হোগলা পাতায় দিন বদলের সংগ্রাম

প্রকাশিত: ৫:১৪ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৮, ২০২৩

হোগলা পাতায় দিন বদলের সংগ্রাম

প্রতিনিধি, ভোলা:

ভোলার লালমোহনের চরভূতা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের নমগ্রাম। এ গ্রামের অন্তত আড়াইশ নারী হোগলা পাতায় নিজেদের ভাগ্য বদলানোর চেষ্টা করছেন প্রতিনিয়ত। বছরের পর বছর ধরে নমগ্রামের নারীরা হোগলা পাতা দিয়ে তৈরি করছেন বিছানা। এ গ্রামের কোনো নারী ১০ বছর, আবার কেউ ৩০ বছর ধরে হোগলা পাতা দিয়ে বিছানা তৈরির সঙ্গে জড়িত।

এসব নারী নিজেদের বাড়িতে বসে তৈরি করেন হোগলা পাতার বিছানা। এসব বিছানা বিক্রির টাকা স্বামীকে দিয়ে সহযোগিতা করেন সংসার চালানোর জন্য।

 

নমগ্রামের ৩৫ বছর বয়সী বিসখা রাণী ও ৩০ বছর বয়সী চায়না রাণী। তারা আপন দুই বোন। বিসখা রাণীর স্বামী সেলুনে কাজ করেন। তাদের সংসারে আছে এক ছেলে ও এক মেয়ে। কেবল স্বামীর আয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হয়, তাই হোগলা পাতার বিছানা বুনে বাড়তি আয়ের পথ খুঁজে নেন বিসখা রাণী। তার ছোট বোন চায়না রাণী। তার বিয়ে হয়েছিল। তবে বিয়ের তিন বছরের মাথায় চায়নাকে ফেলে রেখে চলে যান তার স্বামী। এরপর থেকে বোনের সঙ্গেই বাস করতে শুরু করেন চায়না রাণী। তার রয়েছে এক সন্তান। বেঁচে থাকার তাগিদে চায়নাও জড়ান হোগলা পাতার বিছানা তৈরির সঙ্গে। বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে তারা দুই বোন মিলে তৈরি করছেন বিছানা।

আরও পড়ুন  গণপরিবহণে ধর্ষণ যৌন নির্যাতন

 

বিসখা রাণী ও চায়না রাণী বলেন, প্রতিদিন ৭টা থেকে সকাল ১০টা এবং বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত হোগলা দিয়ে বিছানা বুনার কাজ করি। দুই বোন মিলে দৈনিক আটটির মতো বিছানা তৈরি করতে পারি। প্রতিটি বিছানা বিক্রি করি ৬০ টাকা করে। এসব বিছানা বাড়িতে এসে নিয়ে যান বেপারীরা। হোগলা পাতার তৈরি এসব বিছানা বিক্রির টাকায় কোনো রকমে চলছে আমাদের সংসার।

 

 

নমগ্রামের আরেক নারী রেবা রাণী। তিনি বলেন, আমার স্বামী একজন দিনমজুর। তার একার আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। তাই দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে নিজেই বাড়তি আয়ের জন্য হোগলা পাতার বিছানা তৈরি করতে শুরু করি। এখানের আয়ের টাকা সংসারের পিছনে ব্যয় করি। তবুও সংসারে সচ্ছলতা ফিরছে না। এজন্য সহযোগিতা প্রয়োজন।

 

ঐ গ্রামে অন্যদের মতো হোগলা পাতার বিছানা বানান গীতা রাণী। তিনি বলেন, প্রতি আট শতাংশ জমির হোগলা পাতা কিনতে হয় দুই থেকে আড়াই হাজার টাকা দিয়ে। এরপর সেখান থেকে পাতা কেটে এনে বাড়িতে শুকাই। সেইসব পাতা দিয়ে পরে বিছানা বুনি। একটি বিছানা ৬০ টাকা বিক্রি করতে পারলেও এর পিছনে খরচ হয় ৩০ টাকার মতো। বাকি যে টাকা থাকে তা দিয়ে সংসার চালাতে স্বামীকে সহযোগিতা করি।

আরও পড়ুন  আজাদকে দুদকে তলব

 

গীতা রাণী আরো বলেন, নমগ্রামে আমার মতো অন্তত আড়াইশ নারী হোগলা পাতা দিয়ে বিছানা তৈরি করেন। সবার পরিবারই অসচ্ছল। এজন্য সবাই বছরের পর বছর ধরে এ কাজ করছেন। অনুদান পেলে আমরা আরো বেশি করে হোগলা পাতা কিনে বিছানা তৈরি করতে পারতাম।

 

এ বিষয়ে লালমোহনের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনামিকা নজরুল জানান, দেশের অসহায় জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা চালু রয়েছে। তাই ঐসব নারী যোগাযোগ করলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের চেষ্টা করবো।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

সর্বশেষ সংবাদ