ভূমিকম্পকে সতর্ক বার্তা হিসেবে গ্রহন করা উচিত

প্রকাশিত: ৪:০৩ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৮, ২০১৬

২৪ ঘন্টার ব্যবধানে সিলেটসহ সারা দেশে দু’দফা ভূকম্পন অনুভ’ত হয়। আতংকের পাশাপাশি উদ্বেগ জন্ম নেয় জনমনে। প্রাচীন জনবসতি সিলেট বরাবরই ভ’মিকম্প ঝুঁকিপ্রবন হিসেবে বিবেচিত। তাই প্রতি ছোট, মাঝারি ধরণের ভ’-কম্পন উদ্বেগকে আরো ঘনিভুত করে। প্রাচীন ঐতিহ্যের লিলাভ’মি হওয়ায় অনেক বাড়িঘর ব্যবসা প্রষ্ঠিান এখন ঝুকিপূর্ণ। সেঞানে আধুনিক ছোয়া লেগেছে তাও কতটা ভ’মিকম্পন সহনীয় তার কোন সঠিক সার্ভে নেই।

ইতালির মধ্যাঞ্চলে গত বুধবার ভূমিকম্পের আঘাতে একটি জনবসতি প্রায় ধ্বংস হয়ে গেছে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ২; কিন্তু উৎপত্তিস্থলের গভীরতা কম থাকায় (১০ কিলোমিটার) ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে অনেক বেশি। নিহতের সংখ্যা আড়াই শ’ ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছে তিন শতাধিক মানুষ। ধ্বংসস্তূপের নিচে অনেকে আটকা পড়ে আছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যদিকে ইতালির ভূমিকম্পের মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৪টায় আরেকটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে মিয়ানমারে। ৬ দশমিক ৮ মাত্রার এ ভূমিকম্পে ৫০০ কিলোমিটার দূরে থাকা ঢাকা, এমনকি আরো দূরের কলকাতা শহরও কেঁপে ওঠে। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ভূপৃষ্ঠ থেকে ৮৪ কিলোমিটার গভীরে থাকায় ক্ষয়ক্ষতি তুলনামূলকভাবে কম হয়েছে। এলাকাটিতে জনবসতিও কম ছিল। এর পরও সেখানে তিনজন নিহত ও কয়েক ডজন মানুষ আহত হয়েছে। বেশ কিছু প্যাগোডাসহ দুই শতাধিক স্থাপনা ভেঙে গেছে। আগের দিন মঙ্গলবারও মিয়ানমারে আরেক দফা ভূমিকম্প হয়েছে। চলতি বছরের এ পর্যন্ত এ এলাকায় বেশ কয়েকটি বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়েছে। ৬ দশমিক ৭ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল গত জানুয়ারি মাসে, উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের মণিপুরের রাজধানী ইম্ফলে। সেখানে পাঁচজন নিহত ও অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছিল। বাংলাদেশেও আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে তিনজন নিহত ও অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছিল। আর দশটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতোই একটি দুর্যোগ ভূমিকম্প। একে রোধ করা যাবে না। অনেক প্রাকৃতিক দুর্যোগ কখন কোথায় আঘাত হানবে তা বলে দেওয়া যায়, ভূমিকম্পে বলা যায় না। এ ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা দিনরাত চেষ্টা করে যাচ্ছেন, এখনো সফলতার হার খুব কম। তাই ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় পস্তুু‘তি রাখার কোনো বিকল্প নেই। সেসব প্রস্তুতির মধ্যে রয়েছে, ঘরবাড়ি ভূমিকম্প-প্রতিরোধী করে গড়ে তোলা, ভূমিকম্প আঘাত হানলে দ্রুত উদ্ধারকাজ চালানোর মতো প্রস্তুতি রাখা এবং ভূমিকম্প থেকে কিভাবে রক্ষা পাওয়া সম্ভব সে ব্যাপারে মানুষকে সচেতন করা। বারবারই দেখা যাচ্ছে, ভূমিকম্পে নয়, আতঙ্কে ছোটাছুটি করতে গিয়ে মানুষ হতাহত হচ্ছে। এই মারাত্মক প্রবণতা দূর করতে হবে। ১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ প্রকাশিত জরিপ অনুযায়ী ভূমিকম্পের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ একটি শহর ঢাকা। বিজ্ঞানীদের মতে, ৭ মাত্রার ভূমিকম্পেও এখানকার ৬০ শতাংশ ঘরবাড়ি ধসে যেতে পারে। তার চেয়ে বেশি হলে তো কথাই নেই। এর বড় কারণ নরম মাটির ওপর যেনতেনভাবে উঁচু ভবন তৈরি। পাইপে গ্যাস সরবরাহ ব্যবস্থা এবং ওপর দিয়ে নেওয়া বিদ্যুতের তার এখানে রীতিমতো ভয়াহতা ঘটাবে। আশঙ্কা করা হয়, ভূমিকম্পে যত মানুষ না মারা যাবে, তার চেয়ে বেশি মানুষ মারা যাবে ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্ট ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে। বড় কোনো ভূমিকম্প ঘটার আগেই এসব ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। আর সে ক্ষেত্রে আশপাশের সাম্প্রতিক ভূমিকম্পগুলোকে একটি সতর্কবার্তা হিসেবে আমরা গ্রহণ করতে পারি।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

সর্বশেষ সংবাদ