আল্লামা মুজাহিদ উদ্দিন চৌধুরী: এক নক্ষত্রের প্রস্থান

প্রকাশিত: ১০:২৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ১১, ২০২০

আল্লামা মুজাহিদ উদ্দিন চৌধুরী: এক নক্ষত্রের প্রস্থান

সাঈদ চৌধুরী

যুগ সচেতন দায়ী-ইলাল্লাহ, ইউকে ওলামা সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বিলেতে বাংলাদেশী শীর্ষ ওলিয়ে কামেল আল্লামা মুজাহিদ উদ্দিন চৌধুরী (দুবাগী ছাব) ১০ জুলাই  শুক্রবার জুম্মার সময় চলে গেছেন মহান মাবুদের কাছে। ইন্না-লিল্লা-হি ওয়া ইন্না-ইলাইহি রা-জিউ’ন।

৯১ বছর বয়সে লণ্ডনের উইপক্রস হাসপাতালে বার্ধক্য জনিত কারণে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তিকাল করেছেন। মৃত্যুকালে স্ত্রী, ৩ ছেলে, ১ মেয়ে, অসংথ্য মুরিদান ও গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। মরহুমের বড় ছেলে মাওলানা জিল্লুর রহমান চৌধুরী বৃকলেন জামে মসজিদে দীর্ঘদিন ইমাম ছিলেন। মেঝো ছেলে মাওলানা ওলিউর রহমান চৌধুরী নিউক্রস মসজিদের ইমাম। ছোট ছেলে কারী মাহবুবুর রহমান চৌধুরীও ইসলাম প্রচারে সম্পৃক্ত রয়েছেন।

আল্লামা মুজাহিদ উদ্দিন চৌধুরী ছিলেন আধ্যাত্মিক জগতের উজ্জ্বল নক্ষত্র। সমকালীন বহু আলেমের ওস্তাদ। খ্যাতনামা মুফতী ও হাদীস বিশারদ। তাকওয়া ও পরহেজগারী সহ বহুগুণের অধিকারী বিশিষ্ট বুযুর্গ ব্যক্তিত্ব।

শশুর বাড়ির আত্মীয় হিসেবে তাঁর সাথে আমার প্রথম পরিচয়। এরপর ঘনিষ্টতা। ‘এক নজরে হজ্জ ও যিয়ারত’ বইটি যখন তিনি লিখেন, তখন মাসের পর মাস আমরা এক সাথে কাজ করেছি। সময় পেলেই সংবাদ সংস্থা মিডিয়া মহলে তিনি ছুটে আসতেন। এভাবেই আমি তাঁর সান্নিধ্য লাভ করেছি।

মাসলা-মাসায়েল সম্পর্কে বিস্মিত হবার মত প্রগাঢ় জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। যে কোন কঠিন মাসলায় তাঁর দালিলিক সমাধান সর্বদলীয় ওলামায়ে কেরামের কাছে ঐক্যমতে গ্রহণযোগ্য ছিল। তিনি অসংখ্য গ্রন্থ প্রনেতা। মানাসুল মুফতি, আল মাসাইলুন্নাদিরা ও ফাতওয়ায়ে মুজাহিদিয়া বেশ প্রসিদ্ধ গ্রন্থ। ২৩ খানা কিতাব প্রকাশিত হয়েছে। বেশ ক’টি পান্ডুলিপি অপ্রকাশিত রয়েছে।

আরও পড়ুন  নুরুল ভিপি, রাব্বানী জিএস

আল্লামা মুজাহিদ উদ্দিন চৌধুরী লেস্টার দারুস সালাম মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা ও খতিব ছিলেন। প্রায় চার দশক সেখানে তিনি প্রতিদিন আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত দরসে হাদিস তথা ইসলামিক আলোচনা করতেন। প্রতি রবিবারে কোরআন থেকে তাফসীর করতেন। বৃহস্পতিবারে খানকা তথা জিকির ও ইবাদের অনুষ্ঠান ছিল খুবই জনপ্রিয়। তিনি সেখনে লেস্টারের ছাব হিসেবে সমধিক খ্যাত। একটা সময় লেস্টার এলাকাম সাধারণ মুসল্লিগন মাসলা-মাসায়েল বিষয়ে প্রাজ্ঞ হয়ে উঠেছিলেন বলে ব্যাপক জনশ্রুতি রয়েছে।

আল্লামা মুজাহিদ উদ্দিন চৌধুরী মানুষকে শরীয়তের সঠিক দিক নির্দেশনা দিতেন। মানুষের হক আদায় ও আত্মীয়তার বন্ধন সৃষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। কারো বিয়ে-শাদী ভাঙ্গার উপক্রম হলে তিনি সহজেই তাদের মধ্যে মহব্বতের পথ বাতলে দিতেন। এজন্য বহু পরিবার তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ। তিনি ছিলেন সত্যিকারে একজন রাহবার, মর্দে মুজাহিদ এবং নির্লোভ ও নিরহংকার সাদা মনের মানুষ।

সিলেট জেলার বিয়ানী বাজার উপজেলার দুবাগ নিবাসী আল্লামা মুজাহিদ উদ্দিন চৌধুরী ১৯২৯ সালে জন্ম গ্রহন করেন। শিক্ষা জীবনে তিনি দাখিল থেকে ফাজিল সকল স্তরে প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হয়েছেন। আলেম পরীক্ষায় মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে সম্মিলিত মেধা তালিকায় স্টার বৃত্তি পেয়েছেন। তিনি গাছবাড়ি আলিয়া মাদ্রাসা থেকে ফাজিল ও সিলেট সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কামিল কৃতিত্বের সাথে পাশ করেন। ১৯৬১ সালে কামিল ক্লাসে অধ্যয়ন কালে তিনি সিলেট জামে মসজিদের ইমাম ছিলেন।

আরও পড়ুন  ভেস্তে গেল 'বেস্ট-ই'!

আল্লামা মুজাহিদ উদ্দিন চৌধুরী সাত কিরাআতের ক্বারী ছিলেন। তিনি বাংলা, উর্দু ও আরবিতে অনর্গল বক্তৃতা দিতেন।

কর্মজীবনে আল্লামা মুজাহিদ উদ্দিন চৌধুরী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি সিলেট সৎপুর দারুল হাদীস কামিল মাদরাসা ও শ্রীমঙ্গল আনোয়ারুল উলুম মাদ্রাসায় সুনামখ্যাত শিক্ষক ছিলেন। ১৯৭৮ সালে লন্ডন চলে আসেন।

আল্লামা মুজাহিদ উদ্দিন চৌধুরী (দুবাগী ছাব) শত শত মানুষকে আলোর পথে নিয়ে এসেছেন। তাঁর মৃত্যুতে আমরা বিলেতবাসী একজন শীর্ষ আলেমে দ্বীনকে হারিয়েছি। তাঁর অবর্তমানে দ্বীনী অঙ্গনে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা পূরণের জন্য আল্লাহ তা‘আলা তাঁর যোগ্য উত্তরসূরী তৈরী করে দিন।

মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি। আল্লাহ যেন তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করেন। আমীন।

সাঈদ চৌধুরী, বৃটেন প্রবাসী সাংবাদিক।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

সর্বশেষ সংবাদ