বাবার সঙ্গেই মেয়ের বিয়ে

প্রকাশিত: ৩:২৪ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১০, ২০২৩

বাবার সঙ্গেই মেয়ের বিয়ে
প্রভাতবেলা ডেস্ক: বিয়ে শুধু দুটি মানুষের নয়, দুই পরিবারেরও বন্ধন। দুই পরিবারের সংস্কৃতি, তাদের মানুষজনের মধ্যে আদান-প্রদানের মাধ্যম হয়ে ওঠে বিয়ে। কিন্তু আজও পৃথিবীর নানা প্রান্তে রয়ে গেছে অপ্রচলিত বেশ কিছু বৈবাহিক প্রথা। যা শুনলে চমকে যেতে হয়। এমনি একটি আছে বাংলাদেশেও, যেখানে বাবা বিয়ে করেন মেয়েকে!

 

আজব এই প্রথা রয়েছে মান্ডি সম্প্রদায়ের মধ্যে। বাংলাদেশের এই সম্প্রদায়ের মানুষ থাকেন একেবারে প্রত্যন্ত জায়গায়। তাদের সংস্কৃতি অন্যদের একেবারে আলাদা। বিশেষ করে এই বিয়ের বিষয়টি। নিজেদের ভাষা এবং সংস্কৃতি নিয়ে মান্ডিরা খুবই রক্ষণশীল বলেই শোনা যায়। তারা আজও নিজেদের সম্প্রদায়ের বাইরের সংস্কৃতিকে খুব একটা গ্রহণ করেননি। তাই সেখানে আজও চলে আসছে প্রাচীন এক বিয়ের প্রথা। তাতেই মেয়ের বিয়ে দেওয়া হয় বাবার সঙ্গে।

গল্পটা অরোলার

কৈশোর থেকে যৌবনে যাওয়ার পথে কখনো কোনো প্রিন্স চার্মিং-এর স্বপ্ন দেখেন না মান্ডি উপজাতির মেয়েরা। মান্ডি কন্যা অরোলা ডালবোটের জীবনকাহিনিও প্রায় একই। টাঙ্গাইলের মধুপুরে ৩০ বছরের এই যুবতী যখন খুব ছোট ছিলেন, তখনই মারা যান তার বাবা। তখন তার মা আরেকটি বিয়ে করেন। সেই বয়স থেকেই মায়ের দ্বিতীয় স্বামীকেই নিজের স্বামী হিসেবে জানেন অরোলা।

তিনি বলছিলেন, ‌‘যখন বয়ঃসন্ধিতে পৌঁছাই তখন একজন সুপুরুষ আমার স্বামী হবেন, এই স্বপ্ন দেখতে শুরু করি। তবে যেদিন জানতে পারলাম রীতি মেনে তিন বছর বয়সেই আমার সঙ্গে বাবার বিয়ে হয়েছে, তখন পালিয়ে যেতে ইচ্ছে হয়েছিল।’ এখন বাবার ঔরসজাত ৩ সন্তানের মা অরোলা। আর তার মায়ের আবার দুটি সন্তান।

আরও পড়ুন  গ্রিসে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট

কেন এমন রীতি?

ভারত ও বাংলাদেশ মিলিয়ে মান্ডি উপজাতির মানুষের সংখ্যা প্রায় ২০ লাখ। তাদের গারো উপজাতিও বলা হয়ে থাকে। এই সম্প্রদায়ের কোনো নারী যদি বিধবা হন, তাহলে তার আবার বিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এবার যদি দেখা যায়, সেই নারীর কোনো কন্যা সন্তান রয়েছে, তাহলে তার ক্ষেত্রেই আছে এমন আজব নিয়ম।

প্রথমে বিধবা নারীর বিবাহ হয় কোনো পুরুষের সঙ্গে। ওই নারীর কন্যা যদি নাবালিকা থাকে, তাহলে সে তার সৎ বাবাকে ‘বাবা’ বলেই ডাকতে শুরু করে। কন্যার বয়স বাড়লে, অর্থাৎ বিবাহযোগ্য হলে তার সঙ্গে সৎ বাবার বিয়ে দেওয়া হয়। তারপর থেকে ওই কন্যা ‘বাবা’ ডাকের পরিবর্তে তাকে ‘বর’ বলে ডাকতে শুরু করেন।

 

মায়ের বিবাহের সময়ে কন্যা যদি নাবালিকা না হন, তাহলে মায়ের বিয়ের পর পরই তার সঙ্গেও সৎ বাবার বিয়ে হয়ে যায়। আজও মান্ডিরা এমন অদ্ভুত আচার মেনেই চলেন। আর সেটিই বাইরের দুনিয়ার কাছে বেশ বিরল।

 

আরও পড়ুন  করোনা রোগীর বিল এলো সাড়ে ৯ কোটি টাকা

যদিও নিজের বায়োলজিক্যাল বাবার সঙ্গে মেয়ের বিয়ে এখানে দেওয়া হয় না। পুরোটাই হয় সৎ বাবার সঙ্গেই। তবুও এই রীতিকে খুব একটা স্বাভাবিক বলে মনে করেন না এই সম্প্রদায়ের বাইরের মানুষ।

 

বর্তমানে এমন বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে, যেখানে এই সম্প্রদায়ের বেশ কিছু মহিলা এই রীতির বিরোধিতা করেছেন এবং এভাবে সৎ বাবাকে বিয়ে করার ক্ষেত্রে রাজি হননি। কিন্তু তার মধ্যেও এখনও চালু আছে এই রীতি। আগামী দিনে এটি বন্ধ হতে পারে বলে আশা রাখেন সম্প্রদায়ের অনেকেই।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

সর্বশেষ সংবাদ