তৃতীয় চোখে বিশ্লেষণঃ খাইরুন্নাহার আত্মহত্যা করেননি

প্রকাশিত: ৯:৪৫ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২১, ২০২২

তৃতীয় চোখে বিশ্লেষণঃ খাইরুন্নাহার আত্মহত্যা করেননি
১. আপাত বিশ্লেষন এবং আমার কিয়াস বলছে খাইরুন্নাহার আত্মহত্যা করেননি। এমনটা মনে হওয়ার প্রথম কারণ তার শক্তিশালী নার্ভ।দ্বিতীয় কারণ, তার মাদকাশক্ত স্বামীর অসংলগ্ন আচরণ এবং কথাবার্তা। বিয়ের আটমাসে পাঁচলক্ষ টাকা নেয়া, দামী মোটর সাইকেলের জন্য চাপ দেয়া, সেই চার মেটাতে তিনটা সমিতি থেকে লোন নেয়া, লোনের কিস্তি দিতে দিতে বেতনের টাকা শূণ্য হয়ে যাওয়া, রাত দুইটায় তার “নামাজ পড়তে হাসপাতালে যাওয়া” এসব আমলযোগ্য বিষয়।

 

দেখুন, খাইরুন্নাহার মারা গেছেন। এখন তিনি যদি আত্মহত্যা করেও থাকেন তবে সেটা “সমাজের বুলি সইতে না পেরে নিজেকে শেষ করে দিয়েছেন বা এই সমাজ একটা জেলখানা” এগুলো হচ্ছে খুব সারফেইস লেভেলের আলোচনা। এরকম উপরে উপরে আলোচনা করে নিজেকে স্যাটিসফাই করা সহজ।

 

মূল বিষয়টা আর একটু গভীরে এবং একটু অপ্রিয়। নিজেদেরকেও সেই আয়নায় দেখে ফেলতে পারি বলে সব দোষ সমাজের উপর দিয়ে আমরা শান্তি পাই।

 

২. খাইরুন্নাহার একজন সাহসী মানুষ। তিনি পরিবারের পছন্দে করা অসুখী বিয়ে ত্যাগ করে সিংগল মা হিসেবে একা বেঁচেছেন। একটি ভীষণ নারীবিদ্বেষী এবং ধর্মনিয়ন্ত্রিত একটি সমাজে বসে নিজের চেয়ে অনেক কম বয়সের একটি ছেলের সাথে প্রেম করেছেন এবং তাকে বিয়েও করেছেন।  অসংখ্য টিভি ক্যামেরা ফেইস করেছেন, বলেছেন তারা সুখী হয়েছেন। তিনি বেশ ভালো করেই জানতেন তিনি কী করছেন এবং এর কনসিকোয়েন্সেস কি কি হতে পারে। জেনে বুঝেই তিনি সমাজ, পরিবার, সহকর্মী সবার বাঁকাচোখ, কাঁটাকথা সয়ে নিজের ইস্পাতসম নার্ভকে প্রমাণ করেছেন।

 

এখন এই প্রমাণ করার মধ্যে আপনারা হিরোইজম খুঁজে পেলেও আমি পাইনি। আমি পেয়েছি তার ইমম্যাচিউরিটি। তিনি অপরিমাণদর্শী ছিলেন, হুইমজিক্যাল ছিলেন। সেজন্য তিনি সঙ্গী নির্বাচনে ভুল করেছেন। এমন একটা ছেলে, ফেইসবুকের পরিচয়, যাকে এক পলক দেখলেই বুঝা যায় সে মাদকাশক্ত, যার কথাবার্তায় ছাত্রসুলভ একটা শব্দও নেই, সেরকম একজন মানুষের সাথে কাগজেপত্রে জড়িয়ে গেলেন এবং পুরো দুনিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেলেন।

আরও পড়ুন  পিয়াসাকে ফের ২৭ দিনের রিমান্ড চেয়েছে পুলিশ

 

এধরণের ভুল বেশিরভাগ মেয়েরাই করে। অল্প বয়সের মোহে করে, কম শিক্ষিত মেয়েরা করে। কিন্তু খাইরুন্নাহর অল্প বয়সের আবেগী মানুষ নন। একজন ৪২ বছরের পোড় খাওয়া মানুষ, একজন শিক্ষক যিনি সহকারী অধ্যাপক পদে পৌঁছে গেছেন, যার আগেও সংসার করার টক্সিক অভিজ্ঞতা আছে, সেই মানুষটার ‘ফেইসবুক পরিচয়’ থেকে প্রেম হয়ে গেলো এবং মাত্র ছ’মাসের প্রেমকে তিনি বিয়ে পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেলেন।

 

সেই বিয়ের মাত্র আটমাসের মাথায় লাশ হয়ে গেলেন। এখন এটাকে আমি প্রেম বলবো? না। সাহস বলবো? না। আমি এটাকে বুদ্ধির ঊণতা বলবো। আমি বলবো তিনি নিজেকে নিজে হত্যা করেছেন অবিবেচনা এবং অপরিনামদর্শীতার অস্ত্র দিয়ে।

 

৩. একটা আলোচনা সব মেয়েদের জন্যই আমি করতে চাই তা হলো, বিপদকে স্মেল করার ক্ষমতা তৈরী করা। ভালনারেবিলিটা এনালিসিস করতে পারা। অবিশ্বাস করা, পার্টনারকে তো বটেই, কিছু সময় নিজেকেও। বারবার প্রশ্ন করা। সময় নেয়া। চেখে দেখা। আমি দেখেছি বেশিরভাগ নারীই এখনো সম্পর্ক ব্যবস্থাপনার যোগ্য হয়ে ওঠেনি। তাই শিক্ষিত, স্বাবলম্বী মেয়েরাও প্রেমে পড়লে বেকুব হয়ে যায়।

 

দুনিয়ার সব, লুজার, নেশাখোর, বাটপার, ইতরের জন্য মানবতার কল্যাণে পুণর্বাসন কেন্দ্র খুলে বসে। বাঘা বাঘা সাহসী নারীরাও প্রেমিকের কথায় নিজের কাপড় চোপড় খুলে ভিড়িওতে এসে যায়। তারপর প্রেমিক যথাসময়ে সেই ভিড়িও লিক করে দেয় এবং সেই সাহসী নারী সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে দৌড়ান। কেন করে মেয়েরা এসব? প্রেমের ক্ষুধা? বিশ্বাস? আত্মবিশ্বাসের অভাব? নাকি যা খুশি তা করার খায়েশ?

আরও পড়ুন  মৌলভীবাজারে আ’লীগ নেতার বিরুদ্ধে হাসপাতাল দখলের অভিযোগ

 

যে খায়েশ শেষ পর্যন্ত লাশ বানিয়ে দেয়, জীবিত বা মৃত? ভাবুন, ভাবতে হবে।

 

৪. তবে কি প্রেম দরকার নেই? না। আমি বলি, দরকার নেই। বিশেষ করে সচেতন, শিক্ষিত, স্বাবলম্বী নারীদের তো প্রেম, বন্ধুত্ব কিছুরই দরকার নেই। অন্তত যতোদিন সম্পর্কের ব্যবস্থাপনা না শিখতে পারছে ততোদিন প্রেম ট্রেম দুরে রাখাই উচিত। ততোদিন মেয়েরা বরং টাকার সাথে প্রেম করুক। টাকার চাইতে সুন্দর প্রেম আর নেই। হ্যাঁ, মেয়েদের দরকার একজন ভালো সঙ্গী, পার্টনার। সেটা শারিরীক, মানসিক এবং অতি অবশ্যই আর্থিক। কারণ, পার্টনারশিপ মানেই সমান সমান। “তুমি দিলে আমি দেবো, আমি দিলে তুমি দিবা” এই নেগোসিয়েশন যখন মেয়েরা শিখে যাবে, তখন কোন মেয়ে আর এইসব ছাত্র ফাত্রের সাথে “মানবিক প্রেম” নামক অসুখে ভুগে লাশ হবেনা।

 

প্রসঙ্গত:১৪ আগস্ট ছাত্রকে বিয়ে করা সেই শিক্ষিকা খাইরুননাহারের মরদেহ নিজ বাসা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।  ছাত্র পরিচয়ধারী মামুনকে বিয়ে করে সুখের সংসার গড়া খুবজীপুর ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপিকা খাইরুন নাহারের সংসারের পরিসমাপ্তি ঘটলো মাত্র ছয় মাসেই।

 

তৈমুর রাজা চৌধুরীর টাইমলাইন থেকে নেয়া
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

সর্বশেষ সংবাদ