সিলেট ২১শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ |
প্রকাশিত: ৪:০৪ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৬, ২০২১
কক্সবাজার সেন্টমার্টিনে পর্যটকের জোয়ার || পদে পদে হয়রানি।
জাহাঙ্গীর আলম,চট্টগ্রাম♦ দেশের পর্যটন রাজধানীখ্যাত কক্সবাজার ও প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন এখন পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড়। শনিবার পর্যন্ত প্রায় ৫ লক্ষাধিক পর্যটকের অবস্থান এই পর্যটন এলাকায়। বড়দিন ও থার্টিফাস্টকে কেন্দ্র করে পর্যটকের জোয়ার নেমেছে। তিল ধারনের ঠাই নেই কোথাও। তবে পর্যটকদের এ আগমনকে পুঁজি করে সেবার বদলে প্রবালদ্বীপ সেন্টমার্টিন ও পর্যটন নগরী কক্সবাজারের হোটেল মোটেল মালিকরা নেমেছে গলাকাটা ব্যবসায়।
হোটেল ভাড়া থেকে খাবারের মূল্য সবখানেই নেয়া হচ্ছে গলাকাটা দাম। টমটম সহ স্থানীয় পরিবহনেও ভাড়া নেয়া হচ্ছে ইচ্ছামাফিক। পর্যটকদের করা হচ্ছে পদে পদে হয়রানি। এর পাশাপাশি এক শ্রেনীর বখাটে সন্ত্রাসী টার্গেট করে পর্যটকদের যৌন হয়রানি ও ধর্ষনের ঘটনা ঘটানোয় নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছে পর্যটকরা। এসব দুর্ভোগ দেখার যেন কেউ নেই।
তবে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসন ও ট্যুরিষ্ট পুলিশ পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার পাশাপাশি হয়রানি রোধে তৎপর রয়েছে। জেলা প্রশাসন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে নামিয়েছে। খাবারের অতিরিক্ত দাম ও অতিরিক্ত কক্ষ ভাড়া আদায়ের প্রমাণ পেলে হোটেল–মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জেলা প্রশাসন হুশিয়ারী দিয়েছে। পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ নানা ব্যবস্থা নিয়েছে। সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে সাদা পোশাকেও ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্যরা তৎপর রয়েছেন। তাদের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরাও নজরদারি করছেন।
করোনার কারণে পর্যটন কেন্দ্রগুলো বন্ধ থাকায় কয়েক মাস কক্সবাজার ভ্রমনে আসতে পারেনি মানুষ। এ সপ্তাহে বছরের শেষ, বড় দিনের ছুটি সহ বাচ্চাদের পরীক্ষা শেষ হওয়াতে কক্সবাজারে ৪-৫ লাখ পর্যটক এসেছেন বলে জানায় ব্যবসায়ীরা। কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার রায়হান কাজেমী প্রভাতবেলাকে বলেন, শুক্রবার থেকে শনিবার বিকেল পর্যন্ত দুই দিনে প্রায় তিন লাখ পর্যটক সৈকতে নামেন।
বিপুলসংখ্যক পর্যটককে সামাল দিতে ১২৩ জন ট্যুরিস্ট পুলিশ নিয়োজিত আছে। এ সময় ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া ২০ শিশুকে উদ্ধার করে স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছেন ট্যুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা। কয়েকজন ছিনতাইকারীকেও আটক করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে সব হয়রানি ও দুর্ভোগকে সাঙ্গ করে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসা পর্যটকরা যে যার মতো করে উপভোগ করছেন পর্যটন নগরীতে বেড়ানোর আনন্দ।
অনেকে মোবাইল ফোনে আনন্দের এ মুহূর্তকে ফ্রেমবন্দি করছেন। অনেকেই সাগরজলে ঢেউয়ের তালে তাল মেলাচ্ছেন। শিশুদেরও দেখা গেছে বাবা-মায়ের সঙ্গে জলকেলিতে। একদিনের সফরে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দিলারা খাতুন এসেছেন কক্সবাজার। সুগন্ধা পয়েন্টের একটি কটেজের দুটি কক্ষ ভাড়া নেন তিনি। তার থেকে দুই কক্ষের ফ্ল্যাটের ভাড়া নেয়া হয় ১৬ হাজার টাকা।
বেশিরভাগ হোটেল-মোটেল ফাঁকা না থাকায় বাধ্য হয়ে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে কক্ষ ভাড়া নিতে বাধ্য হন দিলারা খাতুন। তিনি বলেন এ দুই কক্ষের ভাড়া কোন অবস্থাতেই ৫ হাজার টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়।
এইকইভাবে চট্টগ্রামের ফতেয়াবাদ থেকে প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে অনেক আগ্রহ নিয়ে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত ব্রিটিশ নাগরিক তৌহিদুল আজম সাহেদ। তিনি বলেন। শখ করে লন্ডন থেকেই পরিকল্পনা করে পরিবার পরিজন নিয়ে বেড়াতে আসলাম সেন্টমার্টিন। তিনি বলেন আমি হতাশ, সেন্টমার্টিনে প্রতি পদে পদে হয়রানি ছাড়া কিছুই নেই। দরজায় তালি দেয়া অপরিচ্ছন্ন তিনটি কক্ষের এক রাতের ভাড়া নেয়া হয়েছে ১৯ হাজার টাকা। অথচ এসব কক্ষের ভাড়া কোন অবস্থাতেই ১ হাজার টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। নন এসির এসব কক্ষে একটি টিভি পর্যন্ত নেই।
তিনি বলেন সামান্য দুরত্বের মধ্যেও রিক্সাভ্যানের ভাড়া নেয়া হচ্ছে আড়াই থেকে ৪শত টাকা। খাবার মুখে দেয়া না গেলেও দাম নেয়া হচ্ছে গলাকাটা। সাহেদ আরো বলেন সেন্টমার্টিনের পরিবেশ এতো নোংরা যে সেখানে আর দেখার মতো কিছু নেই। চট্টগ্রামের বেসরকারী কোম্পানির জিএম আনোয়ার হোসেন বলেন, টেকনাফ থেকে সেন্টমার্টিন যাওয়া আসা করা কেয়ারি সিন্দাবাদ, কর্ণফুলী সহ বিভিন্ন জাহাজে ধারনের ৩/৪ গুণ বেশি যাত্রী পরিবহন করা হয় । এসব জাহাজে ডেক থেকে করিডর কোথাও তিল ধারনের ঠাঁয় নেই অবস্থা। যে কোন মুহুর্তে দুর্ঘটনা ঘটলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে উল্লেখ করে তিনি জাহাজের শৃঙ্খলা ফেরানোর জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
ঢাকা থেকে আসা এডিবল অয়েল কোম্পানীর কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন গলাকাটা হোটেল ভাড়া থেকে শুরু করে সব জায়গাতেই পদে পদে শুধু দুর্ভোগের অভিজ্ঞতা ছাড়া কিচ্ছু পেলামনা সেন্ট মার্টিনে। ছবির দ্বীপের সাথে বাস্তবের কোন মিল নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন নোংরা এ দ্বীপে এসে আমার স্বপ্ন ভঙ্গ হয়েছে।
এদিকে লাখো পর্যটকের ভিড়ের কারণে খাবার হোটেলেও নেয়া হচ্ছে চড়া দাম। শুধু ডাল-ভাত খেলেই দিতে হচ্ছে ৩ থেকে ৪শ টাকা। মাছের পিস বিক্রি হচ্ছে ৪শ টাকা বা আরও বেশি দামে। মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের এহেন কান্ডে ক্ষুব্ধ পর্যটকরা। কিন্তু তদারকির কেউ নেই।
তবে এসব অভিযোগ খন্ডন করে ব্যবসায়ীরা বলছেন, অফ সিজনে হোটেল ফাঁকা পড়ে থাকায় লোকসান গুনতে হয় তাদের। তাই মৌসুমে ভাড়া কিছুটা না বাড়ালে পোষানো যায় না। হোটেল মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি ওমর সুলতান গনমাধ্যমকে বলেন, শহরের ৪৫৩টি হোটেল মোটেল কটেজে দৈনিক থাকতে পারেন ৯৭ হাজারের মতো পর্যটক। এর অতিরিক্ত পর্যটক এলে হোটেলে গাদাগাদি করে রাখতে হয়। এরপরও অনেকে কক্ষ ভাড়া না পেয়ে বিপদে পড়েন। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়। তবে তিনি অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয় অস্বীকার করেন।
এদিকে কক্সবাজারে ঢাকার এক গৃহবধু সংঘবদ্ধ ধর্ষনের শিকার হওয়াতে পরিবার নিয়ে বেড়াতে আসা পর্যটকরা নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন। পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন তৎপর থাকলেও তা পর্যটকদের আশ্বস্ত করতে পারছেনা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দূর পথ পাড়ি দিয়ে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পর্যটকেরা হয়রানির মুখে পড়লে কক্সবাজার বিমুখ হতে পারেন। পর্যটকদের হয়রানি ও যৌন নির্যাতন সহ বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে তাই প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ত্বড়িৎ হস্তক্ষেপ জরুরি বলে বিজ্ঞমহলের অভিমত।
প্রশাসন বলছে, পর্যটকদের হয়রানির বিষয়ে মাঠে কাজ করছেন তারা। অনিয়মের প্রমাণ পেলে ব্যবস্থা নেয়ার হবে, জানালেন জেলার নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট। জানতে চাইলে, ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ প্রভাতবেলাকে বলেন, সমুদ্র সৈকতসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে এই মুহূর্তে ৪-লক্ষাধিক পর্যটক অবস্থান করছেন। বিপুল সংখ্যক পর্যটকের নিরাপত্তা ও সেবা দিতে সীমিত সংখ্যক সদস্য নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
তারপরও পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ নানা ব্যবস্থা নিয়েছে। সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে সাদা পোশাকেও ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্যরা তৎপর রয়েছেন। তাদের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরাও নজরদারি করছেন। জানতে চাইলে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন প্রভাতবেলাকে বলেন, পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তার পাশাপাশি হয়রানি রোধে ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে নামানো হয়েছে। খাবারের অতিরিক্ত দাম ও অতিরিক্ত কক্ষ ভাড়া আদায়ের প্রমাণ পেলে হোটেল–মালিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জেলা প্রশাসক হুশিয়ারী উচ্চারন করেন।
সম্পাদক : কবীর আহমদ সোহেল
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ আব্দুল হক
ঢাকা অফিস : ২৩৪/৪ উত্তর গোড়ান, খিলগাঁও, ঢাকা ।
সম্পাদক কর্তৃক প্রগতি প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিঃ, ১৪৯ আরামবাগ, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।
সিলেট অফিস: ২৩০ সুরমা টাওয়ার (৩য় তলা)
ভিআইপি রোড, তালতলা, সিলেট।
মোবাইল-০১৭১২-৫৯৩৬৫৩, ০১৭১২-০৩৩৭১৫
E-mail: provatbela@gmail.com,
কপিরাইট : দৈনিক প্রভাতবেলা.কম
আমাদের সর্ম্পকে গোপনীয়তা যোগাযোগ
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি