সিলেট ১৮ই জানুয়ারি, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা মাঘ, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ |
প্রকাশিত: ১:৩৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৪, ২০২০
প্রভাতবেলা ডেস্ক:
সাভারের আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তাজরীন ফ্যাশনসে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ৮ বছর আজ। ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনায় পোশাক কারখানাটির নয়তলা ভবনের ছয়তলা ভস্মীভূত হয়ে যায়। সরাসরি আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যান ১০১ জন পোষাক শ্রমিক ও আগুন থেকে রেহাই পেতে ওপর থেকে লাফিয়ে পড়ে আরও আরও ১০ জনসহ মোট ১১৭ জনের মৃত্যু হয়।
সেই ঘটনার স্মৃতি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পিছু ছাড়েনি তেমনি আট বছরেও এখনো কোন ক্ষতিপূরণ পাননি অনেকেই। বেকার হয়ে অনেকেই মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন। এমন অভিজ্ঞতা ও অভিযোগের কথা জানান আহতরা।
সেদিনের বর্ণনায় তারা জানান, আট বছর আগে এই দিনে (২৪ নভেম্বর) তাজরীন ফ্যাশনের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের সময় ভবনে আটকা পড়েছিলেন দুজনই। আহত রবিন জানান, তিনি ওপর থেকে পড়ে আহত হয়েছেন। আর সেদিন অনেকক্ষণ ধোঁয়ার মধ্যে আটকে থাকায় তিনি এখন হৃদরোগ ও শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছেন।
তার স্ত্রী ফাতেমা জানালেন, দুর্ঘটনার পর তারা আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন। তবে তা খুবই কম। কারণ, বেঁচে থাকার তাদের চিকিৎসায় ব্যয় করতে হয়েছে সেই অর্থ। শারীরিকভাবে কাজের উপযুক্ত হওযার আগ পর্যন্ত সেই অর্থই যোগান দিয়েছে ঘর ভাড়াসহ তাদের সংসারের সব খরচ। এখন দুজন মিলে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় পরিশ্রম করে চলেছেন দিনরাত।
সেদিনের ঘটনায় স্বজন হারানোদের মধ্যে একজন জানান, তিনি তার স্ত্রীকে খুঁজেই পাননি। অনেকেরই দাবি, তারা প্রতিশ্রুতি পেলেও এই দীর্ঘ সময়ে তেমন কোন আর্থিক সহযোগিতাই পাননি।
তাজরীন ফ্যাশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আহত রবিন, সবিতা রানী ও মুক্তি বেগমরা এক মুহূর্তের জন্য ভুলতে পারেন না সেদিনের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা। অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া নারী শ্রমিক সাবিনার দেহাবশেষের ডিএনএ টেস্টের ছুঁতোয় এখনো পর্যন্ত চিহ্নিত করতে না পারার আক্ষেপ বয়ে বেড়াচ্ছেন তার স্বামী আব্দুল জব্বার।
ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ ক্ষতিপূরণের দাবি আদায়ে সরকার, বিজিএমইএ ও বিকেএমইএ-কে পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান শ্রমিক নেতারা। এ ঘটনায় দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করে বিচার ও ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহযোগিতাসহ পুনর্বাসনের দাবি জানান বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সভাপতি তুহিন চৌধুরী ও বিপ্লবী গার্মেন্ট-শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি অরবিন্দু বেপারী বিন্দু।
উল্লেখ্য, তাজরীন ফ্যাশনস কারখানাটি ২০০৯ সালে চালু হয়। কারখানাটিতে প্রায় ১ হাজার ৬৩০ জন কাজ করতেন। কারখানাটি বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের জন্য তৈরি টি-শার্ট, পোলো শার্ট এবং জ্যাকেট তৈরি করত, যাদের মধ্যে রয়েছে মার্কিন মেরিনস, ওলন্দাজ কোম্পানি সি এন্ড এ, মার্কিন কোম্পানি ওয়ালমার্ট এবং হংকংভিত্তিক কোম্পানি লি অ্যান্ড ফুং। এই কারখানাটি বাংলাদেশের অন্যতম পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান তুবা গ্রুপের অংশ ছিল যারা জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি এবং নেদারল্যান্ডসে পোশাক রপ্তানি করত। তাজরীন ফ্যাশনসের প্রধান ক্রেতা ছিল ওয়ালমার্ট, কারেফোর এবং আইকিয়া।
বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে ধারণা করে হয়। ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় তাজরীন ফ্যাশনস লিমিটেডে আগুন লাগে। নয় তলা ভবনের নিচতলায় আগুন লেগে মুহূর্তেই আগুনের ধোঁয়া ও আগুন সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে থাকে। যার কারণে ভবনের উপর তলার শ্রমিকরা আটকা পড়ে যান। কারখানার বিপুল পরিমাণ ফ্যাব্রিক এবং সুতা থাকার কারণে আগুন দ্রুত অন্যান্য তলায় ছড়িয়ে পড়ে, যা অগ্নিনির্বাপকের কাজকে জটিল করে। পরদিন রোববার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। ওই ঘটনায় ভবনটির তৃতীয় তলা থেকে সবচেয়ে বেশি ৬৯টি লাশ উদ্ধার করা হয়, চতুর্থ তলায় ২১ এবং পঞ্চম তলায় ১০টি।
সম্পাদক : কবীর আহমদ সোহেল
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ আব্দুল হক
ঢাকা অফিস : ২৩৪/৪ উত্তর গোড়ান, খিলগাঁও, ঢাকা ।
সম্পাদক কর্তৃক প্রগতি প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিঃ, ১৪৯ আরামবাগ, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।
সিলেট অফিস: ২৩০ সুরমা টাওয়ার (৩য় তলা)
ভিআইপি রোড, তালতলা, সিলেট।
মোবাইল-০১৭১২-৫৯৩৬৫৩, ০১৭১২-০৩৩৭১৫
E-mail: provatbela@gmail.com,
কপিরাইট : দৈনিক প্রভাতবেলা.কম
আমাদের সর্ম্পকে গোপনীয়তা যোগাযোগ
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি