জীবনের মানে কী কেবল বেঁচে থাকা

প্রকাশিত: ১২:০৫ পূর্বাহ্ণ, মে ২৯, ২০২৪

জীবনের মানে কী কেবল বেঁচে থাকা

সম্প্রতি জাতীয় মিডিয়ায় ‘উচ্চ মূল্যস্ফীতি : খরচ কমিয়ে মানিয়ে চলছে মানুষ’ শিরেনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, দেশে চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কমে গেছে। তাই মানুষের ব্যয় ও ভোগের হারও কমেছে। ফলে গত দুই অর্থ বছরে বাংলাদেশের ভোগ প্রবৃদ্ধি কম ছিলো। মূলত উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে তথা দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির কারণে খরচ কমিয়ে কোন রকমে মানিয়ে চলছেন দেশের মানুষ। বিশেষ করে নিম্ন ও নিম্ন মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ।

বলা বাহুল্য, রিজার্ভ কমে যাওয়া ও টাকার অবমূল্যায়নের ফলে গত দুই বছর ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতি চাপের মধ্যে আছে। ফলে দেশের মূল্যস্ফীতির হার রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে। অন্যদিকে মজুরি বৃদ্ধির হার মূল্যস্ফীতির গতিতে বাড়ছে না। বরং প্রকৃত মজুরি প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক বা নেতিবাচক হয়ে পড়েছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২২-২৩ অর্থ বছরে গড় মূল্যস্ফীতি ছিলো ৯ দশমিক ২ শতাংশ, যা গত কয়েক বছরের গড় ৬ শতাংশের চেয়ে অনেক বেশি। আর ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের প্রথম ১০ মাসে ভোক্তা মূল্যসূচক প্রায় ৯ দশমিক ৫ শতাংশ বেড়েছে। আসলে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এর চেয়ে অনেক বেশি।

অনেকের মতে, খাদ্যমূল্যস্ফীতি ২৫-৩০ শতাংশের কম হবে না। এ কথা সত্য যে, সীমিত আয়ের মানুষের ব্যয় যখন আয়ের চেয়ে বেশি হয়ে যায়, তখন তারা সঞ্চয়, ভোগ, বিনোদন ও চিকিৎসার ব্যয় কমিয়ে ফেলে। আর তাদের জীবন থেকে আনন্দ বিনোদন যখন তিরোহিত হয়ে যায়, তখন তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে। চিকিৎসাসেবা গ্রহণের হার কমে দেখা দেয় নানা শারীরিক অসুস্থতা ও জটিলতা। সর্বোপরি একজন মানুষ যখন তাদের দেহের চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টিকর ও সুষম খাবার গ্রহণ করতে পারে না, তখন সে নানা রোগ-ব্যধিতে আক্রান্ত হয়। আর এটা শুধু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নয়, বরং জাতীয় জীবনে মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। এতে দেশের উৎপাদনশীলতা হ্রাস পেয়ে জাতীয় অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনিতে বাংলাদেশের সিংহভাগ মানুষ পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার খেতে পায় না, এমন অবস্থায় বর্তমান উচ্চ খাদ্য মূল্যস্ফীতি তাদের শারীরিক সমস্যা তথা পুষ্টি সমস্যা আরো প্রকট হওয়ার শঙ্কা সৃষ্টি করেছে। এতে গণস্বাস্থ্য হুমকির মুখে নিপতিত হয়েছে।

আরও পড়ুন  পুলিশী নির্যাতনে যুবক খুন : বরখাস্ত প্রত্যাহার নয়, খুনীদের গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনুন

বলা যায়, নানান পদের মাংস বিশে^র বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠির খাদ্য তালিকার অপরিহার্য অংশ। এ ব্যাপারেও কিছু দেশে মাংসের উৎপাদন ও খাদ্য হিসেবে মাংস গ্রহণের পরিমান উল্লেখযোগ্য হারে কম। গত অর্ধ শতাব্দি ধরে সারাবিশে^ মাংস খাওয়ার পরিমান খুব দ্রুত বেড়েছে। ১৯৬০ এর দশকে যত মাংস উৎপাদন করা হতো, বর্তমানে তার তুলনায় ৫ গুণ বেশি মাংস উৎপাদিত হচ্ছে। ১৯৬০ এর দশকে ৭ কোটি টন মাংস উৎপাদিত হতো, ২০১৭ সালে এর পরিমান দাঁড়ায় ৩৩ কোটি টন। বর্তমানে এর পরিমান ৪০ কোটিতে পৌঁছেছে বলে ধারণা। সারাবিশে^ যখন মাংস খাওয়ার পরিমান এভাবে বাড়ছে তখন মাংস খাওয়ায় অনেক পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। শুনলে হয়তো অনেকে আশ্চর্য্য হবেন যে, বিশে^র সবচেয়ে কম মাংস খাওয়া দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ দ্বিতীয়। এমনকি আফ্রিকার অনেক দারিদ্র্যপীড়িত দেশ ও আর্থিক ক্ষেত্রে জর্জরিত পাকিস্তানের চেয়েও পিছিয়ে আছেন বাংলাদেশীরা মাংস ভক্ষণে। এভাবে ডিম, দুধসহ সকল পুষ্টিকর খাবারের ক্ষেত্রেই একই কথা সত্য।

আরও পড়ুন  রোযার সমৃদ্ধ ইতিহাস

মূল্যস্ফীতি তথা দ্রব্যমূল্যের যাঁতাকলে পিস্ট মানুষের আহাজারি আর্তনাদে পূর্ণ এদেশের আকাশ বাতাস। এদেশের এসব মানুষ এখনো বেঁচে আছে ঠিকই, কিন্তু এটাকে সুষ্ঠু জীবনযাপন বা জীবনযাত্রা নির্বাহ বলা যায় না। কারণ শুধু বেঁচে থাকার নাম জীবন নয়।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

সর্বশেষ সংবাদ