কাসেমী ১৯৪৫ সালের ১০ জানুয়ারি কুমিল্লা জেলার মনোহরগঞ্জ থানার চড্ডা নামক গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।
পারিবারিক জীবনে কাসেমী ২ ছেলে যুবায়ের হুসাইন ও জাবের কাসেমী এবং দুই মেয়ের জনক। তার ছোট ছেলে জাবের কাসেমী একজন ইসলামি পণ্ডিত ও জামিয়া মাহমুদিয়া ইসহাকিয়া মাদ্রাসা, মানিকনগরের অধ্যাপক।
আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমী ছিলেন একজন বাংলাদেশি দেওবন্দি ইসলামি পণ্ডিত, রাজনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, ধর্মীয় বক্তা ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব। তিনি একাধারে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব, আল হাইআতুল উলয়ার সহ-সভাপতি, বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা, ঢাকা ও জামিয়া সোবহানিয়া মাহমুদ নগরের শায়খুল হাদিস ও মহাপরিচালক ছিলেন। হেফাজত আন্দোলন, খতমে নবুয়ত আন্দোলনসহ প্রভৃতি আন্দোলনে তিনি নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালন করেছেন এবং ইসলামি নেতা হিসেবে মুসলিম জনসাধারণের মাঝে তার ব্যাপক পরিচিতি ছিল। এছাড়াও তিনি প্রায় ৪৫টি মাদ্রাসা পরিচালনার কাজে যুক্ত ছিলেন।
বাড়ির পার্শ্ববর্তী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির মাধ্যমে তার শিক্ষাজীবনের সূচনা হয়। এখানে চতুর্থ শ্রেনী শেষ করে চড্ডার কাশিপুর কাশেমুল উলুম মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে মাধ্যমিক শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। এরপর ভর্তি হন বরুডার আল জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসায়। এখানে হেদায়া জামাত (স্নাতক ২য় বর্ষ) পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন।
এরপর তিনি দারুল উলুম দেওবন্দে পড়ার উদ্দেশ্যে ভারতে যান। নির্ধারিত সময়ে পৌঁছাতে না পেরে ভর্তি হন ভারতের সাহারানপুর জেলার বেড়ীতাজপুর মাদ্রাসায়। এখানে জামাতে জালালাইন (স্নাতক) সমাপ্তির পর দারুল উলুম দেওবন্দে চলে যান। দেওবন্দ মাদ্রাসায় তার অধ্যয়নকাল মোট ৩ বছর। এখানে দাওরায়ে হাদীস (মাস্টার্স) সমাপ্তির পর আরবি সাহিত্য ও দর্শনে উচ্চশিক্ষা লাভ করেছেন।
ভারতের মুরাদিয়া মাদ্রাসায় অধ্যাপনাকালে তিনি মুহাম্মদ জাকারিয়া কান্ধলভির কাছে বাইআত গ্রহণ করেন। তার মৃত্যুর পর তিনি মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহীর নিকট বায়’আত হন এবং খেলাফত লাভ করেন। কাসেমীর খলিফা মোট ৩ জন। মাসউদুল করীম (গাজীপুর), বশির আহমদ (সৈয়দপুর) ও মুহাম্মদ ইছহাক (মানিকনগর)।
তার শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছে: মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহী, আনজার শাহ কাশ্মীরি, ফখরুদ্দীন আহমদ মুরাদাবাদী, মুহাম্মদ সালেম কাসেমি, তাফাজ্জুল হক হবিগঞ্জী সহ প্রমুখ খ্যাতিমান ব্যক্তি।
ভারতের মজঃফরনগর জেলায় অবস্থিত মুহাম্মদ কাসেম নানুতুবি কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মুরাদিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকতার মাধ্যমে তার কর্মজীবনের সূচনা হয়। এখানে ১ বছর শিক্ষকতার পর ১৯৭৩ সালের শেষ দিকে তিনি দেশে প্রত্যাবর্তন করেন। এরপর শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া থানার নন্দনসার মুহিউস সুন্নাহ মাদ্রাসায় শায়খুল হাদিস ও মুহতামিম পদে যোগদান করেন। ১৯৭৮ সালে তিনি ঢাকার জামিয়া আরাবিয়া ইমদাদুল উলূম ফরিদাবাদ মাদ্রাসায় চলে যান। এখানে তিনি ৪ বছর শিক্ষকতা করেছেন এবং ছাত্রাবাস পরিচালক ছিলেন। ১৯৮২ সালে তিনি কাজী মুতাসিম বিল্লাহ প্রতিষ্ঠিত জামিয়া শারইয়্যাহ মালিবাগে চলে আসেন। এখানে তার অধ্যাপনাকাল মোট ৬ বছর।
এরপর ১৯৮৮ সালে তিনি জামিয়া মাদানিয়া বারিধারা, ঢাকা এবং ১৯৯৮ সালে জামিয়া সোবহানিয়া মাহমুদ নগর প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠানের শায়খুল হাদীস ও মহাপরিচালক ছিলেন। এছাড়াও তিনি প্রায় ৪৫টি মাদ্রাসা পরিচালনার কাজে যুক্ত ছিলেন।
২০২০ সালের ৩ অক্টোবর তিনি বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। আইন অনুসারে একই সাথে তিনি আল হাইআতুল উলয়ার সহ-সভাপতি ছিলেন।
২০২০ সালের ১৫ নভেম্বর তিনি অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব নির্বাচিত হন। এর পূর্বে তিনি হেফাজতের ঢাকা জেলার সভাপতি ছিলেন।
১৯৯০ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তিনি খতমে নবুয়ত আন্দোলনের সাথে যুক্ত ছিলেন এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
১৯৭৫ সালে তিনি জমিয়ত উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের রাজনীতিতে যুক্ত হন। ১৯৯০ সালে তিনি জমিয়তের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে চলে আসেন এবং ৭ নভেম্বর ২০১৫ সালে তিনি এর মহাসচিবের দায়িত্ব লাভ করেন।
ভারতের হিন্দুত্ববাদের সমালোচনা : ২০২০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ভারতের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলায় অভিযুক্ত সব আসামিকে বেকসুর খালাস দেয় ভারতের বিশেষ আদালত। এর পরিপ্রেক্ষিতে কাসেমী বলেন, ‘ভারতীয় আদালত উগ্র হিন্দুত্ববাদের পক্ষ নিয়ে সত্য, ন্যায়-ইনসাফ ও বাস্তবতার সঙ্গে শুধু তামাশাই করেনি, বরং মুসলমানদের বিরুদ্ধে হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসনকে বৈধতা দিতে শুরু করেছে। এই রায়ে ভারতের বিচার ব্যবস্থা ভেঙে পড়াই কেবল প্রমাণ করে না; বরং দেশটির বিচার বিভাগের ওপরও যে হিন্দুত্ববাদিরা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে নিয়েছে সেটাও স্পষ্ট হয়েছে।’
সম্পাদক : কবীর আহমদ সোহেল
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ আব্দুল হক
ঢাকা অফিস : ২৩৪/৪ উত্তর গোড়ান, খিলগাঁও, ঢাকা ।
সম্পাদক কর্তৃক প্রগতি প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিঃ, ১৪৯ আরামবাগ, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।
সিলেট অফিস: ২৩০ সুরমা টাওয়ার (৩য় তলা)
ভিআইপি রোড, তালতলা, সিলেট।
মোবাইল-০১৭১২-৫৯৩৬৫৩, ০১৭১২-০৩৩৭১৫
E-mail: provatbela@gmail.com,
কপিরাইট : দৈনিক প্রভাতবেলা.কম
আমাদের সর্ম্পকে গোপনীয়তা যোগাযোগ
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি