সিলেট ২রা অক্টোবর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৭ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ |
প্রকাশিত: ৬:৪৬ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৮, ২০২৩
প্রভাতবেলা প্রতিবেদক:
বাংলাদেশের বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে সব মিলিয়ে এমন প্রায় দশ শতাংশ ক্ষেত্রে পরিবর্তন কিংবা সংশোধন আনা হতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে। সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণের যুক্তি দিয়ে নতুন আইনের নাম রাখা হচ্ছে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন, ২০২৩’।
সরকার নতুন আইনকে ‘যুগোপযোগী’ এবং ‘সুচিন্তিত’ বলে দাবি করলেও বাংলাদেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি বলছে আইনটি ‘গণতন্ত্র, মানুষের অধিকার এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে’। সাংবাদিকেরাও নতুন আইন নিয়ে ঠিক আগের মতোই শঙ্কিত। প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন ভয়েস অফ আমেরিকাকে বলেছেন, ‘‘নতুন মোড়কে পুরনো পণ্য দেওয়া হচ্ছে কি না, সেটিই আমাদের শঙ্কা। আগে দেখেছি যেসব বিষয়ে আমাদের আপত্তি, সেগুলো ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে বিস্তৃতভাবে রাখা হয়েছে। আমাদের দাবি ছিল, সাংবাদিকদের এসব আইনের বাইরে যেন রাখা হয়। নতুন আইনে কিছু পরিবর্তন আনা হলেও অনেক ধারা রাখা হয়েছে।’’
নতুন আইনের খবর সামনে আসার একদিন পর, গত ৮ আগস্ট বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গুলশানে আয়োজিত একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘‘বিএনপি মনে করে এটা (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন) নাম পরিবর্তন করে নিবর্তনমূলক আইন প্রণয়ন করার নামান্তর। তারা (সরকার) এটার নাম পরিবর্তন করে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।’’
২০ আগস্ট গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিএফইউজে বলেছে, প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইনের সঙ্গে বিদ্যমান ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। সাইবার নিরাপত্তা আইনের ২৫, ২৬, ২৮, ২৯, ৩১, ৩২, ৪০ ও ৪২ ধারা বাতিল এবং ২১, ৪৩, ৪৫ ও ৪৬ নম্বর ধারা সংশোধন করে সংবাদকর্মীদের সুরক্ষা দিতে হবে।
ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ২৮ (ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত), ২৯ (মানহানিকর তথ্য প্রকাশ, প্রচার, ইত্যাদি) ধারাগুলো বাতিলের বিষয়ে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন সময়ে আহ্বান জানালেও নতুন আইনে বাতিল হচ্ছে না। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘‘আমরা সবসময় বলেছি এগুলো বাতিল করা যাবে না। এগুলো সংশোধন করবো এবং সেটিই করা হয়েছে।’’
ধর্মীয় অনুভূতির এই ধারায় (২৮) আগে যেখানে অনধিক পাঁচ বছর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ১০ (দশ) লাখ টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডের বিধান ছিল, এখান সেখানে অনধিক ২ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। আগের আইন অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি এই ধারার অপরাধ দ্বিতীয়বার বা পুনঃপুন সংঘটন করলে, অনধিক ১০ বছর কারাদণ্ড, বা অনধিক ২০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতেন। নতুন আইনে দ্বিতীয়বার কিংবা পুনঃপুন সংঘটনের কথা বলা নেই।
সরকারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত খসড়া আইনে দেখা গেছে, ২৯ ধারায় আগে যেখানে ৫ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান ছিল, এখন সেখানে ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের কথা বলা হয়েছে। এই ধারাতেই এতদিন সাংবাদিকেরা বেশি হয়রানির শিকার হচ্ছিলেন।
৭ আগস্ট সচিবালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে একটি কাগজ হাতে নিয়ে নতুন আইনের কয়েকটি ধারা সম্পর্কে জানান আইনমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘২৮-এ সাজা কমানো হয়েছে। এটা আগে ছিল অ-জামিন যোগ্য, এখন জামিন যোগ্য করা হয়েছে। ২৯-এ সাজা ছিল কারাদণ্ড, সেটাকে সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত করা হয়েছে।’’
কী পরিবর্তন আসছে এর নির্দিষ্ট একটি উদাহরণ দিতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘‘মানহানিকর তথ্য প্রকাশের অপরাধে কেউ যদি ক্ষতিপূরণ চায়, তাহলে আমাদের যে আইন আছে, তাতে কিন্তু ক্ষতিপূরণের লিমিট নাই। ১০০ কোটি টাকাও ক্ষতিপূরণ চাইতে পারে। সেইসব ক্যালকুলেশনে অনধিক ২৫ লাখ টাকা ধরা হয়েছে।’’
আগের আইনের ৪৩ ধারা (পরোয়ানা ব্যতিরেকে তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেপ্তার) নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়েছে। নতুন আইনে এই ধারা রাখা হয়েছে ৪২ নম্বরে। কোনো পরিবর্তন করা হয়নি।
এই ধারার বিষয়ে বিএফইউজে বলছে, ‘‘পুলিশকে যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে, তাতে রীতিমতো ত্রাস সৃষ্টির সুযোগ থাকবে। অপরাধ সংঘটনের আগেই প্রথমেই সন্দেহ থেকে পুলিশ ধরে নিয়ে যেতে পারবে এবং তল্লাশি ও জব্দের নামে সব ধরনের নিপীড়নমূলক পদক্ষেপ নিতে পারবে।
আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের সুরক্ষার কথা বললেও প্রেসক্লাবের সভাপতি সেটি মানতে নারাজ। তিনি বলছেন, ‘‘আগের আইনে সাংবাদিকদের যেভাবে হয়রানি করা হচ্ছিল, নতুন আইনেও সেই সুযোগ থাকছে।’’
নতুন আইনের কোনো ধারা নিয়ে প্রশ্ন উঠলে পরিবর্তন করা হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘‘আমার তো মনে হয় অত্যন্ত সুচিন্তিতভাবে করা (নতুন প্রস্তাব) হয়েছে। এটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন উঠবে বলে আমি মনে করি না। পরিবর্তন করার কোনো প্রয়োজন নেই।’’
এতদিন যাদের নামে আগের আইনে মামলা হয়েছে, তাদের মামলাগুলো নতুন আইনের অধীনে চলে যাবে বলেও জানান মন্ত্রী।
প্রস্তাবিত সাইবার নিরাপত্তা আইন যেন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রতিচ্ছবিতে পরিণত না হয়, সেটি নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এ বিষয়ে সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘‘আইনমন্ত্রী বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বহু ধারা সাইবার নিরাপত্তা আইনে যুক্ত হবে। আমাদের আশঙ্কার জায়গা ঠিক সেখানেই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যেসব ধারা মূলত ভিন্নমত দমন, গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধে বহুল অপব্যবহৃত হয়েছে, সেগুলো নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনে অন্তর্ভুক্ত না করার আহ্বান জানাই। নতুন সাইবার নিরাপত্তা আইনটি যেন নতুন মোড়কে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের রূপান্তর হয়ে ফিরে না আসে।অন্যথায় আইনটির নাম বদল হলেও, কার্যত তা হবে একটি কালাকানুনকে প্রতিস্থাপন করে ভিন্ন নামধারণ করা আরেকটি কালাকানুন মাত্র।’’
সম্পাদক : কবীর আহমদ সোহেল
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ আব্দুল হক
ঢাকা অফিস : ২৩৪/৪ উত্তর গোড়ান, খিলগাঁও, ঢাকা ।
সম্পাদক কর্তৃক প্রগতি প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিঃ, ১৪৯ আরামবাগ, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।
সিলেট অফিস: ২৩০ সুরমা টাওয়ার (৩য় তলা)
ভিআইপি রোড, তালতলা, সিলেট।
মোবাইল-০১৭১২-৫৯৩৬৫৩, ০১৭১২-০৩৩৭১৫
E-mail: provatbela@gmail.com,
কপিরাইট : দৈনিক প্রভাতবেলা.কম
আমাদের সর্ম্পকে গোপনীয়তা যোগাযোগ
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি