সিলেট ২১শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ |
প্রকাশিত: ৯:৪৫ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২১, ২০২২
দেখুন, খাইরুন্নাহার মারা গেছেন। এখন তিনি যদি আত্মহত্যা করেও থাকেন তবে সেটা “সমাজের বুলি সইতে না পেরে নিজেকে শেষ করে দিয়েছেন বা এই সমাজ একটা জেলখানা” এগুলো হচ্ছে খুব সারফেইস লেভেলের আলোচনা। এরকম উপরে উপরে আলোচনা করে নিজেকে স্যাটিসফাই করা সহজ।
মূল বিষয়টা আর একটু গভীরে এবং একটু অপ্রিয়। নিজেদেরকেও সেই আয়নায় দেখে ফেলতে পারি বলে সব দোষ সমাজের উপর দিয়ে আমরা শান্তি পাই।
২. খাইরুন্নাহার একজন সাহসী মানুষ। তিনি পরিবারের পছন্দে করা অসুখী বিয়ে ত্যাগ করে সিংগল মা হিসেবে একা বেঁচেছেন। একটি ভীষণ নারীবিদ্বেষী এবং ধর্মনিয়ন্ত্রিত একটি সমাজে বসে নিজের চেয়ে অনেক কম বয়সের একটি ছেলের সাথে প্রেম করেছেন এবং তাকে বিয়েও করেছেন। অসংখ্য টিভি ক্যামেরা ফেইস করেছেন, বলেছেন তারা সুখী হয়েছেন। তিনি বেশ ভালো করেই জানতেন তিনি কী করছেন এবং এর কনসিকোয়েন্সেস কি কি হতে পারে। জেনে বুঝেই তিনি সমাজ, পরিবার, সহকর্মী সবার বাঁকাচোখ, কাঁটাকথা সয়ে নিজের ইস্পাতসম নার্ভকে প্রমাণ করেছেন।
এখন এই প্রমাণ করার মধ্যে আপনারা হিরোইজম খুঁজে পেলেও আমি পাইনি। আমি পেয়েছি তার ইমম্যাচিউরিটি। তিনি অপরিমাণদর্শী ছিলেন, হুইমজিক্যাল ছিলেন। সেজন্য তিনি সঙ্গী নির্বাচনে ভুল করেছেন। এমন একটা ছেলে, ফেইসবুকের পরিচয়, যাকে এক পলক দেখলেই বুঝা যায় সে মাদকাশক্ত, যার কথাবার্তায় ছাত্রসুলভ একটা শব্দও নেই, সেরকম একজন মানুষের সাথে কাগজেপত্রে জড়িয়ে গেলেন এবং পুরো দুনিয়ায় ভাইরাল হয়ে গেলেন।
এধরণের ভুল বেশিরভাগ মেয়েরাই করে। অল্প বয়সের মোহে করে, কম শিক্ষিত মেয়েরা করে। কিন্তু খাইরুন্নাহর অল্প বয়সের আবেগী মানুষ নন। একজন ৪২ বছরের পোড় খাওয়া মানুষ, একজন শিক্ষক যিনি সহকারী অধ্যাপক পদে পৌঁছে গেছেন, যার আগেও সংসার করার টক্সিক অভিজ্ঞতা আছে, সেই মানুষটার ‘ফেইসবুক পরিচয়’ থেকে প্রেম হয়ে গেলো এবং মাত্র ছ’মাসের প্রেমকে তিনি বিয়ে পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেলেন।
৩. একটা আলোচনা সব মেয়েদের জন্যই আমি করতে চাই তা হলো, বিপদকে স্মেল করার ক্ষমতা তৈরী করা। ভালনারেবিলিটা এনালিসিস করতে পারা। অবিশ্বাস করা, পার্টনারকে তো বটেই, কিছু সময় নিজেকেও। বারবার প্রশ্ন করা। সময় নেয়া। চেখে দেখা। আমি দেখেছি বেশিরভাগ নারীই এখনো সম্পর্ক ব্যবস্থাপনার যোগ্য হয়ে ওঠেনি। তাই শিক্ষিত, স্বাবলম্বী মেয়েরাও প্রেমে পড়লে বেকুব হয়ে যায়।
দুনিয়ার সব, লুজার, নেশাখোর, বাটপার, ইতরের জন্য মানবতার কল্যাণে পুণর্বাসন কেন্দ্র খুলে বসে। বাঘা বাঘা সাহসী নারীরাও প্রেমিকের কথায় নিজের কাপড় চোপড় খুলে ভিড়িওতে এসে যায়। তারপর প্রেমিক যথাসময়ে সেই ভিড়িও লিক করে দেয় এবং সেই সাহসী নারী সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে দৌড়ান। কেন করে মেয়েরা এসব? প্রেমের ক্ষুধা? বিশ্বাস? আত্মবিশ্বাসের অভাব? নাকি যা খুশি তা করার খায়েশ?
৪. তবে কি প্রেম দরকার নেই? না। আমি বলি, দরকার নেই। বিশেষ করে সচেতন, শিক্ষিত, স্বাবলম্বী নারীদের তো প্রেম, বন্ধুত্ব কিছুরই দরকার নেই। অন্তত যতোদিন সম্পর্কের ব্যবস্থাপনা না শিখতে পারছে ততোদিন প্রেম ট্রেম দুরে রাখাই উচিত। ততোদিন মেয়েরা বরং টাকার সাথে প্রেম করুক। টাকার চাইতে সুন্দর প্রেম আর নেই। হ্যাঁ, মেয়েদের দরকার একজন ভালো সঙ্গী, পার্টনার। সেটা শারিরীক, মানসিক এবং অতি অবশ্যই আর্থিক। কারণ, পার্টনারশিপ মানেই সমান সমান। “তুমি দিলে আমি দেবো, আমি দিলে তুমি দিবা” এই নেগোসিয়েশন যখন মেয়েরা শিখে যাবে, তখন কোন মেয়ে আর এইসব ছাত্র ফাত্রের সাথে “মানবিক প্রেম” নামক অসুখে ভুগে লাশ হবেনা।
প্রসঙ্গত:১৪ আগস্ট ছাত্রকে বিয়ে করা সেই শিক্ষিকা খাইরুননাহারের মরদেহ নিজ বাসা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। ছাত্র পরিচয়ধারী মামুনকে বিয়ে করে সুখের সংসার গড়া খুবজীপুর ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপিকা খাইরুন নাহারের সংসারের পরিসমাপ্তি ঘটলো মাত্র ছয় মাসেই।
সম্পাদক : কবীর আহমদ সোহেল
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ আব্দুল হক
ঢাকা অফিস : ২৩৪/৪ উত্তর গোড়ান, খিলগাঁও, ঢাকা ।
সম্পাদক কর্তৃক প্রগতি প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিঃ, ১৪৯ আরামবাগ, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।
সিলেট অফিস: ২৩০ সুরমা টাওয়ার (৩য় তলা)
ভিআইপি রোড, তালতলা, সিলেট।
মোবাইল-০১৭১২-৫৯৩৬৫৩, ০১৭১২-০৩৩৭১৫
E-mail: provatbela@gmail.com,
কপিরাইট : দৈনিক প্রভাতবেলা.কম
আমাদের সর্ম্পকে গোপনীয়তা যোগাযোগ
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি