‘নখ কামড়ানো’ ম্যাচে জিমখানাকে হারিয়ে সিলেট লিগে রানার্স-আপ মোহামেডান!

প্রকাশিত: ৭:৪৩ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৪

‘নখ কামড়ানো’ ম্যাচে জিমখানাকে হারিয়ে সিলেট লিগে রানার্স-আপ মোহামেডান!

 

আফজল হোসেন

 

২১৯ রান তাড়ায় ম্যাচের তখন অর্ধেক ওভারের খেলা শেষ, পাঁচ উইকেট হারিয়ে জিমখানা একশো পেরিয়েছে কেবল। এমন সময় জিমখানার ডাগ আউটে বসে থাকা এক ক্রিকেটার বলছিলেন, ‘’বঙ্গবীর অগ্রগামীর বিপক্ষে এমন পরিস্থিতি পড়েছিল জিমখানা”। সেদিন এমন অবস্থা থেকে বের হতে না পারলেও আজ বের হওয়ার প্রবল সুযোগ ছিল তাদের, তবে যিনি এই সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন সেই আসাদুল্লাহ গালিবই আত্মহুতি দিয়ে ফিরেছেন কামিল আহমেদের বলে কট এন্ড বোল্ড হয়ে। ফলাফল বঙ্গবীর অগ্রগামী বিপক্ষে যেমন হেরেছিল জিমখানা, আজও সিলেট প্রথম বিভাগ লিগের শেষ ম্যাচে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের কাছে হেরেছে তারা।

 

লিগের শেষ ম্যাচে জিমখানাকে ৮ রানে হারিয়ে রানার্সআপ ট্রফি ঘরে তুলেছে গেলবারের চ্যাম্পিয়ন মোহামেডান।

 

এর আগে বঙ্গবীর অগ্রগামী ও মোহামেডানের ম্যাচ ছিল কত না আক্ষেপ আর আফসোস। লিগের হাইভোল্টেজ ম্যাচও জমাতে পারেনি দুই দল। একপেশে সেই ম্যাচে মোহামেডানকে হারিয়ে শিরোপায় এক পা দিয়ে রেখেছিল বঙ্গবীর অগ্রগামী, আর জিমখানাকে হারিয়ে অলক-তান্নারা হয়েছেন অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন।

 

মোহামেডান ও জিমখানার ম্যাচে আজ একপেশে হয়নি। রান তাড়ায় শেষ অবধি লড়ে গেছেন এনামুল-গালিবরা। রান তাড়ায় জিমখানাকে ম্যাচেই রেখেছিলেন গালিব, ৩৬ বলে শেষ ২২ রানের হিসাব মিলাতে গড়মিল পাকিয়ে দেওয়া জিমখানা ম্যাচ হেরেছে ৮ রানে।

 

১০৪ রানে ৫ উইকেট হারানো জিমখানার হাল ধরেছিলেন গালিব, বিপর্যয়ের হাত থেকে দলকে বাঁচিয়ে জয়ের স্বপ্নও দেখাচ্ছিলেন এই ব্যাটার। কিন্তু সব কিছু গড়মিল পাকিয়ে দেন গালিব ইনিংসের ৪৬তম ওভারে, কামিলের করা সেই ওভারের প্রথম বলেই ডিফেন্সিভ খেলতে যান, বল ব্যাটের উপরিভাগে লেগে বোলারের দিকেই আসে। সেই বলটা ছিল কামিলের নাগালেরই বাইরে — সে যাত্রায় বেঁচে যান গালিব।

আরও পড়ুন  অস্ট্রেলিয়াকে উড়িয়ে দিয়ে ২৭ বছর পর ফাইনালে ইংল্যান্ড

 

ওভারের দ্বিতীয় বলে যেটা করলেন গালিব, সেটা এক প্রকার আত্মহুতি বলা যায়। দেখেশুনে নিজের উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছেন এই ব্যাটার, সেই সাথে ম্যাচটাও। কামিলের একটু লাফিয়ে উঠা সেই বল গালিব আলতো করে খেলতে চেয়েছিলেন অনসাইডে, ব্যাটের উপরিভাগে লেগে সেই বল চলে আসে কামিলের হাতেই। সেই সহজ সুযোগ মিস করতে চাইলেন না কামিল, তালুবন্দি করে গালিবকে পাঠালেন সাজঘরে। একই সাথে ম্যাচটাও নিয়ে গেলেন নিজেদের হাতের মুঠোয়।

 

ছয়ে খেলতে নামা গালিব আউট হওয়ার আগে খেলেন ৬৫ রানের দারুণ এক ইনিংসে। এই ইনিংস খেলার পথে অষ্টম উইকেটে সাঈদকে (২৬) সাথে নিয়ে যোগ করেন ৫১ রান। দলীয় ১৯৭ রানে গালিব ফিরলে, পরের ওভারের প্রথম তোফায়েলের বলে কাটশট খেলতে গিয়ে সাঈদ উইকেটের পিছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাজঘরে। ইনিংসের ৪৮তম ওভারে এক ছক্কা এবং এক বাউন্ডারিতে ১১ রান সংগ্রহ করে ম্যাচে উত্তেজনা ছড়ান দশে নামা সফর আলী। ফলে শেষ ২ ওভারে জিমখানার জয়ের জন্য প্রয়োজন পড়ে ৯ রান। ইনিংসের ৪৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে কাভার অঞ্চলে খেলতে গিয়ে সফরও ফিরেন ক্যাচ দিয়ে। ফলে ৮ রানের পরাজয় মেনেই মাঠ ছাড়তে হয় জিমখানাকে। নিজের ভুলে দলের এমন পরাজয় মেনে নিতে পারেননি সফর তাইতো মাথা নিচু করে মাঠেই বসে ছিলেন খানিকক্ষণ।

 

২১৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে পঞ্চাশের আগেই উপরের সারির তিন ব্যাটারকে হারায় জিমখানা। তোফায়েলের বলে রানের খাতা খোলার আগেই প্যাভিলিয়নের পথে হাটেন তাসভীর রায়হান সাদি(০)। ব্যক্তিগত ১১ রানে তোফায়েলের বলে বোল্ড হয়ে ফিরে যান কামরুল।

 

আরও পড়ুন  এশিয়া কাপে যেভাবে সুপার ফোরে বাংলাদেশ

উইকেটে রয়েসয়ে খেলতে থাকা ওপেনার মিজানুর রহমান সায়েমও তোফায়েল তৃতীয় শিকারে পরিণত হন ব্যক্তিগত ৩৪ রানে। ফলে রান তাড়ায় ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারায় জিমখানা। ৮.২ ওভারে ৩০ রানে ৫ উইকেট শিকার মোহামেডান জয়ের নায়ক হয়েছেন তোফায়েল আহমেদ।

 

মঙ্গলবার এর আগে সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে সিলেট প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগের শেষ ম্যাচে প্রথম ব্যাট করে অমিত হাসানের সেঞ্চুরিতে ৮ উইকেটে ২১৮ রান সংগ্রহ করে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। বহিরাগত কোটায় খেলতে আসা অমিত ১৪১ বলে ১১৪ রানের ঝলমলে ইনিংস খেললেও মোহামেডানের বাকী ব্যাটাররা ছিলেন নিষ্প্রভ। স্কোরকার্ডে দ্বিতীয় ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ তাই ২৪ রান। বল হাতে মোহামেডানের ব্যাটারদের বেশ ভুগিয়েছেন জিমখানার সফর আলী।

 

দুই ওপেনার তোফায়েল আহমেদ (৪) ও মাজেদকে (১৩) ফেরানোর পাশাপাশি ইনিংসের ৪৯তম ওভারের শেষ দুই বলে তুলে নিয়েছেন আবিদুল হক (১৪) ও সাদ্দামের (০) উইকেট। মোহামেডানে মূল্যবান চারটি উইকেট শিকার করতে সফর ৭ ওভারে রান খরচ করেন মাত্র ৪০। ফলে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ২১৮ রানের বেশি সংগ্রহ করতে পারেনি মোহামেডান।

 

মুশফিকুর, রাশেদ, আরাফাত ১টি করে উইকেট লাভ করেন।

 

ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হন মোহামেডানের তোফায়েল।

 

৯ ম্যাচ খেলে ৮টি জিতে লিগে রানার্স আপ হলো সাদা-কালো শিবির, জিমখানা ৭ ম্যাচ জিতে হয়েছে ৩য়।

 

গতকাল ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবকে হারিয়ে এবারের লিগে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারকা ক্রিকেটার সমৃদ্ধ বঙ্গবীর অগ্রগামী ক্রীড়া চক্র।

 

আজকের এই ম্যাচের মাধ্যমে এবারের সিলেট ১ম বিভাগ ক্রিকেট লিগের পর্দা নামলো।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

সর্বশেষ সংবাদ