সিলেট ১৫ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩১শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |
প্রকাশিত: ৩:৪৫ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৩
কি ঘটতে যাচ্ছে বাংলাদেশে? জাতীয় নির্বাচন কি হবে? কিভাবে হবে? না কি তৃতীয় শক্তি ক্ষমতায় আসছে? রাজনৈতিক সচেতন মহল থেকে সাধারণ মানুষ সবার প্রশ্ন। চা’য়ের স্টল থেকে শুরু করে রাজনীতিকের ড্রয়িং রুমে হর হামেশা কথার উত্তাপ ছড়াচ্ছে এ প্রশ্নগুলো ।
চলতি বছরের (২০২৩ সালের) শেষ সপ্তাহে অথবা ২০২৪ সালের প্রথম দিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্টানের সাংবিধানিক বাধ্য বাধকতা। নির্বাচন কমিশন ও সরকার সে লক্ষ্যেই এগুচ্ছে। সুত্রমতে, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ অথবা ২৪ জানুয়ারী ২০২৪ তারিখ দুটোই সরকারের শীর্ষমহলের পছন্দ। এর যে কোন এক তারিখেই জাতীয় নির্বাচন হবার সম্ভাবনা বেশী।
অপরদিকে বিএনপি জামায়াত সহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্তাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবী জানাচ্ছে। অন্যথায় তারা নির্বাচনে যাবেনা এমনটা জানান দিচ্ছে বারবার। তবে শাসকদল বা নির্বাচন কমিশন তাদের এ দাবীর প্রতি তেমন কোন কর্ণপাত করছে না। আমলে নিচ্ছেনা। আমলে নেয়ার মত কোন আন্দোলন সংগ্রাম বিএনপি জামায়াত বা অন্যান্য দলের দৃশ্যমান নয়।সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ১৫ দিন ব্যাপী ‘আয়ুর্বেদিক’ কর্মসূচী ঘোষণা করেছেন। তিন টার্ম ক্ষমতায় থাকা একটি দলের জন্য বিএনপি’র কর্মসূচী অনেকটা ‘পান্তাভাত’ এর মত।
সমস্যা এখানে নয়। দেশের জন্য, দেশের নাগরিকদের জন্য, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকী হয়ে দাড়াচ্ছে বিদেশী ডিক্টেশন। বিশেষ করে বাংলাদেশের জন্য মার্কিন ভিসা নীতি জাতির জন্য একটি বড় শঙ্কা, বড় অসম্মান। আত্মমর্যাদার প্রশ্নে একটি স্বাধীন জাতির জন্য লজ্জাস্কর বলা যায়।
মার্কিন এই ভিসা নীতি নিয়ে আমাদের একটা পক্ষ আত্মতৃপ্তির ঢেকুরে নাক জালাপালা অবস্থা। আরেক পক্ষ তুচ্ছতাচ্ছিল্যের মাত্রাতিরিক্ত প্রকাশে মনে হচ্ছে বাংলাদেশ ফার্স্ট ওয়ার্ল্ডের ফার্স্ট কান্ট্রি। আত্মতৃপ্তি কিংবা তুচ্ছতাচ্ছিল্য কোনটিই তো এই জাতির জন্য কল্যাণকর নয়।
বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনে কেউ বাধা দিলে তার বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র। নির্বাচনের আট মাস আগে গত ২৪ মে আমেরিকা এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। বাংলাদেশে গণতন্ত্র, সুষ্টু নির্বাচন, মানবাধিকার প্রতিষ্টার জন্য ব্যাকুল আমেরিকা! আমেরিকার এই নিষেধাজ্ঞায় বগল দাবা সাথে আত্মতৃপ্তিতে বিএনপি জামায়াত সহ সরকার বিরোধী অন্যান্য দল। ভাবখানা এমন আমেরিকা হাসিনা সরকার ক্ষমতাচ্যুত করে বিএনপি জামায়াত আর তাদের সমমনাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে।
প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে একটি অবাধ-সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক নির্বাচন দেখার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আকাঙ্খাই কাজ করেছে, নাকি এর পেছনে আরো কোন গভীর ‘কৌশলগত’ হিসেব-নিকেশও আছে? তা ভাববার সময় কি বিএনপি জামায়াত ঘরানার লোকের আছে?বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই নতুন মার্কিন ভিসা নীতি ঘোষণার পেছনে কোন কৌশলগত বিবেচনা কাজ করে থাকতে পারে কিনা? কিছু বিশ্লেষক মনে করেন বাংলাদেশকে ঘিরে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতি ও দৃষ্টিভঙ্গীর যেসব পরিবর্তন হচ্ছে তার মূল লক্ষ্য দেশটিকে চীনের প্রভাববলয়ের বাইরে রাখা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র জানে যে বাংলাদেশে চীন অনেক প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের সাথে ভারতের ঘনিষ্ঠতাও অনেক এবং যুক্তরাষ্ট্র সচেতন যে বাংলাদেশ – দক্ষিণ এশিয়ার আরো অনেক দেশের মতই – ভারত ও চীন উভয়ের সাথেই ভারসাম্য রেখে চলতে চায়। তবে যুক্তরাষ্ট্র এসব দেশের সাথে ভালো সম্পর্ক রাখতে চায় এবং এটাও দেখতে চায় যেন তারা চীনের ওপর খুব বেশি নির্ভরশীল হয়ে না পড়ে।
শুধু কি তাই? মার্কিন মুল্লুক ১শ’ বছর অগ্রিম চিন্তা করে। বিশেষ করে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে। দল , সরকার পরিবর্তন হলেও তাদের নীতি অপরিবর্তিত থেকেই যায়। বাংলাদেশের কক্সবাজার, উখিয়া, টেকনাফ ,সেন্টমার্টিন মায়ানমারের আরাকান রাজ্য ও ভারতের আসাম মিজোরাম প্রদেশ নিয়ে একটি খৃস্টান রাষ্ট্র প্রতিষ্টার সূদুর প্রসারী পরিকল্পনা রয়েছে আমেরিকার। বাংলাদেশে স্যাংশান , ভিসা নীতি বা নতজানু সরকার প্রতিষ্টার প্রাক প্রসতুতি নয় তা হলফ করে বলা যায় না।
সঙ্গত কারণেই শাসকদল আমেরিকার এই ভিসা নীতি বা স্যাংশান নিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার পরিণাম এই জাতির জন্য ভয়াবহ হতে পারে। রাষ্ট্র পরিচালনায় সূদুরপ্রসারী কুটনৈতিক চিন্তা পরিকল্পনা ভিত্তিক কাজ না করলে জাতি বিপদগ্রস্ত হয়। তার নজির পৃথিবীতে বিদ্যমান।
পৃথিবীর কোন দেশে আমেরিকা গণতন্ত্র প্রতিষ্টা করেছে তার বড় কোন দৃষ্টান্ত নেই। উপরুন্তু অগণতান্ত্রিক, একনায়কতান্ত্রিক , দুর্বল মানবাধিকার সম্পন্ন বহু দেশের সাথে আমেরিকার ঘনিষ্ট মিত্রতা রয়েছে।
সুতরাং আমেরিকাকে মাসতুতো ভাই কিংবা রাষ্ট্র মেরামতের কারিগর ভাবার কোন সুযোগ নেই। এটা জাতীয় নেতৃত্বকে অনুধাবন করতে হবে।
কাজেই যারা ভাবছেন আমেরিকা ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। আর যারা মনে করছেন আমেরিকা কিছুই করতে পারবেনা। উভয় চিন্তা ভাবনা জনস্বার্থ পরিপন্থী। পরাশক্তি তার স্বার্থ হাসিলে যেকোন ছোবল মারতে পারে।
আপাতত বাংলাদেশকে ওয়াশিংটন এটা বোঝাতে চাইছে যে তারা কোন বিশেষ কোন রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় দেখতে চায় – এমন ধারণা ঠিক নয়। কারণ বাংলাদেশে এমন একটা ধারণা অনেকের আছে যে যুক্তরাষ্ট্র বর্তমান সরকারের বিরোধী, যেহেতু তারা এ সরকারের অনেক সমালোচনা করেছে। কিন্তু এই নতুন ভিসা নীতিতে এটা পরিষ্কার যে এর আওতায় সরকার ও বিরোধীদল উভয়ের লোকেরাই পড়বেন – যদি তারা অবাধ-সুষ্ঠূ নির্বাচনে বিঘœ সৃষ্টি করেন ।
ফলে এটা হয়তো যুক্তরাষ্ট্র যে একটি নিরপেক্ষ ভূমিকা নিচ্ছে এ ধারণা জোরদার করার জন্যই নেয়া হয়েছে। আমাদের সরকার কিংবা বিরোধী বলয়ে থাকা সকল দল মত ও নেতৃত্বকে বুঝতে হবে অযুত সমস্যায় জর্জরিত এই দেশটা যেন কোন পরাশক্তি শকুনের ছোবলে না পড়ে।
সম্পাদক : কবীর আহমদ সোহেল
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ আব্দুল হক
ঢাকা অফিস : ২৩৪/৪ উত্তর গোড়ান, খিলগাঁও, ঢাকা ।
সম্পাদক কর্তৃক প্রগতি প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিঃ, ১৪৯ আরামবাগ, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।
সিলেট অফিস: ২৩০ সুরমা টাওয়ার (৩য় তলা)
ভিআইপি রোড, তালতলা, সিলেট।
মোবাইল-০১৭১২-৫৯৩৬৫৩, ০১৭১২-০৩৩৭১৫
E-mail: provatbela@gmail.com,
কপিরাইট : দৈনিক প্রভাতবেলা.কম
আমাদের সর্ম্পকে গোপনীয়তা যোগাযোগ
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি