সিলেট ২৫শে জানুয়ারি, ২০২১ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই মাঘ, ১৪২৭ বঙ্গাব্দ |
প্রকাশিত: ৪:১১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২৩, ২০২০
প্রভাতবেলা ডেস্ক:
বরিশালের ঐতিহ্যবাহী ‘পদ্ম পুকুর’- এর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। বিশাল পুকুরে বিস্তৃত বিরল প্রজাতির এই ‘শ্বেতপদ্ম’ কেটে সাফ করে ফেলা হয়েছে। দর্শনীয় স্থানটিতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার পর এবার শ্বেতপদ্ম কেটে ফেলায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে জেলার প্রকৃতিপ্রেমীদের মাঝে।
পুকুরটি নগরীর বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয়ের ‘হীম নীড়’ চত্বরে অবস্থিত। পুকুরটির ‘শ্বেতপদ্ম’ পুকুর দেশের ঐতিহ্য। একই জলাশয়ে এতো সাদা পদ্ম ফুল বিরল। এই শ্বেতপদ্ম দেখে মুগ্ধ হন দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা।
বিআইডব্লিউটিএ সূত্রে জানা গেছে, ব্রিটিশ শাসনামলে নগরীর বান্দ রোড সংলগ্ন সাড়ে পাঁচ একর জুড়ে স্টিমার কোম্পানির কার্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৬৫ সালে মেরিন ওয়ার্কশপের তৎকালীন ম্যানেজার জার্মান নাগরিক মি. ইলিনগর বিশেষ ব্যবস্থায় মাটির পাত্রে কিছু শ্বেতপদ্ম গাছ সংগ্রহ করে পুকুরের তলদেশে রোপণ করেন। এরপর পুরো পুকুর সাদা পদ্মে ছেয়ে যায়। যার পরিচিতি এখন ‘পদ্মপুকুর’ নামে।
কিন্তু বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ পুকুর পরিষ্কারের নামে পদ্মশূন্য করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। এতে দুর্লভ শ্বেতপদ্মের বিস্তার বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন উদ্ভিদ বিশেষজ্ঞরা।সরেজমিনে দেখা গেছে, ‘হীম নীড়’ চত্বরের পদ্মপুকুর ফাঁকা। প্রবেশমুখের সামনেই সাইনবোর্ডে লেখা ‘প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত’। যে পদ্মপুকুরে সবসময় থাকত দর্শনার্থীদের ভিড়, সেখানে এখন শুনশান নীরবতা। এ যেন এক অচেনা পুকুর।
২৫ বছর ধরে হীম নীড়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিকিউরিটি গার্ড নুরুল ইসলাম বলেন, ‘গত ১৫ দিন আগে পুকুরটি পরিষ্কার করা হয়েছে। ওই সময়ও পদ্মফুল ছিল। আবর্জনা জমে যাওয়ায় গোটা পুকুরই পরিষ্কার করেছেন কর্তৃপক্ষ।’
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন স্থান থেকে সাধারণ মানুষ প্রবেশ করায় কর্তৃপক্ষ সতর্কতা আরোপ করেছেন।’
বরিশাল নদী খাল বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, ‘পদ্মপুকুর নগরীর অন্যতম দর্শনীয় স্পট। এটিতে ভ্রমণপিপাসুদের পদচারণা ঘটে। শুনেছি, পুকুরে থাকা পদ্ম কেটে ফেলার নেপথ্যে মাছ চাষের পরিকল্পনা রয়েছে।’
শিবলু আরও বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) গণমাধ্যমকর্মীরা জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমানকে বিষয়টি অবহিত করায় তাৎক্ষণিক তিনি বিআইডব্লিউটিএ’র নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে ফোনে জানতে চেয়েছেন। নির্বাহী প্রকৌশলীকে পদ্মপুকুর পরিচর্যায় গুরুত্ব দিতে বলেন তিনি।’
বরিশাল বিআইডব্লিটিইএ’র নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন অর রশিদ বলেন, ‘পদ্মর মৌসুম মে থেকে আগস্ট, চারমাস। কচুরিপানা অপসারণ ও মাছ যেন অক্সিজেন পর্যাপ্ত পায়, সেজন্য গোটা পুকুর পরিষ্কার করা হয়েছে। প্রতি বছরই তারা পরিষ্কার করেন।’
তিনি দাবি করেন, পদ্মের শিকড় গভীরে থাকায় পরিষ্কার করায় ক্ষতির কোনো সম্ভাবনা নেই। বৃহস্পতিবার জেলা প্রশাসকও বিষয়টি তার কাছে জানতে চেয়েছেন। তিনি তাকে পদ্মফুলের ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন।
তবে বরিশাল বিএম কলেজের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের প্রফেসর মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শ্বেতপদ্ম পুকুরটি বরিশালের ঐতিহ্য। এটি উদ্ভিদবিদদের জন্য গবেষণারও অংশ। দুর্লভ শ্বেতপদ্ম ফুল মূলত গ্রীষ্মকালে (এপ্রিল থেকে নভেম্বর) পর্যন্ত ফুটে। পুকুরে পদ্ম থাকলে আরও দুই মাস ফুল ফুটতে পারতো। এটি পরিষ্কার করতে হলেও পুরোটা সাফ না করে একাংশে রেখে দেয়া উচিৎ ছিল।’
তিনি আরও বলেন, ‘গোটা পুকুর থেকে শ্বেতপদ্ম সাফ করায় এর বিস্তারের ক্ষেত্রে হুমকি হতে পারে। এটি বিলুপ্ত হওয়া ঠেকাতে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।’
সম্পাদক : কবীর আহমদ সোহেল
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ আব্দুল হক
ঢাকা অফিস : ২৩৪/৪ উত্তর গোড়ান, খিলগাঁও, ঢাকা ।
সম্পাদক কর্তৃক প্রগতি প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিঃ, ১৪৯ আরামবাগ, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।
সিলেট অফিস: ২৩০ সুরমা টাওয়ার (৩য় তলা)
ভিআইপি রোড, তালতলা, সিলেট।
মোবাইল-০১৭১২-৫৯৩৬৫৩, ০১৭১২-০৩৩৭১৫
E-mail: provatbela@gmail.com,
কপিরাইট : দৈনিক প্রভাতবেলা.কম
আমাদের সর্ম্পকে গোপনীয়তা যোগাযোগ
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি