সিলেট ১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩১শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |
প্রকাশিত: ৭:৫৫ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২৩
মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞা বনাম চড়ুই পাখির নিদ্রাগল্প।
দেশজুড়ে আলোচনায় মার্কিন ‘ ভিসা নীতি’। ইতোমধ্যে ‘স্যাংশান’ খাওয়া বা নিষেধাজ্ঞায় পড়া ব্যক্তি, প্রতিষ্টান নিয়েও আলোচনা সমালোচনার কমতি নেই। বিশেষ করে ভিসা নিষেধাজ্ঞা প্রাপ্ত ব্যক্তি ও শাসকদলের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের মুখে এমন সব বক্তব্য বিবৃতি শোনা যাচ্ছে যা সাধারণ জনগণের মনে হাস্যরসের সৃস্টি করছে। অনেকে মনে করছেন রাজনৈতিক ‘বালখিল্যতা’।
আমেরিকার ভিসা নিষেধাজ্ঞায় এদেশে সরকার পরিবর্তন হয়ে যাবে। ফ্রি, ফেয়ার, ক্রেডিবল, পার্টিসিপেন্ট ইলেকশন হবে। এমনটা যারা ভাবেন বা আশা করেন তারা অনেকটা ‘হাদারাম’ নির্বোধ। আবার যারা মনে করছেন এবং বলছেন মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞায় আমাদের কিছু যায় আসেনা। এদেরকে জিও পলিটিকেল জ্ঞানহীন ‘বোকারাম’ বা উন্মাদ প্রকৃতির বল্লে অত্যুক্তি হবে বলে আমরা মনে করিনা।
বিশেষ করে শাসকদল আওয়ামীলীগের কতিপয় ব্যক্তিবর্গ ও মন্ত্রিপরিষদের অনেক সদস্যের বক্তব্য শুনে মনে পড়ে চড়–ুই পাখির নিদ্রাগল্প। “ চড়–ই পাখি ঘুমাবার সময় পদযুগল আকাশপানে দিয়ে রাখে। তো তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল নিদ্রাকালে চড়–ই পাখির পিজিক্যাল কন্ডিশন এমন কেন? প্রত্যুত্তরে চড়ুই পাখি জানায়, আকাশ ভেঙ্গে পড়লে তা মোকাবেলার জন্য তার এই শারিরিক কসরত। মানে লাথি দিয়ে আকাশ সরিয়ে ফেলার তীব্র মনোবাসনা নিয়ে চড়ুই পাখি পা উপরের দিকে দিয়ে ঘুমায়।-”
আমাদের শাসকদলের ভাবখানায় মনে হয় তারাও সেই চড়ুই পাখির নিদ্রাস্বপ্নে বিভোর। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশে^র অন্যতম পরাশক্তি। একটি মহাদেশ। বিশ^ নিয়ন্ত্রণই তাদের রাজনীতি। বিশে^র যে ক’টি দেশের শাসক ও জনগণের দেশপ্রেম জাতীয়তাবোধ শক্তিশালী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার শীর্ষ তালিকায়। তৃতীয় বিশে^র জাতি গোস্টী কিংবা শাসকশ্রেণী ১শ‘ বছর পরে যে চিন্তা করে, আমেরিকা তা করে আজ। ঢাকার মিন্টু রোডে বসে মুখের ফুৎকারে সব উড়িয়ে দেবেন জাতি বিধ্বংসী এমন ভাবনা থেকে, কার্যক্রম থেকে সরে আসুন। আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি আন্তর্জাতিকভাবে, ক‚টনৈতিক যোগ্যতায় রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলা করুন। “ ছৈদ আলীর গোয়ার ঘাট্রামি দিয়ে সব হয়না”।
এই রকম ‘গোয়ারঘাট্টা’ টাইপ শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফি কিংবা সাদ্দাম হোসেনের করুণ পরিনতির চিত্রটা এত কম সময়ে ভুলে যাবার কথা নয়।
কেবল শাসকদল আওয়ামীলীগের নেতা নেত্রী নয়। রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্ব পালনকারী, দায়িত্ব থেকে অবসর নেয়া এমনকি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বে থাকা ব্যক্তিবর্গের বক্তব্যও জ্ঞানশূণ্য অনেকটা অর্বাচিন মনে হয়।
সদ্য সাবেক প্রধান বিচারপতির একটি বক্তব্য সোশ্যাল মিডিয়ার কল্যাণে শোনা হলো। তিনি বলেছেন যে, কখনও আমেরিকায় যাননি, ভবিষ্যতেও যাবেন না। তাই ভিসানীতির ভিত্তিতে ভিসা দেয়া কিংবা না দেয়ায় তাঁর কিছু যায় আসে না। দেশ হিসেবে বাংলাদেশও যদি এই বিচারপতির একান্ত ব্যক্তিগত সরল বক্তব্যের অবস্থানে থেকে বলতে পারতো যে, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কোনো লেনদেন কিংবা যোগাযোগ রাখবে না। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ছাড়াও বাংলাদেশের জনগণের জীবনযাপনে কোনো সমস্যা হবে না। তাহলে কোনো কথাই ছিল না। ভারত যেমন কানাডার উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিতে পারছে তেমনি বাংলাদেশও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একই পথ অবলম্বন করলেও করতে পারতো। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন।
বিগত সাত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি কমেছে এক তৃতীয়াংশ ও ইউরোপের বাজারে কমেছে ১৪.৫০ শতাংশ। মঙ্গলবার পোশাক শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ উদ্বেগের কথা জানান বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান।
বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র পারস্পারিক বহুমাত্রিক সম্পর্কে আবদ্ধ। কে কতটুকু কার উপর নির্ভরশীল সেই পরিমাপ করতে গেলে দেখা যাবে আকাশ পাতাল তফাৎ। আজ যদি দু’দেশের কূটনৈতিক লড়াই চুড়ান্ত পর্যায়ে চলে যায় তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের জীবনের উপর এ লড়াইয়ের প্রভাব হবে খুবই সামান্য। অন্যদিকে বাংলাদেশের মানুষ চরম পরিণতি ভোগ করবে। এমনকি এ জনদুর্ভোগ চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের দিকে যদি দেশকে নিয়ে যায় তবুও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
বিষয়টি বুঝতে প্লেটো কিংবা এরিস্টটল হওয়ার দরকার নেই। দরকার কিছু তথ্যের। আপনাকে জানতে হবে গার্মেন্টস রফতানীর কত শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র এবং তার বন্ধু বলয় যুক্তরাজ্য, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় রফতানী করা হয়। বাংলাদেশে তার বৈদেশিক রেমিটেন্সের কত শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে থেকে পায়। এমনকি অফেরতযোগ্য বৈদেশিক সাহায্য কোন দেশ সবচেয়ে বেশি দিয়ে থাকে। উল্লেখিত দেশগুলোতে বাংলাদেশের তৈরী পোষাকের শতকরা আশি শতাংশ রফতানি করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র এককভাবে সৌদি আরবের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক রেমিট্যান্সের উৎস। আর বিশাল অংকের অফেরতযোগ্য অনুদানের হিসাবের ধারে কাছেও নেই অন্য কোনো দেশ। বৈদেশিক বিনিয়োগের কথা না হয় বাদই দিলাম।
বিচারপতির মতো রাষ্ট্রীয় সামরিক, বেসামরিক আমলা এবং রাজনৈতিক কামলা মিলে হয়তো লাখ দু’য়েক পরিবার এই সরকারের সুবিধা নিয়ে বৈধ-অবৈধ সম্পদে ফুলেফেপে টইটুম্বুর হয়ে আছেন যাদের পরিবারে দেশে কী হচ্ছে তার কোনো ছোঁয়া লাগবে না। কিন্তু দেশের ১৮ কোটি মানুষের সম্পদের পরিমান এত বেশি নয়। এমনকি সত্যিকারের সরকারী দলের রাজনৈতিক কর্মীরাও হরিলুটের অংশ হতে পারেনি। লাখ লাখ গার্মেন্টস কর্মী বেকার হলে হয়তো মাননীয় বিচারপতি সস্তায় বাসায় আরও বাড়তি কাজের লোক রাখতে পারবেন। কিন্তু কোটি কোটি মানুষের জীবনমান তলানিতে এসে ঠেকবে। তলানিতে ঠেকা ভূখা মানুষের মিছিল কীভাবে সামাল দিবেন তা কি চিন্তা করেছেন?
তাই রাষ্ট্রের হর্তকর্তাদের এমন ব্যক্তিগত হঠকারী বক্তব্য না দিয়ে বরং প্রধানমন্ত্রীকে বাস্তবভিত্তিক পরামর্শ দেয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রীকেও ব্যক্তিগত মান-অভিমান, রাগ-অনুরাগের বশবর্তী হয়ে বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত নয়।প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র পশ্চিমাদের সঙ্গে ধূর্ত ফাঁকিবাজি কথাবার্তা বন্ধ করে বাস্তবভিত্তিক ডায়ালগ শুরু করা। সেই ডায়ালগে অবশ্যই থাকতে পারে নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার বিষয়টি। বিশেষ করে পরাজিত দলের জান-মালের নিরাপত্তার বিষয়টি। জয়-পরাজয় যা-ই হোক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই এগিয়ে যেতে পারেন একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে ফ্রি-ফেয়ার এন্ড ক্রেডিবল ইলেকশনের দিকে। তাতে যেকোনো একটি পক্ষ নির্বাচনে হারলেও দেশ জিতে যাবে, জিতে যাবে দেশের গণতন্ত্র ও ভবিষ্যত।
নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী হয়তো পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে সেইফ এক্সিটেরই ইঙ্গিত করে বলেছিলেন, এখনও সময় আছে বিপদ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার।
আমরা মনে করি, সবাই ব্যক্তিগত ভিসা পাওয়া না পাওয়ার দিকে না তাকিয়ে দেশের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে কাজ করবেন। আমি ভিসা রেস্ট্রিকশনে পড়ে গেছি এখন আর দেশের কী হলো তা দেখে লাভ নেই- এ নীতি থেকে সরে আসার মধ্যেই সামষ্টিকক কল্যাণ। গণতন্ত্র ও সুশাসনের পক্ষে কাজ করুন। আপাতত কিছুটা আরাম আয়েশে অসুবিধা হলেও আখেরে সবাই লাভবান হবেন। দেশ উপকৃত হবে।
ভুলে গেলে চলবেনা ৫০ পেরুনো এই দেশ। বিশে^র পরাশক্তিকে ভাগে এনে এই দেশ স্বাধীন করেছে। স্বাধীনতা উত্তর ও পরবর্তী সময়ে এদেশে বিশ^ নেতৃত্ব দেয়ার মত ব্যক্তিত্ব এদেশে ছিলেন। স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ^ মোড়লদের কাছে মাথা নত করেননি। সেই নেতার হত্যার পেছনের কারিগর তো আজকের এই পরাশক্তিরা। ঠিক একইভাবে দুনিয়ার শান্তিকামী মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তাঁকেও বাঁচতে দেয়া হয়নি। পেছনে তো ঐ এরাই। দেশের মানুষ কোন নেতৃত্বকে হত্যা করেনি।
উচ্চ প্রযুক্তির এই যুগে যুদ্ধ হয় কম। স্নায়ু যুদ্ধ হয় বেশী। মেধার খেলায় দেশ শাসিত হয়, শোষিত হয়। এখন আর অস্ত্রে খুনের প্রয়োজন হয়না।
আমাদের শাসকদল, জাতীয় নেতৃত্ব এ বাস্তবতা উপলব্ধি করে আগামীর পথে চলবার শক্তি সাহস হিম্মত হোক আজকে কামনা বাসনা আকাঙ্খা এটাই।
সম্পাদক : কবীর আহমদ সোহেল
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ আব্দুল হক
ঢাকা অফিস : ২৩৪/৪ উত্তর গোড়ান, খিলগাঁও, ঢাকা ।
সম্পাদক কর্তৃক প্রগতি প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিঃ, ১৪৯ আরামবাগ, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।
সিলেট অফিস: ২৩০ সুরমা টাওয়ার (৩য় তলা)
ভিআইপি রোড, তালতলা, সিলেট।
মোবাইল-০১৭১২-৫৯৩৬৫৩, ০১৭১২-০৩৩৭১৫
E-mail: provatbela@gmail.com,
কপিরাইট : দৈনিক প্রভাতবেলা.কম
আমাদের সর্ম্পকে গোপনীয়তা যোগাযোগ
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি