নিউইয়র্কেে ভয়াবহ ঝুঁকিতে পুলিশ, শতাধিক বাংলাদেশীসহ আক্রান্ত ৫ হাজার

প্রকাশিত: ৫:২৩ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২৬, ২০২০

নিউইয়র্কেে ভয়াবহ ঝুঁকিতে পুলিশ, শতাধিক বাংলাদেশীসহ আক্রান্ত ৫ হাজার

এমদাদ চৌধুরী দীপু , নিউইয়র্ক:করোনা পরিস্থিতি যুক্তরাস্ট্রে নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এই বাস্তবতায় সব চেয়ে ঝুকিতে আছেন যে সব পেশার মানুষ তার মধ্যে পুলিশ বিভাগের সদস্যরা অন্যতম । শতাধিক বাংলাদেশীসহ এ পর্যন্ত পুলিশের ৫হাজার কর্মকর্তা ও সদস্য করোনায় আক্রান্ত হওয়ার তথ্য জানিয়েছে বিভিন্ন সূত্র, এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৩০জনের। সুস্থ হয়ে কাজে ফিরেছেন ৬ শতাধিক।এদিকে অদৃশ্য আততায়ী করোনা ১৯এপ্রিল প্রাণ কেড়েছে এনওয়াইপিডির সেকশন কমান্ডার মোহাম্মদ মুজিব চৌধুরীর। এর পর আলোচনায় রয়েছে এনওয়াইপিডিতে বাংলাদেশীরা কেমন আছেন। খোজ নিয়ে জানা গেছে অন্তত শতাধিক বাংলাদেশী এখন করোনায় আক্রান্ত আছেন।

নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগে (এনওয়াইপিডি) কর্মরত অনেক বাংলাদেশি কর্মকর্তা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন,সম্মূখসারীর এই পেশাজীবীরা পার করছেন এক কঠিন সময়। পুলিশ কর্মকর্তা, কারেকশন অফিসার, স্কুল সেফটি অফিসার, ট্রাফিক ইনফোর্সমেন্ট এজেন্ট, স্কুল ক্রসিং গার্ডসহ শতাধিক আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তার করোনা পজিটিভ হয়েছে এমন তথ্য জানিয়েছে ঘনিস্ট একাধিক সূত্র।

সম্প্রতি (১৯এপ্রিল,২০২০ইং) করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে যোগ্যতা ও দক্ষতার সঙ্গে ডিপার্টমেন্টের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে কর্মরত ট্রাফিক বিভাগের সেকশন কমান্ডার মোহাম্মদ চৌধুরী। সাহসী কর্মকান্ডের স্বীকৃতি হিসেবে ডিপার্টমেন্ট থেকে পুরুস্কৃত ডিটেক্টিভ জামিল সারওয়ার জনি হারিয়েছেন তার প্রাণপ্রিয় বাবাকে হারিয়ে নিজে এখনো লড়ছেন এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের বিরোদ্বে।

বাংলাদেশী আমেরিকান পুলিশ এ্যাসোসিয়েশনের (বাপা)প্রেসিডেন্ট কারাম চৌধুরী ভাইস প্রেসিডেন্ট এরশাদ সিদ্দিকী সবার কাছে এনওয়াইপডিতে কর্মরত বাংলাদেশী সবার জন্য দোয়া চেয়েছেন। শনাক্ত হওয়া এবং সুস্থ হওয়ার পরিসংখ্যান কম বেশী হতে পারে উল্লেখ করে বলেন বড় বিষয় হলো এনওয়াইপিডিতে আমরা সাহস নিয়ে, মনবল নিয়ে কাজ করছি। এখানে দেশপ্রেম আমাদের বড় প্রেরনা,আমরা বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছি,ক্রান্তিকালে আমাদের এই ভুমিকা পেশাদারিত্বের সুন্দর ইতিহাস সৃস্টি করবে।
পুলিশের বিভিন্ন স্তরে ৭শতাধিক বাংলাদেশী কাজ করছেন,এর মধ্যে মুলধারার পুলিশে কর্মরতদের সংখ্যা ৩৫০ বলে জানান বাপার ভাইস প্রেসিডেন্ট এরশাদ সিদ্দিকী।
বাংলাদেশি কমিউনিটির পরিচিত মুখ ডিটেক্টিভ মাসুদ রহমান করোনায় আক্রান্ত হলেও সাহসের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছেন। বাংলাদেশি আমেরিকান পুলিশ এসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি লে. সুজাত খান এখনো লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন এই গুপ্তঘাতকের সঙ্গে। অফিসার রাকিব হাসান করোনা মোকাবিলায় সফল হয়েছেন। লড়াই করে ফিরে এসেছেন ট্রাফিক সুপার ভাইজার দিলরুবা সরকার। প্রিয় বাবাকে হারিয়েছেন স্কুল সেফটি অফিসার মাকসুদা।
এনওয়াপিডির স্কুল সেফটি বিভাগে কাজ করেন সারওয়ার চৌধুরী, তিনি তার অনুভুতি এভাবেই ব্যক্ত করেছেন একটি জাতীয় দৈনিকে যা তুলে ধরা হলো,করোনাকে জয় করা বাংলাদেশি এনওয়াইপিডি অফিসারদের আরেকজন হচ্ছেন নিউইয়র্কের বাংলাদেশি কমিউনিটির পরিচিত ও প্রিয়মুখ জুয়েল মাহবুবুর, যিনি কয়েক সপ্তাহ ধরে এই ভাইরাসকে মোকাবিলা করেছেন অদম্য সাহসের সঙ্গে। তার স্ত্রীও পরবর্তীতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি, তিনি ছিলেন সন্তান সম্ভবা।তবে আনন্দের বিষয় হচ্ছে, গত ১৬ এপ্রিল জুয়েলের স্ত্রী সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। সবাই যখন লকডাউনে ঘরের মধ্যে আছেন, তখন ফার্স্ট রেসপন্ডার হিসেবে এনওয়াইপিডি অফিসারেরা সবার নিরাপত্তা ও নগরকে সুরক্ষিত রাখার উদ্দেশ্যে দেশের প্রয়োজনে ঘরের বাইরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছেন, অনেক অফিসারের পরিবারও এই প্রাণঘাতী ভাইরাসের শিকার হয়ে দূর্বিষহ কষ্টের মধ্যে আছেন।
এনওয়াইপিডির ট্রাফিক শাখায় কাজ করেন সৈয়দ উতবা। এক সময় সাংবাদিকতা করতেন। যুক্তরাস্ট্রে এসে কাজ করছেন ট্রাফিক শাখায়। এই মহামারাীতে বিপদাপন্ন মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন তিনি। উতবা জানান উদ্বেগের বিষয় করোনায় শনাক্ত হওয়ার পর অনেকে সুস্থ হচ্ছেন,আবার সুস্থদের মাঝ থেকে আবারো আক্রান্ত হচ্ছেন কেউ কেউ। অতি ঝুকির এই মহামরীতে উতবা রয়েছেন মানুষের পাশে,সেবার বার্তা বাহক হয়ে হৃদয় উজাড় করা আন্তরিকতা নিয়ে। আর এসব উদাহরন আজ যারা তৈরী করছেন তারা হবেন ইতিহাসের অংশ।
এনওয়াইপিডিতে কর্মরত সারওয়ার চৌধরী তার এক লেখনীতে আরো বলেন,এভাবেই নিষ্ঠা, সাহস এবং অপূরণীয় ত্যাগ স্বীকার করে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ও চ্যালেঞ্জিং পুলিশ বাহিনীতে বাংলাদেশি অফিসারেরা দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করছেন।
করোনায় আক্রান্ত হয়ে সম্প্রতি সুস্থ হওয়া এনওয়াইপিডি কর্মকর্তা জুয়েল মাহবুবুর বলেন, করোনা শনাক্ত হওয়ার পর বিভ্রান্ত না হয়ে কোন কিছু করার আগে অবশ্যই নিজের ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত।তিনি আরও বলেন, যেহেতু এখন পর্যন্ত করোনার কোন ওষুধ নেই, সেহেতু সতর্কতা অবলম্বন ও ইতিবাচক মনোভাবের কোন বিকল্প নেই। কোন অবস্থায় মনোবল হারানো চলবে না, সেজন্য নিজের মত করে কিছু পন্থা বের করারও পরামর্শ দেন তিনি।
ইতিপূর্বে বারবার নিউইয়র্ক পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের বাংলাদেশি আমেরিকান সদস্য নিজের দায়িত্ব, কর্তব্য এবং একনিষ্ঠতার প্রমাণ দিয়ে বাংলাদেশি কমিউনিটিকে গৌরবান্বিত করেছেন! এবারও দেশের এই আপদকালীন অবস্থায় সেই গৌরবকে আরও ওপরে নিয়ে যাচ্ছেন বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের দোয়া আর ভালবাসায় সিক্ত এসব অদম্য সৈনিক।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ