বিয়ের আচার অনুষ্ঠানের নামে কি হচ্ছে ?

প্রকাশিত: ২:৪৬ অপরাহ্ণ, জুন ১৯, ২০২১

বিয়ের আচার অনুষ্ঠানের নামে কি হচ্ছে ?
অনুষ্ঠানের শেষলগ্নে চলছে চা- পর্ব। জমজমাট আড্ডা। জ্ঞানের পরিধি কার কত গভীর তা প্রমাণে গুগল ইউটিউবের দলিল, শত বছরের মুর্দা অক্ষত থাকার কিচ্ছা, নারী নেতৃত্ব, শেখ হাসিনা থেকে মডেল মসজিদ উদ্বোধনের সঙ্গতি অসঙ্গতি কিছুই বাদ পড়ছে না। চা’র কাপে চুমুক দিয়ে কেউ বলছেন আমি চিনি খাইনা। আজ খেয়ে নিলাম। কেউ বলছেন রাতে চা পান করিনা, আজ করে নিলাম।
জম্পেশ আলোচনায় শুভ্র সফেদ চুল দাড়ি সম্বলিত ভদ্রজন ফ্লোর নিলেন। বল্লেন আমার বয়স ৭৫ এর বেশী। আমি কনের মামা। আজ এইখানে আমরা যা করলাম তার জবাব আমাদেরকে দিতে হবে। এর কোন কিছুই শরীয়ত এলাউ করেনা। ভদ্রলোকের এমন কথায় কেউ প্রতিবাদ না করেই বল্লেন; আল্লাহ গাফুরুর রহিম আমাদের সবাইকে মাফ করবেন।
কেউ বল্লেন আল্লাহ রাহমানুর রাহিম। কেউ শবেকদর এর ফজিলত তুলে ধরে বল্লেন ঐ রাতেই সব মাফ করে দেন আল্লাহ। আমি নীরবে শুনছিলাম। আলোচকদের বেশ ক’জন ৭৫ উর্ধ বয়সী। অনেকেই নামাজি, তাহাজ্জুদগোজারও। আমার গুরুজন, বয়সে সম্পর্কে সিনিয়র। সঙ্গত কারণে নীরবতাই শ্রেয়।
 
শুধু ভাবলাম মানুষ কত সহজেই পার পেয়ে যাবার চিন্তা করে!
 
বিয়ের আকদ্ অনুষ্ঠান। বর বৃটেনে ,কনে সিলেটে। ভার্চুয়াল বিয়ে বলা যেতে পারে। সশরীরে বর- কনে -সাক্ষীর উপস্থিতি ছাড়া বিয়ের শুদ্ধতা নিয়ে এখতেলাফ রয়েছে। সেটা ফকিহ্ মুফতিদের বিষয়। আমি সেদিকে যাচ্ছিনা।
সাম্প্রতিক সময়ে বিয়ের আচার অনুষ্ঠান গুলোতে হচ্ছে টা কি? গায়ের মুহাররাম নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশা। অবাধ ফটোসেশান। ভোজনে বেপরোয়া অপচয়। বেহায়াপনা না হলেও বেলেল্লাপনা ছাড়া বিয়ের অনুষ্ঠান এখন আর হয়না। হলেও এটা সামাজিক স্ট্যাটাস পায়না। বলা হয় বেক ডেটেড, কনজার্ভেটিভ।
আমাদের  অধিকাংশ বিয়ে/ আকদ্/ ওয়ালিমা  অনুষ্ঠানে যে অনিয়মগুলো হয় তা বিয়ের শুদ্ধতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলে মারাত্মকভাবে! যার ফলে কোন নারী পুরুষ আজীবন জেনাকার হয়ে যাবার আশংকা বিদ্যমান।
প্রথমত: যিনি উকিল মনোনীত হন বা যিনি কবুল পড়ান। এদের অধিকাংশ ( আমার দেখা) থাকেন অনভিজ্ঞ। ঠিকমত বলতে পারেন না। সাজ গোজ করে বসে থাকা বধূ কিছুক্ষণ কান্নাকাটি করার পর যখন শুনে, মা বলো, কবুল বলো, সবাইকে কস্ট দিয়ে লাভ কি?
নববধূর আবার একটা লাজ লজ্জা আছেনা? তাই হুট করে বলেও না। একসময় পাশে থাকা বান্ধবী না হয় ভাবী কানে ফিসফিস করে কি বলেন। পরক্ষণেই কনের মুখ নিঃসৃত ‘ কবুল’ শব্দে সবাই আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠেন।
এই মেয়েটা কি বুঝে শুনে কবুল বলেছে ?
 
আমাদের কি জানা নেই ? এই যারা আকদ্ পড়ালাম বা অংশ নিলাম। তালতো ভাই, খালাত ভাই, বড় দুলাভাই, ছোট ভাইসাব, বড়ভাইয়ের বন্ধু সবাই মিলে। এই সবাই এই কনেকে, এই বধূকে, এই বোনকে দেখা হারাম। অতীব জরুরী ভিন্ন বিষয়।
 
আকদ্/বিয়ে/ ওয়ালিমা অনুষ্ঠানের দিন অধিকাংশ কন্যা নামাজ আদায় করেন না বা করতে পারেন না। অনুষ্ঠান হলের বা বাসা বাড়ীর গুটিকয়েক খালা- চাচী ছাড়া হাজিরান মহিলাদের অবস্থা ও একই। পুরুষদের কথা না-ই বল্লাম।
 
‘কবুল’ পড়া একটা পবিত্র কাজ। বরদের ক্ষেত্রে এ পবিত্রতা যেমন কনের ক্ষেত্রেও তেমন। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ,বর গোসল/অজু করে ‘কবুল’ পড়া পর্যন্ত পবিত্র থাকার চেষ্টা করেন। কিন্তু কনের বেলায় ভিন্ন চিত্র। নববধূ সেঁজে পার্লার থেকে আসা আপনার / আমার বোনটি কি পবিত্রতা অর্জন করে বা অজু করে ‘কবুল’ বলেছিল?
অথচ পরক্ষনেই হুজুর বা কাজী সাহেব খুতবা পাঠ করলেন, দোয়া করলেন। খুতবায় কি পড়লেন ? তা বুঝলাম ক’জন। আর দোয়াতে চাইলেন, এ দাম্পত্য জীবন যেন খাতুনে জান্নাত ফাতেমা ও হযরত আলীর মত হয়। তাদের থেকে যেন নেক আওলাদ জন্ম হয়।
ভাবুন তো করলেন কি? আর চাইলেন কি?
 
পরিসর আর বড় করতে চাই না।  বিয়ে ও বিয়ের অনুষ্ঠানে সাম্প্রতিক কালে সামাজিকতার নামে, স্ট্যাটাস মেইনটেইন এর নামে আমরা যা করছি তা৷ কি ইসলাম এলাউ করে?
 
আর যারা ক্ষমার শর্ট কার্ট পথ খোঁজেন তাদেরকে বুঝতে হবে আল্লাহ পাকের আদেশ নিষেধ মানতে হবে আগে। তারপর ক্ষমা প্রাপ্তির প্রত্যাশা।
যার কথা শুনলেন, মানলেন না। তার কাছে ক্ষমা চাইবেন আর পেয়ে যাবেন?
কবীর আহমদ সোহেল,সম্পাদক: প্রভাতবেলা।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

সর্বশেষ সংবাদ