নতুন সময়ে প্রয়োজন ধৈর্য্য পরমতসহিষ্ণুতা

প্রকাশিত: ৪:৫২ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২, ২০২৪

নতুন সময়ে প্রয়োজন ধৈর্য্য পরমতসহিষ্ণুতা

নতুন সময়ে প্রয়োজন ধৈর্য্য পরমতসহিষ্ণুতা

আওয়ামী দু:শাসনের কবলমুক্ত বাংলাদেশে চলছে এক ধরণের অস্থিরতা। সাধারণ মানুষ, রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন পেশাজীবি মহলে এই অস্থিরতার বাতাস বইছে। দেড়যুগের দু:শাসনে জর্জরিত দেশ মেরামতই নতুন সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ। এর মাঝে দেশজুড়ে বন্যার ভয়াল থাবা। সরকার যখন অতীব জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো অগ্রাধিকার দিয়ে কাজ করছে তখনি মহল বিশেষের অস্থিরতা আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলছে।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বর্তমান সময়ে বাংলাদেশের বৃহত্তর রাজনৈতিক দল বিএনপি। সঙ্গত কারণেই দায়িত্বশীল ভ‚মিকা এই দলটির নেতাকর্মীরই রাখার কথা। কিন্তু বাস্তবতা একটু ভিন্ন। দলের হাই কমান্ড থেকে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মী যেন অস্থির হয়ে উঠছেন। দেশজুড়ে তাদের ‘খাই খাই’ ভাব- জনমনে বিরুপ প্রভাব পড়ছে। দলটি কাগজে কলমে গণমাধ্যমে বারবার জানান দিচ্ছে কোন অপকর্মের সাথে সম্পৃক্ত হলেই ‘বহিস্কার’ কিন্তু কে শুনে কার কথা? দলটির মহাসচিবও যেন খেই হারিয়ে ফেলছেন। দ্রæত নির্বাচন দাবী করছেন। নতুন সরকার ক্ষমতায় আসার মাস পেরুলো না। প্রাকৃতিক দুর্যোগে দেশ। বিপ্লব উত্তর দেশে পরাজিত শক্তির অব্যাহত ষড়যন্ত্র। এরই মধ্যে দ্রæত নির্বাচন দাবী নতুন সরকারকে বিব্রত করার জন্য নয় তো? এ প্রশ্ন উড়িয়ে দেয়া যায় না।

শুধু কী বিএনপি? হঠাৎ করে আনসার বাহিনী আন্দোলনে নেমে পড়লো। প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরের সামনে, সচিবালয়ের সামনে ঘেরাও অবরোধ। উদ্ভট কিছু দাবী দাওয়া। আবারো ছাত্রজনতার শক্ত প্রতিরোধ। রাস্তা ছেড়ে পালাতে বাধ্য হলো আনসার নামধারী পরাজিত স্বৈরাচারী সরকারের পেটুয়া বাহিনী। নতুন সরকারকে বেকায়দায় ফেলার হীন মানসিকতায় ছাত্রলীগ যুবলীগ আনসারের পোশাক পরে মাঠে নেমে এ তান্ডব চালিয়েছিল গত সপ্তাহজুড়ে।

আরও পড়ুন  করোনা উপসর্গ নিয়ে সিলেটে এক ব্যক্তির মৃত্যু

এমনিভাবে শিক্ষকদের দাবী দাওয়া, ইবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকদের দাবী, নার্সদের দাবী নিয়ে আন্দোলন যে মহৎ উদ্যেশে নয়। তা দিবালোকের মত স্পস্ট। যে যেখান থেকে পারছেন দাবী নিয়ে মাঠ গরম করছেন। স্বভাবতই প্রশ্ন আসে এসব দাবী দাওয়া এতদিন কোথায় ছিল। আন্দোলনকারীরা কোথায় ছিলেন? নতুন সরকার গদিতে বসবার সাথে সাথেই এত আন্দোলন?

আমরা মনে করি দেড় দশকের পুঞ্জিভুত পাওয়া, না পাওয়া ব্যথা বেদনা প্রত্যাশা প্রাপ্তির হিস্যা আদায়ের সময় এখনই নয়। সব দাবীর জন্য রাজপথে আন্দোলন নয়। নিয়মতান্ত্রিক পন্থায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সমস্যার কথা জানান। যৌক্তিক সময়ে সমাধান না হলে পরে আন্দোলন সংগ্রাম।
দেশ মেরামতে আমাদের সবাইকে শামিল হতে হবে। ১৫ বছর আমরা বঞ্চিত ছিলাম আরো ১৫ মাস দেখিনা কি হয়। অস্থির হবার কিছু নেই। হারাবার কিছু নেই। এদেশ হারিয়ে যাবেনা। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পতন থেকে কী এ আত্মবিশ^াস জন্মায় নি?

আরও পড়ুন  সিলেটের পথে পথে পুলিশ-সেনা

আমাদের বুঝতে হবে, এই সরকার কোন স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার সরকার নয়। বিশেষ পরিস্থিতিতে বিশেষ ব্যবস্থায় এই সরকার। একটা বিপ্লবের পর যাঁরা ক্ষমতায় আসেন তাদের অনেক সমস্যা থাকে। বিপ্লবে পরাজিত শক্তি প্রতি বিপ্লবের চক্রান্ত করে। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এখন পরাজিত শক্তি। প্রতিবেশী ভারত তাদের আশ্রয় প্রশ্রয় দিচ্ছে। বিগত দেড় দশক ক্ষমতাকে পুতুলের মত ব্যবহারকারী শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের ছোট করে দেখবার কোন সুযোগ নেই।

আমরা কেবলি ক্ষমতার পালাবদল চাইনা। চাই সামাজিক ন্যায়বিচার, আইনের শাসন, দুর্নীতিমুক্ত, ন্যায্য অধিকারের ইনসাফপূর্ণ একটি বাংলাদেশ। এমন বাংলাদেশ গড়তে রাষ্ট্রের মেরামত প্রয়োজন। অতীব জরুরী মেরামত শেষে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে হোক নির্বাচন। জনগণ তার নেতৃত্ব নির্বাচন করুক। ততক্ষণ পর্যন্ত ধৈর্য্য, পরমতসহিষ্ণুতা নিয়ে সবাই কাজ করা দরকার।

আমরা আশা করি রাজনৈতিক , সামাজিক, পেশাজীবি দল মত সহ সবশ্রেণীর নাগরিক এই বাস্তবতায় ঐকমত্য পোষণ করবেন। প্রাণের বাংলাদেশ, সত্যিকার সোনার বাংলাদেশে পরিণত হোক। এ কামনা প্রত্যাশা আমাদের।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

সর্বশেষ সংবাদ