সিলেট ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |
প্রকাশিত: ১০:৩৩ পূর্বাহ্ণ, নভেম্বর ৩০, ২০২৩
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্ষীয়ান কূটনীতিক হেনরি কিসিঞ্জার মারা গেছেন। এ সময় তার বয়স হয়েছিল ১০০ বছর ছয় মাস।
স্থানীয় সময় বুধবার (২৯ নভেম্বর) কানেকটিকাটে নিজ বাড়িতে তিনি মারা যান। খবর সিএনএন।
চলতি বছর ২৭ মে একশ বছর পূর্ণ করেন বর্ষীয়ান এই কূটনীতিক। জার্মান বংশোদ্ভুত মার্কিন নাগরিক বিভিন্ন সময় সেনাসদস্য, গোয়েন্দা কর্মকর্তা, হার্ভার্ড ছাত্র ও কূটনীতিক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।
অনেকের কাছে নন্দিত হলেও কারও কারও কাছে নিন্দিত হয়ে আছেন তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্বরাজনীতিতে শান্তির বার্তার বাহক যুক্তরাষ্ট্র তার নেতৃত্বে ফের সর্বোচ্চ শক্তিধর রাষ্ট্রের প্রভাব বলয় নিয়ে সক্রিয় হয়। কোনো সময় নৈতিক কূটনীতির বাহক হলেও কখনো আবার বিভিন্ন দেশে উসকে দিয়েছেন বৈপ্লবিক সংগ্রাম ও ইন্ধন দিয়েছেন সামরিক জান্তা সরকারকে।
তার কূটনৈতিক কর্মকাণ্ড ও বৈচিত্র্যপূর্ণ জীবনকে একটি প্রবন্ধে প্রকাশ করা প্রায় অসম্ভব। তার কূটনৈতিক কার্যাবলির নথিপত্রের আনুমানিক ওজন ৩০ টন।
জার্মানির শহর নুরেমবার্গের অদূরে জার্মান-ইহুদি মা-বাবার সন্তান হেনরি কিসিঞ্জারের জন্ম ১৯২৩ সালের ২৭ মে। নাৎসি জামার্নির শাসনামলে তাদের শিশুদের সঙ্গে জোরপূর্বক ফুটবল খেলায় অংশ নিতে চাইত না শিশু কিসিঞ্জার। সেই সঙ্গে ইহুদিদের ওপর নাৎসিদের চাপিয়ে দেওয়া বিধিনিষেধের প্রতিবাদ করতেন শিশু বয়স থেকে।
তবে তার মানসিক শক্তি ও কাজের যোগ্যতা প্রকাশিত হয় ত্রিশ দশকের শুরুতে শরণার্থী হয়ে যখন যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। সেখানে একটি নৈশ স্কুলে ভর্তি করা হয় তাকে। দিনের বেলায় শেভিং ব্রাশ তৈরির কারখানায় কাজ করত সে।
এ সময় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘনঘটায় তার উচ্চশিক্ষায় বাধা হয়ে আসে। এ সময় সমরকালীন বিশেষ সেনা হিসেবে কাজে যোগ দেন তিনি। পরে তাকে পদোন্নতি দিয়ে প্রশাসনিক কাজে নিয়ে আসা হয়। এভাবে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি তার অনুরাগ ও আনুগত্য বাড়তে থাকে। নিজেকে মূল আমেরিকান হিসেবে ভাবতে শুরু করেন তিনি।
১৯৬৯ সালে তাকে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়ার পর তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তার উচ্চশিক্ষা এ ক্ষেত্রে তাকে নানানভাবে সহায়তা করে।
কূটনীতিতে কিসিঞ্জারের দূরদর্শিতা এবং অভিনব পন্থা তাকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। পররাষ্ট্রনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো স্থায়ী বন্ধু কিংবা শত্রু নেই। আছে শুধু জাতীয় স্বার্থ। এমন নীতির মাধ্যমে নৈতিক ও আদর্শিক কূটনীতিকে পাশ কাটিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন বাস্তবধর্মী ও জাতীয়তাবাদী পররাষ্ট্রনীতির প্রবর্তক।
উনিশ শতকের বৈশ্বিক রাজনীতি ও নব্য সাম্রাজ্যবাদের চর্চায় তার বাস্তবধর্মী নীতিমালা হয়ে ওঠে মূল দর্পণ।
১৯৭৩ সালে হেনরি কিসিঞ্জারকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়াকে তার নেওয়া অভিনব কূটনীতিক কৌশলের প্রতি রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি হিসেবে দেখছেন অনেকে।
সেই বছরই মধ্যস্থতার মাধ্যমে সংঘাত নিরসনে তার নেওয়া শাটল ডিপ্লোম্যাসি বিশ্বরাজনীতিতে নিয়ে আসে সব নাটকীয় পরিবর্তন ও সূত্রপাত করে নতুন ধারার।
নিক্সন, চৌ এন লাই ও মাও সে তুংয়ের মধ্যে ১৯৭২ সালের ঐতিহাসিক সম্মেলনের ধারাকে আরও এগিয়ে নিতে হেনরি কিসিঞ্জার চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অচল কূটনীতিক সম্পর্ককে পুনরায় চালু করেন। স্নায়ুযুদ্ধের সেই ঐতিহাসিক বিরোধিতাকে নির্মূল করে চীনের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন ও রাশিয়ার সঙ্গে আঁতাত করে ফেলেন। সেই একই সময়ে কিসিঞ্জার চিলিতে সামরিক অভ্যুত্থানে ইন্ধনদাতার ভূমিকা রাখেন।
একই সঙ্গে আরব দেশগুলোর নেতাদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত কূটনৈতিক আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ইসরাইলে বিপুল পরিমাণে সামরিক অস্ত্র ও গোলা সরবরাহ করে। ওই অঞ্চলে শক্তির ভারসাম্য রক্ষায় এমন ব্যবস্থা নিয়েছিলেন তিনি। এর পর কোনো আরব দেশ ইসরাইলে সরাসরি হামলা চালানো থেকে বিরত থাকে।
চিলির সামরিক অভ্যুত্থান, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও পূর্ব তিমুর ও কম্বোডিয়ার বোমা হামলায় হেনরি কিসিঞ্জারের বিতর্কিত সম্পৃক্ততা এখনো বিশ্বরাজনীতিতে তাকে নিন্দিত ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করে।
একাধারে নিন্দিত ও নন্দিত হওয়া এমন একজন বর্ণাঢ্য কূটনীতিকের পক্ষেই সম্ভব। এটা স্পষ্টই বলা যায় তার সময়কালে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নব্য সাম্রাজ্যবাদ ও বলয়কে অনেক বেশি বিস্তৃত করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
সম্পাদক : কবীর আহমদ সোহেল
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ আব্দুল হক
ঢাকা অফিস : ২৩৪/৪ উত্তর গোড়ান, খিলগাঁও, ঢাকা ।
সম্পাদক কর্তৃক প্রগতি প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিঃ, ১৪৯ আরামবাগ, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।
সিলেট অফিস: ২৩০ সুরমা টাওয়ার (৩য় তলা)
ভিআইপি রোড, তালতলা, সিলেট।
মোবাইল-০১৭১২-৫৯৩৬৫৩, ০১৭১২-০৩৩৭১৫
E-mail: provatbela@gmail.com,
কপিরাইট : দৈনিক প্রভাতবেলা.কম
আমাদের সর্ম্পকে গোপনীয়তা যোগাযোগ
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি