রেডিয়াম রেটিনার কোটি টাকার বাণিজ্য

প্রকাশিত: ১২:৫৭ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৮, ২০১৬

প্রভাতবেলা প্রতিবেদক : সিলেটে রেডিয়াম রেটিনার বাণিজ্য জমজমাট। সারাদেশে হোচট খেলেও সিলেটে ব্যবসায় কোন ভাটা পড়েনি। তবে পরিচালকরা বলছেন টার্গেট পুরণ হয়নি। কোচিং দুটির নেপথ্য নিয়ন্ত্রক ইসলামী ছাত্রশিবির। সরাসরি তত্তাবধান করে ‘বিশেষ ট্রেনিং প্রাপ্তরা”। রেডিয়ামের তত্তাবধান করে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থরী। রেটিনা চালায় ওসমানি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। গোপন এবং প্রকাশ্য দুটি হিসেব আছে এই কোচিং পরিচালকদের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টার্গেট ছিল এক কোটি টাকা। হবে ৮৫ থেকে ৯০ লাখ। এটা তাদের প্রকাশ্য হিসাব। গোপন হিসেবের পরিসংখ্যান ২ কোটির ওপরে।
প্রশ্ন হচ্ছে, বিশাল এ আয় যায় কোথায়? প্রভাতবেলার অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে নানান লোমহর্ষক তথ্য। শিবিরের প্রাক্তন এক নেতা বলেছেন(যিনি কোচিংয়ের সাথে জড়িত ছিলেন) রেডিয়াম নিয়ন্ত্রনের বাইরে। শাবির উগ্রপন্থী কিছু শিবির নেতা এটার নিয়ন্ত্রক। খরচ বাদে অর্ধেক মুনাফা উর্ধস্থন সংগঠনকে দেয়ার কথা থাকলেও এরা দেয়না। রেডিয়াম পরিচালকদের অধিকাংশ অসিলেটি। তাদের আচার আচরণ চলাফেরা শিবিরের মেজাজের সাথে মেলেনা। তাদের যে ‘জঙ্গিবাদ’ কানেকশান নেই তা হলফ করে বলা যাবেনা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, রেডিয়াম কোচিংয়ে ২০ টি ব্যাচ পরিচালিত হয়। প্রতি ব্যাচে ৩৫ থেকে ৪০ জন শিক্ষার্থী থাকে। প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নেয়া হয় ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা। এই হিসেবে ২০ ব্যাচে শিক্ষাথী সংখ্যা ৮০০ জন। ৮শ শিক্ষার্থী ১০ হাজার টাকা করে ফি দিলে টাকার পরিমান দাড়ায় ৮০ লাখ টাকা।
অপরদিকে মেডিকেল কোচিং রেটিনা পরিচলনা করে ওসমানী মেডিকেলের অসিলেটি শিক্ষার্থীরা। শিবিরের অনেকেই তাদের মতিগতি বুঝেনা। রেটিনায় ব্যাচ ১০ থেকে ১২ টি। প্রতিটি ব্যাচে ৫০ থেকে ৫৫ জন শিক্ষার্থী থাকে। প্রতি ইংরেজী মাধ্যম শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নয়া হয় ১৭ হাজার থেকে ২০ হাজার টাকা। আর বাংলা মাধ্যমের শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নেয় ১২হাজার টাকা। ১০টি ব্যাচের ৫০ জন শিক্ষার্থীর হিসেব গড়ে ১৫ হাজার টাকা করে কসলে তা দাড়ায় ৭৫ লক্ষ টাকা। রেডিয়াম রেটিনা মিলে আয় ১ কোটি ৫৫ লক্ষ টাকা। এই বিশাল আয় যায় কাদের পকেটে?
এসব কোচিংয়ে বিভিন্ন সময়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসব সেন্টারে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার পাশাপাশি ‘জিহাদী’ বই সরবরাহ করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহনেণের জন্য বলা হয়।
এদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পাওয়া মেধাবী শিক্ষার্থীদের শিবিরের কর্মী বানাতে কোচিংয়ে পার্টটাইম ক্লাস নেয়ার সুযোগসহ বিভিন্ন কাজে তাদের ব্যবহার করা হয়। সংগঠন টিকিয়ে রাখা এবং কর্মী সমর্থক বাড়ানোর লক্ষ্যে ছাত্রশিবির এ কোচিং ব্যবসা চালিয়ে আসছে বছরের পর বছর।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা যায়, এসব কোচিং সেন্টারের মাধ্যমে কর্মীদের বিভিন্ন সরকারি মেডিকেলে ভর্তির লক্ষ্যে ১৯৮০ সালে রেটিনা কোচিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করে।
সাম্প্রতিক সময়ে সারাদেশে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে শিবির নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠান গুটিয়ে নিলেও সিলেটের চিত্র ভিন্ন। নগরীর আম্বরখানা ওয়েভস্ ৯৮ নং বাসায় কোচিং বাণিজ্যের আড়ালে চলে রেডিয়ামের ‘বিশেষ তৎপরতা’। চৌহাট্রা নিলয়-৩ এর তৃতীয় তলায় রেটিনা কোচিং চালায়। এখান থেকে টার্গেটকৃতদের ওসমানী মেডিকেল কলেজের শামসুদ্দিন ছাত্রাবাসে নিয়ে দেয়া হয় বিশেষ প্রশিক্ষণ। এছাড়া শাহজালাল জামেয়া মীরাবাজার ও শাহজালাল জামেয়া পাটানটুলায় বাছাইকৃতদের প্রশিক্ষন দেয়া হয়। যা তার সহপাঠিও জানতে পারেনা।
অনুসন্ধানে প্রাপ্ত তথ্যমতে, অত্যন্ত কৌশলে রেডিয়াম রেটিনার অর্থ খরচ করা হয়। বিভিন্ন ধাপে পরিচালিত এই বাণিজ্য এক ধাপ আরেক ধাপের খবর বলতে পারেনা। সুত্রমতে, উত্তরবঙ্গে বিশেষ প্রশিক্ষেেণ অর্থ পাঠান সংগঠনের দায়িত্বশীলরা।
এ প্রসংগে জানতে মহানগর শিবির সভাপতি, মাসুক আহমদের বিশেষ মোবাইলে কল করলে অজ্ঞাত স্থান থেকে তিনি জানান, ‘এগুলো চালায় মেডিকেল ও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির। আমি জেনে আপনাকে জানাচ্ছি।’ এই বলে ৩ দিন অতিক্রান্ত। কিছুই জানাননি মাসুক। সম্ভবত এই সিমও পাল্টে ফেলেছেন মাসুক। (পর্ব-১)
জঙ্গিবাদের অর্থের উৎস খুঁজছে সরকার। অথচ নাকের ডগায় জঙ্গিবাদের বাণিজ্য চলছে। সুত্র বলছে, ‘পুলিশকে ম্যানেজ’ করে এ বাণিজ্য চলছে। এ প্রসংগ এসএমপি’র কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সোহেল আহমদ প্রভাতবেলাকে জানান,‘‘ রেডিয়াম রেটিনা সহ শিবিরের সব প্রতিষ্ঠান আমাদের নজরদারীতে আছে, অভিযোগ পেলে অভিযান চালাব’।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

সর্বশেষ সংবাদ