সিলেট ২৫শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |
প্রকাশিত: ৮:৪৭ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ১, ২০২৩
প্রভাতবেলা ডেস্ক:
বাংলাবাজারের বইয়ের দোকানগুলোকে পেছনে ফেলে প্যারিদাস রোডের দিকে একটু সামনে এগোলে দেখা মিলবে জীর্ণ একটি দেওয়ালে লেখা বিউটি বোর্ডিং। গেট পেরোলেই একটু ফাঁকা জায়গা। তার বাম পাশে মৌসুমী ও পাতাবাহার ফুলের গাছ। বাগানের মাঝে আড্ডাস্থল। কাপড়ের বড় ছাতার নিচে বসার জন্য টেবিল ও চেয়ার। এর পাশেই অতিথিদের খাবারের জায়গা। বাড়ির দেওয়ালের অনেক জায়গায় লেখা ‘বিউটি বোর্ডিং’। এছাড়া দেওয়ালের গায়ে রয়েছে এ বোর্ডিংয়ের সংস্পর্শে আসা স্মৃতিবিজড়িত মহৎ মানুষগুলোর নাম। তার পাশে টানানো বোর্ডিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রহ্লাদ চন্দ্র সাহার ছবি।
তার পাশেই বিউটি বোর্ডিংয়ের ডাইনিং। এটিও বেশ জনপ্রিয়। ভোজন রসিকরা আসেন নিয়মিত। এখানকার লুচি পরোটা, সরষে ইলিশের ভক্ত পুরান ঢাকাবাসী। এখানে কর্মচারীর সংখ্যা আটজন। সিঙ্গেল ও ডাবল মিলিয়ে এই বোর্ডিংয়ে থাকার জন্য কক্ষ আছে ২৫টি। দর্শনার্থীরা চাইলেই থাকতে পারেন। এক্ষেত্রে কক্ষভেদে রয়েছে নির্দিষ্ট ভাড়া। ফ্যামিলি ডাবল বেড ১ হাজার ৪০০ টাকা, ব্যাচেলার ডাবল বেড ৮০০-৯০০ টাকা। সিঙ্গেল বেড নিচতলা ৩০০ টাকা ও উপর তলা ৪০০ টাকা।
বর্তমানে বিউটি বোর্ডিংয়ে কবি সংসদ নামে একদল লোক মাঝে মাঝে কবিতার আসর জমায়। সেইসাথে বর্তমান প্রজন্মের কবি সাহিত্যিকরাও ঐতিহ্যের টানে এখানে আসে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও স্থানীয়রা সময় পেলেই মাঝেমধ্যে এখানে ঘুরতে আসে।
বর্তমানে বিউটি বোর্ডিংয়ের দায়িত্বে আছে প্রতিষ্ঠাতা প্রহ্লাদ চন্দ্র সাহার বংশধর। বোর্ডিং পরিচালনা করেন তার ছেলের সমর সাহা। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাবা শহীদ হন। আমার ভাইও আমাদের ছেড়ে পরপারে চলে গেছেন। দিন দিন আড্ডা কমে যাচ্ছে। যান্ত্রিক কোলাহলে মাঝে মাঝে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসে। বিদেশিরা আসেন। কিন্তু আগের মতো আড্ডা আর জমে না। চেষ্টা করছি বোর্ডিংয়ের ঐতিহ্য ধরে রাখতে। কিন্তু কতদিন পারবো তা জানি না।
জানা যায়, বিউটি বোর্ডিংয়ে প্রথমে ছিল সোনার বাংলা পত্রিকার অফিস। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের আগে। লোকে জমিদারবাড়ি বলেই চিনত। কেননা, এ বাড়িটি ছিল জমিদার সুধীর চন্দ্র দাসের। তিনি ভারত চলে গেলে বাড়িটিতে গড়ে ওঠে একটি ছাপাখানা। আর এখান থেকেই প্রকাশিত হতো সোনার বাংলা পত্রিকাটি। দেশভাগের পর পত্রিকা অফিসটি স্থানান্তরিত হয়ে কলকাতায় চলে গেলে ১৯৪৯ সালে নলিনী মোহন সাহা ও প্রহ্লাদ চন্দ্র সাহা ১১ কাঠা জমি কিনে নেন তৎকালীন জমিদার সুধীর চন্দ্র দাসের কাছ থেকে। এ জমিতেই গড়ে তোলেন ঐতিহাসিক এ বিউটি বোর্ডিং। নলিনী মোহনের বড় মেয়ে ছিলেন বিউটি আর তার নামেই এর নামকরণ হয়।
মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী ১৯৭২ সালে দেশে ফিরে প্রহ্লাদ সাহার দুই ছেলে সমর সাহা ও তারক সাহা পুনরায় এ বিউটি বোর্ডিংয়ের প্রাণ ফেরাতে এটি আবার চালু করেন। বিউটি বোর্ডিংয়ের প্রাণ ফেরানো তাদের কাছে মোটেও সহজ ছিল না। এই যখন অবস্থা তখন ইমরুল চৌধুরী ১৯৯৫ সালে গড়ে তোলেন বিউটি বোর্ডিং ‘সুধী সংঘ’। তার হাত ধরে ১৯৯৮ সালে ৬০ সদস্য বিশিষ্ট ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়। ২০০০ সাল থেকে এ বোর্ডের মাধ্যমে কবি-সাহিত্যিকদের সম্মাননা দেওয়া শুরু হয়।
সম্পাদক : কবীর আহমদ সোহেল
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ আব্দুল হক
ঢাকা অফিস : ২৩৪/৪ উত্তর গোড়ান, খিলগাঁও, ঢাকা ।
সম্পাদক কর্তৃক প্রগতি প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিঃ, ১৪৯ আরামবাগ, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।
সিলেট অফিস: ২৩০ সুরমা টাওয়ার (৩য় তলা)
ভিআইপি রোড, তালতলা, সিলেট।
মোবাইল-০১৭১২-৫৯৩৬৫৩, ০১৭১২-০৩৩৭১৫
E-mail: provatbela@gmail.com,
কপিরাইট : দৈনিক প্রভাতবেলা.কম
আমাদের সর্ম্পকে গোপনীয়তা যোগাযোগ
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি