সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দুটি জায়গা প্রস্তাব

প্রকাশিত: ১০:১২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৮, ২০২৫

সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দুটি জায়গা প্রস্তাব

সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য দুটি জায়গা প্রস্তাব

প্রতিনিধি, সুনামগঞ্জ ♦সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য পৃথক পৃথক মৌজায় দুটি প্রস্তাবিত ভূমির কথা উল্লেখ করে সোমবার স্মারকলিপি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় (সুবিপ্রবির) স্থায়ী ক্যাম্পাস বাস্তবায়ন আন্দোলন, সুনামগঞ্জ। রাত আটটায় জেলা প্রশাসকের ঐতিহ্য জাদুঘর দপ্তরে জেলা প্রশাসকের কাছে নাগরিকদের পক্ষ থেকে এই স্মারকলিপি হস্তান্তর করা হয়।

স্মারকলিপিতে তারা উল্লেখ করেছেন, সুনামগঞ্জে একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন আছে। এ লক্ষ্যে ‘সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০২০ (২০২০ সনের ২৩ নং আইন) প্রণয়ন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্থায়ীভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। উপযুক্ত আইনের ৩ (১) ধারায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের স্থান হিসাবে ‘দেখার হাওর পাড়’ উল্লেখ আছে। শুরু থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থান নিয়ে জেলাবাসীর প্রবল আপত্তি বলবৎ ছিলো। তৎকালে এ নিয়ে বিভিন্ন আকারে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। জেলাবাসীর দাবি ছিলো উচ্চশিক্ষার এই প্রতিষ্ঠানটি জেলা সদরের নিকটবর্তী কোনো অঞ্চলে স্থাপন করা হোক।
পরিবর্তীত পরিস্থিতিতে জেলাবাসী মনে করছেন, জেলা সদরের বাসিন্দাসহ জেলার অন্য অন্য উপজেলার বাসিন্দারা বিগত সময়ে যে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন তা নিরসন করবেন, গণ—আন্দোলনের পর প্রতিষ্ঠা পাওয়া বিপ্লবী সরকারের দায়িত্বশীলরা। সেই লক্ষ্যে সুনামগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য বিনামূল্যে পাওয়া যাবে এমন দুটি জমির প্রস্তাব করেছেন তারা।
এর একটি হচ্ছে, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার রতনশ্রী মৌজার ১৪ নম্বর জেলের ১৪৫০১ নম্বর দাগের ৫৪৪ একর ০৬ শতাংশ (লায়েক পতিত রকম ভূমি), একই দাগে ৫৪৪ শতক ০৬ শতাংশ (লায়েক জঙ্গল রকম ভূমি), ২৫৬৩ দাগে ৩৩৪ একর ৫৪ শতাংশ ভূমি (লায়েক পতিত রকম ভূমি)। এই জমির মালিক বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসক, সুনামগঞ্জ। এই মৌজার বিভিন্ন দাগে আরও বহু খাস জায়গা রয়েছে বলেও স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয়।
আরেকটি প্রস্তাব করা হয়েছে, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার রসুলপুর মৌজার ৮২ নম্বর জেল’এর ৮২৬৩, ৬৪, ৮০, ৮৩,৮৬,৮৭,৮৯,৯০,৯৩,৯৪,৯৫,১০০,১২৩,১২৮,১৩৮, ১৪০,১৬৪ ও ১৭২ দাগে। ওখানে মোট জমি ৯৬ একর ৬৩ শতাংশ, যার মালিক বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে জেলা প্রশাসক, সুনামগঞ্জ।
স্মারকলিপিতে স্বাক্ষর করেন, বিশ্ববিদ্যালয় (সুবিপ্রবির) স্থায়ী ক্যাম্পাস বাস্তবায়ন আন্দোলন, সুনামগঞ্জ’এর আহ্বায়ক বিশিষ্ট আইনজীবী হুমায়ূন মঞ্জুর চৌধুরী, যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাড. রবিউল লেইস রোকেস, যুগ্ম আহ্বায়ক প্রফেসর সৈয়দ মহিবুল ইসলাম ও সদস্য সচিব সাবেক ছাত্রনেতা মুনাজ্জির হোসেন সুজন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অ্যাড. মল্লিক মঈনুদ্দিন সোহেল পিপি, জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি, বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আকবর আলী, আতম মিসবাহ্, রেজাউল হক, তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুল হক, লেখক ও আইনজীবী সুখেন্দু সেন, রাজনীতিবিদ জুনেদ আহমদ, অ্যাড. এনাম আহমদ, মোর্শেদ আলম, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা আহ্বায়ক ইমনুদ্দোজাসহ শতাধিক বিশিষ্ট নাগরিক।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী নিজের সরকারি পদের অপব্যবহার করে সমস্ত বড় বড় উন্নয়ন কার্যক্রম তাঁর নিজ উপজেলা ও বাড়ির নিকটবর্তী শান্তিগঞ্জ উপজেলা সদরের কাছাকাছি নিয়ে যান। উপেক্ষা করা হয় জেলা সদরসহ অপর ১০ টি উপজেলাকে। একটি উপজেলার ছোট্ট একটি অঞ্চলে বড় বড় প্রতিষ্ঠান স্থাপনের বিষয়টি জেলাবাসীকে বৈষম্যবোধে তাড়িত করেছে। এখন যেহেতু সব ধরনের বৈষম্যের অবলোপন ঘটিয়ে সুষম উন্নয়নের অঙ্গীকার নিয়ে অন্তবর্তীকালীন সরকার দেশ শাসন করছে তখন সকলের মনে এই আশাবাদ সঞ্চারিত হয়েছে যে, এখন বঞ্চনা ও অবহেলার হাত থেকে জেলাবাসী রক্ষা পাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য প্রস্তাবিত বা নির্ধারিত দেখার হাওরটি অত্র জেলার একটি সুবিশাল হাওর। এই হাওর সদর, শান্তিগঞ্জ ও ছাতক উপজেলার বিশাল এলাকা নিয়ে বিস্তৃত। এই হাওরে উৎপাদিত হয় বিপুল পরিমাণ বোরো ধান। এই হাওর মিঠা পানির মাছের বড় উৎস। দেখার হাওরে সুবিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনাদি নির্মিত হলে হাওরের প্রাকৃতিক পরিবেশ বিনষ্ট হয়ে কৃষিজ উৎপাদন ব্যবস্থায় সাংঘাতিক বিরূপ প্রভাব পড়বে। বিশাল হাওরটি জায়গায় জায়গায় জলাবদ্ধতার শিকার যেমন হবে, তেমনি কিছু অঞ্চলে পানি নিষ্কাশনের তীব্র সংকট দেখা দিবে। একারণে ধান ও মাছ উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাসপ্রাপ্তি ঘটবে। কৃষি জমির চরিত্র অপরিবর্তিত রাখা ও হাওরের কোনো ক্ষতি না করা সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। দেখার হাওরে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হলে সরকারের এই লক্ষ্য বাধাগ্রস্ত হবে। এছাড়া সুনামগঞ্জ—সিলেট সড়কটি দেখার হাওরের পাশ ঘেঁষেই অবস্থিত। এই সড়কের পাশে ইতোমধ্যে স্থাপিত হয়েছে মেডিক্যাল কলেজ, টেক্সটাইল ইনস্টিটিউটসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। এখন এই সড়কের পাশে নতুন করে সুবিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নির্মিত হলে একটি ছোট এলাকার উপর জনসংখ্যার চাপ বাড়বে। সুনামগঞ্জ—সিলেট সড়কটি নানা মাত্রায় নেতিবাচক প্রভাবের সম্মুখীন হবে। তাই বিশিষ্টজন ও বিশেষজ্ঞরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস দেখার হাওরের পরিবর্তে অন্যত্র, প্রধানত জেলা শহরের সন্নিকটে স্থাপন করার পক্ষে মত ব্যক্ত করেছেন।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, গত ২২ জানুয়ারি জেলার শহিদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরিতে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় সুনামগঞ্জের সর্বস্তরের মানুষ সুবিপ্রবি’র ক্যাম্পাস সুনামগঞ্জ শহর সন্নিকটে স্থাপন করার বিষয়ে দৃঢ় সমর্থন প্রকাশ করেন। ওই মতবিনিময় সভায় সম্ভাব্য স্থান হিসাবে দুইটি পৃথক জায়গার উল্লেখ করা হয়। সবচাইতে ভালো খবর এই যে, প্রস্তাবিত এই দুই জায়গায়ই রয়েছে সরকারের বিপুল পরিমাণ খাস জমি। ফলে দেখার হাওরে ২০০ একর জমি অধিগ্রহণের বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ সাশ্রয় হবে এই দুই স্থানের যেকোনো একটিতে বিশ^বিদ্যালয় স্থাপন করা হলে।
প্রস্তাবিত ১ নং জায়গাটিতে বিপুল পরিমাণ খাস জমি আছে এবং এটি সুনামগঞ্জ—বিশ্বম্ভরপুর—তাহিরপুর সড়কের গৌরারং ইউনিয়নের পাশে এবং জায়গাটি জেলা শহরের নিকটবর্তী। এই জায়গাটি শাল্লা, দিরাই, শান্তিগঞ্জ, জগন্নাথপুর, সদর, বিশ্বম্ভরপুর, ছাতক, দোয়ারাবাজার, জামালগঞ্জ, তাহিরপুর, মধ্যনগর ও ধর্মপাশাসহ সমগ্র জেলার জন্য সুবিধাজনক ও সহজগম্য একটি স্থান। প্রস্তাবিত ২ নং জায়গাটি জেলা শহরের একেবারে নিকটবর্তী এবং এখানে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করা হলে মৃতপ্রায় সুনামগঞ্জ জেলা শহরের বহুমুখী উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ ঘটবে। ২ নং স্থানে বিশ^বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য আরও জায়গার প্রয়োজন হলে অধিগ্রহণের সুযোগ আছে। এই জায়গাটিও সমগ্র জেলার জন্য সুগম একটি অঞ্চল। উভয় স্থানে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হলে কৃষিজ উৎপাদন ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কম।
এই অবস্থায় সুনামগঞ্জ জেলার সর্বস্তরের মানুষের দাবি বিবেচনায় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ববর্তী স্থান দেখার হাওর পরিবর্তন করে প্রস্তাবিত দুইটি স্থানের যেকোনো একটিতে নির্ধারণের লক্ষ্যে আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধন ও নতুন করে জায়গা নির্ধারণ ও অধিগ্রহণের বিধিগত প্রক্রিয়া অগ্রসর করার জন্য জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করা হয়।
স্মারকলিপি প্রদানকালে নাগরিকদের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাস সুনামগঞ্জ জেলা শহরে শুরু করার অনুরোধ জানিয়ে বলা হয়, সুনামগঞ্জ থেকে দেশের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী একমাত্র মহাসড়ক সোমবারও প্রায় দুইঘণ্টা অবরোধ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বাস শ্রমিকদের মধ্যে কথা কাটাকাটির জের ধরে এই অবস্থা তৈরি হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের স্থান নাগরিকদের মতামতের ভিত্তিতে হলে, এরকম পরিস্থিতির উদ্ভব হবে না বলেও জানান নাগরিকগণ।
স্মারকলিপির অনুলিপি প্রধান উপদেষ্টা, শিক্ষা মন্ত্রণালয় উপদেষ্টা, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ও সিলেটের বিভাগীয় কমিশনা কে প্রদান করা হয়।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

সর্বশেষ সংবাদ