বিলুপ্তির পথে তালগাছ || অস্তিত্ব সংকটে বাবুই পাখি

প্রকাশিত: ৯:৩২ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ২৫, ২০২৩

বিলুপ্তির পথে তালগাছ || অস্তিত্ব সংকটে বাবুই পাখি
‘বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই,
কুঁড়ে ঘরে থেকে করো শিল্পের বড়াই,
আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে,
তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে।
বাবুই হাসিয়া কহে, ‘সন্দেহ কি তাই?
কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়,
পাকা হোক তবু ভাই পরের বাসা,
নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর খাসা।’
রজনীকান্ত সেনের অনবদ্য সৃষ্টি। গ্রামাঞ্চলে তাল গাছে বাবুই পাখির বাসা দেখলে  এ কবিতাটি মনে পড়বেই। তবে আগের মতো এখন আর তেমন দেখা মেলে না বাসা বাঁধার নিপুণ কারিগর বাবুই পাখির। কারণ কালের বিবর্তনে বিলীন হতে চলেছে খড় দিয়ে বানানো তাল গাছে বাবুই পাখির বাসা।
 সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার চন্দগ্রাম পাখিঢাকা ছায়াঘেরা একটি গ্রাম। একসময় এ গ্রমে বাবুই পাখির কলতানে মুখরিত থাকত। তালগাছ নিধনের ফলে আবাস হারিয়ে বিলীন  বাবুই পাখি।
জানা যায়, একটা সময় গ্রাম-বাংলার মাঠের ধারে, পুকুর পাড়ে কিংবা মাঠের পাশে দেখা মিলতো সারি সারি তালগাছের, সেখানে সাদা চঞ্চল নিষ্ঠাবান বুনন শিল্পী পাখির বাসা কারো নজর এড়াতো না, সেই তালগাছ আর বাবুই পাখির বাসা দু’টিই আজ হারিয়ে যাচ্ছে। হারিয়ে যেতে বসেছে প্রাকৃতিক শিল্পী পাখির ভোরবেলার কিচিরমিচির মধুর সুরে ডাকাডাকি আর উড়োউড়ি।
শুধু কি গ্রামগঞ্জে, শহরতলীতেও অনেক তাল গাছে ঝুলে থাকতো হাওয়ায় দোদুল্যমান বাবুই পাখির বাসা একসাথে ১৫ থেকে ২০টির বেশি বাসা ঝুলে থাকতে দেখা যেতো তাল গাছগুলোতে। এমন প্রাকৃতিক দৃশ্য আজ বিশ্বনাথের চন্দগ্রামসহ কয়েকটি গ্রামে এখন অতীত। বর্তমানে না দেখা যায় তালগাছ, না দেখা যায় তালগাছে ঝুলন্ত বাবুইয়ের বাসা। শুধু তালগাছ নয়, নারকেল, সুপারিসহ নানান দীর্ঘ বৃক্ষেই বাসা বাঁধে বাবুই।
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে এসব গাছ কমে যাওয়ায় আবাসন নিয়ে চরম সঙ্কট পড়েছে এই পাখি। যার ফলে চরম অস্তিত্ব সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে বাবুই পাখি। ঝুঁকি জেনেও অনেকটা বাধ্য হয়েই যেন অনিরাপদ জায়গায় ঝোঁপঝাড়ে আবাস গড়ে তুলছে কিছু পাখি।
বয়োবৃদ্ধদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বাবুই পাখিটি খুবই বুদ্ধিমান, দেখতে ছোট হলেও বুদ্ধিতে সব পাখিকে হার মানায় বাবুই পাখি। ঘাস ও লতা পাতা দিয়ে তালগাছের মাথায় সুন্দর করে বাসা তৈরি করতে পারে বলে এদের তাঁতি পাখি বলা হয়। নিপুণ কারিগর এই পাখি স্ত্রী-পুরুষ মিলে তাদের স্বপ্নের সংসার পাতে এবং তাতে ডিম পাড়ে বাচ্চা ফুটায়।
গ্রামের প্রবীণরা আরো বলেন, ছোটবেলায় পথের ধারে, বাড়ির আনাচে-কানাচে অনেক তাল গাছ দেখা যেত। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় মানুষ তালগাছ কেটে ফেলায় আজ আর তালগাছের মগডালে চির চেনা বাবুই পাখির বাসা নজরে পড়ে না।
চন্দ গ্রামের প্রবীন মুরব্বীও খাজাঞ্চী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য জোতির্ময় দে মতি জানান উকিল বাবুর বাড়ীতে অনেক তাল গাছ ছিল। তখন বাড়িতে বাবুই পাখির কলকলিতে মুখরিত থাকত। কিন্তু কুচক্রীমহল তালগাছ ধংবস করায় এখন আর বাবুই পাখির অস্তিত্ব নেই।
উপজেলা কৃষি অফিসার জানান, অত্র অঞ্চলে পুরাতন তাল গাছগুলোকে না কাটার জন্য এবং নতুনভাবে তালগাছের চারা উৎপাদন করে রোপন করতে হবে। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য সকলকে সচেতন থাকতে হবে। এছাড়া বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে তালগাছের কোনো বিকল্প নেই। এর ফলে বিলুপ্ত হওয়া নিপুণ বাবুই পাখি অস্তিত্ব ও রক্ষা পাবে।
মো. মুহিবুর রহমান♦ সিনিয়ির সাংবাদিক, সিলেট।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

সর্বশেষ সংবাদ