গুমের ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠন

প্রকাশিত: ১০:১৭ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৭, ২০২৪

গুমের ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠন
প্রভাতবেলা ডেস্ক: শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৬ বছরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের হাতে কত মানুষ গুম হয়েছেন তা জানতে তদন্ত কমিশন গঠন করেছে সরকার।

 

 

মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীকে সভাপতি করে গঠিত ৫ সদস্যের কমিটি গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

 

 

কমিটির সদস্যরা হলেন- হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকার কর্মী নুর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মিজ নাবিলা ইদ্রিস এবং মানবাধিকার কর্মী সাজ্জাদ হোসেন।

 

 

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ৫ আগস্ট পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থা তথা বাংলাদেশ পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি), অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), বিশেষ শাখা, গোয়েন্দা শাখা, আনসার ব্যাটালিয়ন, জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা (এনএসআই), প্রতিরক্ষা বাহিনী, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), কোস্ট গার্ডসহ দেশের আইন প্রয়োগ ও বলবৎকারী কোনো সংস্থার কোনো সংস্থার কোনো সদস্য কর্তৃক জোরপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, তাদের শনাক্ত করা এবং কোনো পরিস্থিতিতে গুম হয়েছিল তা নির্ধারণ করতে হবে।

 

 

জোরপূর্বক গুম হওয়ার ঘটনাগুলোর বিবরণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করা এবং এ বিষয়ে সুপারিশ করতে হবে। গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান পাওয়া গেলে তাদের আত্মীয়স্বজনকে জানাতে হবে। গুম হওয়ার ঘটনা সর্ম্পকে অন্যকোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরিচালিত তদন্তের তথ্য সংগ্রহ করা। তদন্ত কমিশনন আইন ১৯৫৬ অনুযায়ী তদন্তের পর তা ৪৫ কার্য দিবসের মধ্যে সরকারের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করা।

আরও পড়ুন  সিটি নির্বাচনে থাকছে না সেনাবাহিনী

 

 

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, কমিশনের সভাপতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারক এবং সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারকের মর্যাদা এবং অন্যান্য সুবিধা ভোগ করবেন।

 

 

গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের পর আলোচিত ‘আয়নাঘর’ থেকে মুক্তি পেয়েছেন বেশ কয়েকজন। তাদের জোরপূর্বক তুলে নিয়ে গুম করে কয়েক বছর ধরে আটকে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া আলোচিত বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী ও চৌধুরী আলম এক দশকেরও বেশি সময় আগে গুম হলেও এখনো তাদের সন্ধান মেলেনি।

 

 

গত ১৬ বছর গুম ও খুনের ঘটনা দেশের মানুষের মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। বিরোধী রাজনৈতিক মতাদর্শের লোকজন একের পর এক গুম-খুনের শিকার হয়েছেন। বিশেষ করে বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা সবচেয়ে বেশি গুমের শিকার হয়েছে।

 

 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বিভিন্ন সময় দাবি করেছেন, তার দলের ৬০০ জন নেতাকর্মীকে গুম করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। এ ছাড়া সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে বলেও অভিযোগ তার।

আরও পড়ুন  অস্ত্র মামলায় পাপিয়ার বিচার শুরু

 

 

বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে সাতশর বেশি মানুষ গুম হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৫০ জনের বেশি মানুষের খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি।

 

 

গুমের শিকার পরিবারগুলোর সংগঠন মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল গুমের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। বাংলাদেশ গুমের আন্তর্জাতিক সনদে যুক্ত হচ্ছে। এখন আমরা বিচার পাওয়ার আশা রাখছি। আশা করি, সরকার এখন একটি কমিশন করে সবগুলো গুমের ঘটনার বিচার নিশ্চিত করবে।

 

 

গত সপ্তাহে এক অনুষ্ঠানে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল প্রত্যেকটি গুমের ঘটনা তদন্তে কমিশন গঠন করার সিদ্ধান্তের কথা জানান। এ বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানান তিনি।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

সর্বশেষ সংবাদ