সুশিক্ষার শিকড় পরিবার

প্রকাশিত: ৪:৫৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২১, ২০২১

সুশিক্ষার শিকড় পরিবার

রনি রংদী:

বরিশাল থেকে লঞ্চে করে রাতে ঢাকায় ফিরছিলাম। রাতটিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য লঞ্চের ছাদে বসে মুক্ত বাতাসে বন্ধুর সঙ্গে গল্প করছিলাম। হঠাৎ প্রত্যক্ষ করলাম একটি মেয়ে অনেকগুলো ছেলের সঙ্গে একসঙ্গে বসে ধূমপান করছে এবং অবাধে ছেলেদের সঙ্গে মেলামেশা করছে ও অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করছে। কিছুক্ষণ পর মেয়েটির মা তার খোঁজে আসে। তাকে এই অবস্থায় দেখতে পেয়ে যা বলল তার সারমর্ম হলো মেয়েটিকে তার মা তাদের সঙ্গে থাকার জন্য, তাদের সঙ্গ দেয়ার জন্য বিশেষ করে তাদের সঙ্গে তার দাদি আছেন, তাকে দেখাশোনা করতে এনেছিলেন। কিন্তু মেয়ের এই কীর্তি দেখে মা সবার সামনে লজ্জিত হলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো মেয়েটির কোন অপরাধবোধ হলো না বরং অশ্রাব্য ভাষায় নিজের জন্মদাত্রী জননীকে জনসম্মুখে গালিগালাজ করে সেখান থেকে তাড়িয়ে দিল। আর তার মা এই অপমান সহ্য করতে না পেরে চোখের জল ফেলতে ফেলতে চলে গেল।

আরও পড়ুন  হাজার বছরের ঐতিহ্য ‘পালকি’

একাডেমিক শিক্ষায় বছরের পর বছর পাস করে যাচ্ছে, ভাল রেজাল্টও করছে। কিন্তু প্রকৃত মানুষ হওয়ার শিক্ষায় তার ফলাফল শূন্য। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখানো হচ্ছে বড়দের সম্মান করবে, ছোটদের স্নেহ করবে, পিতা-মাতাকে সমাদর করবে। এমনকি পরীক্ষার খাতায় লিখে ভাল নম্বর পেয়েও পাস করছে। কিন্তু বাস্তব জীবনের চিত্র ঠিক উল্টো। বড়দের বয়স্ক বা ব্যাকডেটেড বলে অবহেলা করছে আর মা-বাবাকে পরিবারের বোঝা মনে করে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসছে। এ ধরনের মানুষকে শিক্ষিত বললে অপমান করা হয় শিক্ষা বা জ্ঞানকে। তাই এমন শিক্ষায় আমরা কেউ যেন শিক্ষিত না হই। শিক্ষিত হই মানব চরিত্র গঠনে, সুন্দর স্বভাব গঠনে এবং যে শিক্ষা ‘মানুষ’ নামের সার্থক পরিচয় বহন করে।

জীবনে সফলতার চূড়ান্ত গন্তব্যে পৌঁছতে একাডেমিক শিক্ষার পাশাপাশি সুন্দর চরিত্র, সুন্দর ব্যবহার সফলতার মই হিসেবে ভূমিকা পালন করে। এ বিষয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে পারিবারিক ও ধর্মীয় শিক্ষা। পৃথিবীর সব ধর্মই সুন্দর মানব চরিত্র গঠনের জন্য শিক্ষা দিয়ে থাকে। সত্য, সুন্দর ও ন্যায্যতার গুণে গুণান্বিত হতে শিক্ষা দেয়। আর ধর্মমুখী হওয়ার এই শিক্ষা আসে পরিবার হতে। পরিবার হচ্ছে নৈতিক শিক্ষাদানের মাধ্যমে মানব চরিত্র গঠনের শিকড়।

আরও পড়ুন  ‘ এই মসজিদে তাঁর হাজারো স্মৃতি রয়েছে’

একটি বৃক্ষ যেমন শিকড়ের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় খাদ্যোপাদান গ্রহণ করে পরিপুষ্টভাবে বৃদ্ধি লাভ করে। তেমনি শিশু পরিবার হতে সামাজিক আদব-কায়দা শিখে। একটি পরিবারের অভিভাবকগণ যখন সুন্দর আচরণ তাদের দৈনন্দিন জীবনে চর্চা করে, এটি শিখেই বড় হয় সন্তানরা। এভাবে তারা মানুষ হতে শিখে। তাই শুধু তাত্ত্বিক নৈতিক শিক্ষা নয়, দৈনন্দিন জীবনে এর বাস্তব প্রয়োগই হোক সন্তানের প্রকৃত সুশিক্ষা।

রনি রংদী: কলমাকান্দা, নেত্রকোনা

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

সর্বশেষ সংবাদ