‘সিলেট বিভাগের বর্তমান শিক্ষা ও কর্মসংস্থান পরিস্থিতি’ শীর্ষক সেমিনার

প্রকাশিত: ১০:২৬ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ১৯, ২০২৫

‘সিলেট বিভাগের বর্তমান শিক্ষা ও কর্মসংস্থান পরিস্থিতি’ শীর্ষক সেমিনার

প্রভাতবেলা প্রতিবেদক: বিভিন্ন জায়গায় গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত সিলেটি এবং উর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের নিয়ে শনিবার ‘সিলেট বিভাগের বর্তমান শিক্ষা ও কর্মসংস্থান পরিস্থিতি’ শীর্ষক এক ব্যতিক্রমী সেমিনার ও মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়েছে। সিলেটের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জালালাবাদ অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন ও সিলেট জেলা প্রশাসন যৌথভাবে এর আয়োজন করে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার আলমের সভাপতিত্বে এতে সিলেট বিভাগের বাসিন্দা একজন রাষ্ট্রদূত, সরকারের তিনজন সচিব. দুইজন অতিরিক্ত সচিব, আয়কর গোয়েন্দা সেলের প্রধান ও তিনজন উপসচিবসহ সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ও সিলেটের শিক্ষা বিভাগের পদস্থ কর্মকর্তা এবয় সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা যোগ দেন।

সেমিনারে সিলেটের শিক্ষা ব্যবস্থার অতীত ও বর্তমান অবস্থা, কারিগরী শিক্ষা প্রসঙ্গ এবং নানান ক্ষেত্রে উন্নয়ন ও বঞ্চনার বিষয়গুলো উঠে আসে। বক্তারা বলেন শিক্ষা ও উন্নয়নে সিলেট পিছিয়ে পড়েছে, ৩০ শতাংশ স্কুলগামী শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে, যথাযত সমন্বয় না থাকায় উন্নয়ন বঞ্চিত হচ্ছেন সিলেটবাসী। রয়েছে ইংরেজি, বিজ্ঞান ও গণিত বিষয়ে দক্ষ শিক্ষকেরও অভাব রয়েছে।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সদ্য সাবেক অতিরিক্ত বিদ্যুৎ সচিব ড. সৈয়দ মাসুম আহমদ চৌধুরী। এসময় তিনি বলেন সিলেট বিভাগে গড়ে স্কুলগামী ৩০ ভাগ শিক্ষার্থী ঝরে পড়লেও সুনামগঞ্জে এ হার ৩৪.২৪ ভাগ। এ বিভাগের শতকরা ২০ ভাগ শিক্ষার্থী বন্যার সময় অচল হয়ে পড়ে। এ অঞ্চলে গণিত, বিজ্ঞান ও ইংরেজি বিষয়ে দক্ষ শিক্ষকের অভাব রয়েছে। এবারের এইচএসসি পরীক্ষায় এর প্রতিফলন লক্ষ্য করা গেছে। সরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত ১: ১৮৫। বেসরকারিতে আরো কম। হাওর ও চা বাগান এলাকার জনগণ অপেক্ষাকৃত দরিদ্র। নি¤œমাধ্যমিকে জাতীয় গড় উপস্থিতি ৫৮ পার্সেন্ট হলেও সিলেট অঞ্চলে এ হার ৫৪ %। এ অঞ্চলের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অবকাঠামোগত দুর্বলতা এবং প্রশাসনিক তদারকিরও অভাব রয়েছে।

আরও পড়ুন  শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন, বিমানবন্দর থানার সম্মেলন অনুষ্ঠিত

সেমিনারে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে মেক্সিকোয় নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুশফিকুল ফজল আনসারী বলেন, যথাযথ সমন্বয়ের অভাবে উন্নয়নের ক্ষেত্রে সিলেট পিছিয়ে পড়ছে। বিমান ভাড়ার ক্ষেত্রে এক ধরণের অসংগতি তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে সকল ক্ষেত্রে রয়েছে এক ধরনের কর্তব্যপরায়ণতা। এ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।

দেশের উন্নয়নে সকলকে কাজ করতে হবে-এই মন্তব্য করে তিনি বলেন, মেক্সিকোতে আমরা ১ মিলিয়ন ডলারের বাংলাদেশি পণ্য সেল করার টার্গেট নিয়েছি। আশাকরি, আমরা এক্ষেত্রে সফল হবো।

সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে জালালাবাদ অফিসার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি এবং ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু নাসের খান বলেন, এক সময় সারাদেশে সিলেটের পরিচিতি ছিল এডুকেশনাল ক্যাপিটাল হিসেবে। কিন্তু বর্তমানে এ বিভাগে বুদ্ধিভিত্তিক নেতৃত্ব ক্ষীণ হয়ে আসছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের কমিউনিকেশন ও এনালাইটিকেল স্কিলে আরো দক্ষ করে তুলতে হবে। এ অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা করে ইংলিশ এন্ড অ্যান্ড মেথ ইফিসিয়েন্সি টেস্ট (ইএমএফটি) এবং কিউবিসি (কোয়ালিফাইড বাংলাদেশী শেফ) ও কোয়ালিফাইড বাংলাদেশী টেকনিশিয়ান (কিউবিটি) চালু করা যেতে পারে। কারিগরি শিক্ষায় ২০৩০ সালের মধ্যে সিলেট অঞ্চলের এক লক্ষ তরুণকে আন্তর্জাতিকমানের প্রশিক্ষণ দেওয়া যেতে পারে। এজন্য সিলেট হাইটেক পার্ককে কাজে লাগানো যেতে পারে।

আরও পড়ুন  রাস্তায় ‘পুলিশ’ স্টিকারযুক্ত গাড়ি যাচাই করবে পুলিশ

এতে অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন-মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ বিভাগের সচিব আবু তাহের মো. জাবেদ, বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সচিব আব্দুর রহমান তরফদার, জাতীয় বেতন কমিশনের সচিব (অতিরিক্ত সচিব) ফরহাদ সিদ্দিক, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা-উন-নবী, সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রেজাই রাফিন সরকার, আয়কর গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান আব্দুর রকিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ শামছুল ইসলাম, সিলেট শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর আনোয়ার হোসেন চৌধুরী, লিডিং ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. তাজ উদ্দিন, ওসমানী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. জিয়াউর রহমান চৌধুরী, সিলেট কৃষি বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন আহমদ, সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, কলামিস্ট আফতাব চৌধুরী, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শাখাওয়াত এরশেদ, সিলেট সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন, এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী ফারুক হোসেন, সিলেট রেলস্টেশনের ম্যানেজার নুরুল ইসলাম প্রমুখ।

সেমিনারে সিলেটের শিক্ষা ছাড়াও বিনিয়োগ, যোগাযোগ, পর্যটনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিবদমান সমস্যাবলীর চিত্র উঠে আসে। তারা বলেন, সিলেটে প্রাপ্ততা অনুযায়ী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অভাব রয়েছে। কর্মসংস্থান নেই বললেই চলে। এ অবস্থা হতে উত্তরণে তারা বিভিন্নমুখী শিক্ষার সমন্বয়, চা-শ্রমিক ও হাওরাঞ্চলের জন্য বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ, বাজারভিত্তিক চাহিদা অনুসারে শিল্প স্থাপন, পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে অবকাঠামো ও দক্ষ জনবল সৃষ্টির উদ্যোগ গ্রহণের তাগিদ দেন।

সর্বশেষ সংবাদ