৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও ‘ইমাম’

প্রকাশিত: ৪:৩৯ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১১, ২০২৩

৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও ‘ইমাম’

প্রভাতবেলা ডেস্ক:

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় একটি মসজিদের ইমামের বিরুদ্ধে প্রতারণার মাধ্যমে ৪০ লাখ টাকা নিয়ে উধাও হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় প্রতারণার শিকার লোকজন ইমামের বিচার দাবিতে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়ে মানববন্ধন করেছেন।

 

অভিযুক্ত আতিকুর রহমান নাটোর সদর উপজেলার তেবাড়িয়া গ্রামের মোজাহার আলীর ছেলে। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় ভুয়া পরিচয় দিয়ে মসজিদ-মাদরাসায় অবস্থান করে প্রতারণা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বছরখানেক আগে তেঁতুলিয়া উপজেলার ঐতিহ্যবাহী মালিগছ বামনপাড়া জামে মসজিদের জন্য মসজিদ কমিটি একজন ভালো ইমামের খোঁজ করছিলেন। খবর পেয়ে আতিকুর রহমান আসল পরিচয় গোপন রেখে মসজিদে ইমামের চাকরি নেন। কিছুদিন পর তিনি মসজিদের ইমামতির পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যবসা শুরু করেন। একপর্যায়ে তিনি অতিরিক্ত মুনাফার লোভ দেখিয়ে সহজ-সরল মুসল্লিদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেন। তিনি ওই মসজিদের মুয়াজ্জিনের কাছ থেকেও ধারের নামে টাকা নেন।

 

স্থানীয়দের দাবি, সব মিলিয়ে তিনি এলাকার বিভিন্নজনের কাছ থেকে প্রায় ৪০ লাখ টাকা নিয়েছেন। তবে পাওনা টাকার জন্য তাগাদা দিতে থাকলে তিনি টালবাহানা শুরু করেন। পাওনাদারের চাপের একপর্যায়ে গত ৪ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে পালিয়ে যান। প্রতারণার ঘটনায় রোববার  তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের মালিগছ এলাকার ভুক্তভোগী ২০ পরিবারের সদস্যরা মানববন্ধন করেন।

 

স্থানীয় বাসিন্দা আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আমি তেঁতুলিয়ার মালিগছ বামনপাড়া জামে মসজিদের মুসল্লি। গত বছরের ৩০ জুন জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে আমাদের মসজিদে আতিকুর রহমানকে ইমাম হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। এরপর থেকে তিনি এ এলাকার মানুষের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলেন। ‘মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স’ নামে একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার কথা বলে গোপনে তিনি অনেক মানুষের কাছ থেকে টাকা নেন। কারও কথা কাউকে বলতে নিষেধ করেন। এভাবে তিনি ২০টি পরিবারের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকার মতো হাতিয়ে নেন।

প্রতারণার শিকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ইমাম আতিকুর রহমান মসজিদে দায়িত্ব নেওয়ার পর আমাকে ব্যবসার মাধ্যমে লাভের কথা বলে সহযোগিতা চান। দিনাজপুরের বিরলে ৪২ কিলোমিটার সড়কের ঠিকাদারি কাজের কথা বলে আমার কাছে তিন লাখ টাকা ধার নেন। পরে টাকার কথা বললে তিনি রাতের আঁধারে পালিয়ে যান।

 

শাহিনা বেগম নামে এক নারী বলেন, হুজুর আমার বাসায় ভাড়া থাকতেন। আমার পরিবার থেকে তিনি ২ লাখ ২১ হাজার টাকা নিয়েছেন। রাতের অন্ধকারে তিনি এভাবে পালিয়ে যাবেন ভাবতেও পারিনি। একজন হুজুর সেজে এরকম প্রতারকের কঠিন বিচার চাই।

মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের বলেন, এই ইমাম এমন প্রতারক হবেন, তা আমরা কল্পনাও করিনি। তিনি আমাদের মসজিদের ইমাম হিসেবে বিভিন্ন মাহফিলে ওয়াজ করতেন। আমরা তাকে খুব বিশ্বাস করতাম। বিভিন্ন অজুহাতে তিনি বিভিন্ন জনের কাছে প্রায় ৪০ লাখ হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে গেছেন। পরে জানতে পারি, এর আগে বগুড়ার এক এলাকাতেও তিনি প্রায় কোটি টাকা প্রতারণা করে হাতিয়ে নিয়েছেন। তার বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসনসহ তেঁতুলিয়া থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।

 

তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, ইমামের বিরুদ্ধে প্রতারণা সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত শুরু হয়েছে। পরবর্তীতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ওসি) ফজলে রাব্বী বলেন, এটা একটি বড় ধরনের অপরাধ। আমার কাছে ভুক্তভোগীরা এসেছিলেন, তারা লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। তাদের থানায় লিখিত অভিযোগ করার বিষয় পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

সর্বশেষ সংবাদ