‘লঙ্কাওয়াশ’ হলো টিম টাইগার

প্রকাশিত: ১২:৪৩ পূর্বাহ্ণ, আগস্ট ১, ২০১৯

‘লঙ্কাওয়াশ’ হলো টিম টাইগার

মাঠে ময়দানে ডেস্ক: তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে শ্রীলংকার কাছে পঞ্চমবারের মত হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ। বুধবার সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে শ্রীলংকার কাছে ১২২ রানে হারের স্বাদ নেয় টাইগাররা। ফলে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতলো লংকানরা। কলম্বোয় টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৯৪ রান করে স্বাগতিক শ্রীলংকা। জবাবে ১৭২ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।

লংকানদের ভালো শুরু করতে দেননি বাংলাদেশের পেসার শফিউল ইসলাম। পঞ্চম ওভারেই শ্রীলংকা শিবিরে আঘাত হানেন শফিউল। আগের ম্যাচে ৮২ রান করা ওপেনার আভিস্কা ফার্নান্দোকে লেগ বিফোর ফাঁদে ফেলেন সাড়ে তিন বছর পর জাতীয় দলে ফেরা শফিউল। দলীয় ১৩ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর দলের ভীত গড়ার চেষ্টা করেন অধিনায়ক দিমুথ করুনারত্নে ও প্রথম ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান কুশল পেরেরা। মারমুখী মেজাজ না দেখিয়ে দলের স্কোর বড় করার চেষ্টা করে সফল হয়েছেন তারা। তাদের ব্যাটিং দৃঢ়তায় সেঞ্চুরির দোড়গোড়ায় পৌছে যায় শ্রীলংকার ইনিংস। তবে এই জুটিকে একত্রে তিন অংকে পা রাখতে দেননি বাংলাদেশের বাঁ-হাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম। ৬টি চারে ৬০ বলে ৪৬ রান করা করুনারত্নেকে আউট করেন তাইজুল। ফলে দলীয় ৯৬ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় শ্রীলংকা। পেরেরার সাথে দ্বিতীয় উইকেটে ৯৫ বলে ৮৩ রান যোগ করেন করুনারত্নে।

অধিনায়ককে হারিয়ে খেই হারিয়ে ফেলেন উইকেটে জমে যাওয়া পেরেরা। ৫ বল পর ফিরতে হয় তাকেও। ৫টি চারে ৫১ বলে ৪২ রান করা পেরেরাকে শিকার করেন পেসার রুবেল হোসেন। তাই ৯৮ রানের মধ্যে ফিরে যান করুনারত্নে-পেরেরা।

২ রানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপ অনুভব করছিলো শ্রীলংকা। কিন্তু লংকানদের বেশিক্ষণ চাপ অনুভব করতে হয়নি। কারণ চতুর্থ উইকেটে দারুন এক জুটি গড়েন কুশল মেন্ডিস ও অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ। বাংলাদেশ বোলারদের সমীহ করে খেলা শুরু করেন মেন্ডিস-ম্যাথুজ। তাই শ্রীলংকার স্কোর দেড়শ পেরিয়ে দু’শর দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। কিন্তু মেন্ডিস-ম্যাথুজের স্বপ্ন ভেঙ্গে দেন অকেশনাল বোলার সৌম্য সরকার। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৬তম হাফ-সেঞ্চুরি করা মেন্ডিসকে দলীয় ১৯৯ রানে থামতে হয়। ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ৫৮ বলে ৫৪ রান করেন মেন্ডিস। চতুর্থ উইকেটে ১২১ বলে ১০১ রান দলকে উপহার দেন মেন্ডিস।

আরও পড়ুন  করোনায় আরো ৬ জনের মৃত্যু, শনাক্ত ১০৫১

দলের স্কোর ২শ ছুইছুই অবস্থায় মেন্ডিস ফিরে গেলে, ক্রিজে আসেন দাসুন শানাকা। উইকেটে গিয়েই নিজের মারমুখী মেজাজ দেখান তিনি। ২টি করে চার-ছক্কায় দলের রান রেট বাড়ানোর চেষ্টা করেন শানাকা। তার মারমুখী ব্যাটিং-এ আড়াইশ রানে পৌছে যায় শ্রীলংকা। কিন্তু শানাকে আরও বেশি ভয়ংকর হতে দেননি শফিউল। ১৪ বলে ৩০ রানে শানাকাকে থামিয়ে দেন শফিউল। মেন্ডিস-শানাকাকে হারিয়ে ব্যাট হাতে অবিচল ছিলেন ম্যাথুজ। দলকে বড় স্কোর এনে দিতে বদ্ধ পরিকর ছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত তাই করেছেন ম্যাথুজ। ইনিংসের শেষ ওভারের প্রথম বলে আউট হন তিনি। ততক্ষণে নিজের নামের পাশে ৮৭ রান বসিয়ে ফেলেন ম্যাথুজ। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪০তম হাফ-সেঞ্চুরি পাওয়া ইনিংসে ৮টি চার ও ১টি ছক্কা মারেন তিনি। ম্যাথুজের কল্যাণে তিনশ রানের সংগ্রহের পথ তৈরি হয়েছিলো। কিন্তু তার বিদায়ে শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেটে ২৯৪ রানের সংগ্রহ পায় শ্রীলংকা। বল হাতে বাংলাদেশের পক্ষে ৩টি করে উইকেট নেন শফিউল ইসলাম ও সৌম্য সরকার। ১টি করে উইকেট শিকার করেন রুবেল হোসেন ও তাইজুল ইসলাম।

২৯৫ রানের জয়ের লক্ষ্যে এবারও শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। স্কোর বোর্ডে ৪ রান উঠতেই প্যাভিলিয়নে ফিরেন অধিনায়ক তামিম ইকবাল। এবার আর বোল্ড হননি তিনি। কাসুন রাজিথার বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন তামিম। এবার করেন ২ রান। তামিমের বিদায়ের পর ঘুড়ে দাড়ানোর চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার আনামুল হক ও তিন নম্বরে নামা সৌম্য সরকার। প্রথমবারের মত এই সিরিজে খেলতে নামা আনামুল সুযোগটি কাজে লাগাতে পারেননি। তবে ২টি চারে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ২৪ বলে ১৪ রান করে রাজিথার দ্বিতীয় শিকার হন আনামুল।

দলীয় ২৯ রানে দ্বিতীয় উইকেট পতনের পর ম্যাচে ফেরার স্বপ্ন দেখছিলো বাংলাদেশ। কারণ উইকেটে যোগ দেন ইন-ফর্ম মুশফিকুর রহিম। ব্যাটিং অর্ডারে নিচের দিকে নেমে পড়া মোহাম্মদ মিঠুনকে নিয়ে উইকেটে সেট হবার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু তাদের পথে বাধাঁ হয়ে দাড়ান শানাকা। ১২তম ওভারে মুশফিককে ও ১৬তম ওভারে মিঠুনকে বিদায় দেন শানাকা। মুশফিক ১০ ও মিঠুন ৪ রান করেন।

আরও পড়ুন  কোনো সংলাপেরও প্রয়োজন নেইঃ ওবায়দুল কাদের

বাংলাদেশের মিডল-অর্ডারের ভরসা মুশফিক-মিঠুনকে শিকার করেই ক্ষান্ত হননি শানাকা। ছয় নম্বরে নামা মাহমুদুল্লাহর বিদায়ও নিশ্চিত করেন শানাকা। ৯ রানে মাহমুদুল্লাহ আউট হন। ফলে ৮৩ রানেই পাঁচ উইকেট হারিয়ে ম্যাচের লড়াই থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ।

সতীর্থরা ফিরে গেলেও, আজ ব্যাট হাতে লড়াই করেন সৌম্য। বিশ্বকাপে ৮ ইনিংসে ১৬৬ ও এই সিরিজের দুই ইনিংসে যথাক্রমে ১৫ ও ১১ রান করা সৌম্য ৬১তম বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১১তম হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন। ১০ ইনিংস পর হাফ-সেঞ্চুরি পাওয়া সৌম্য সাব্বির রহমান ও মিরাজকে নিয়ে পরবর্তীতে লড়াই করার পরিকল্পনা করেন। কিন্তু সেটি হতে দেননি শ্রীলংকার ডান-হাতি পেসার লাহিরু কুমারা। সাব্বিরকে ৭ ও মিরাজকে ৮ রানে শিকার করেন তিনি। তাই ১১৭ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ হারের পথ দেখে ফেলে বাংলাদেশ। তবে হাফ-সেঞ্চুরির পর দ্রুত রান তোলার চেষ্টা করেন সৌম্য। তবে বেশি দূর যেতে পারেননি তিনি। আকিলা ধনঞ্জয়ার গুগলিতে বোল্ড হয়ে থেমে যান সৌম্য। ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ৮৬ বলে ৬৯ রান করেন সৌম্য।

সৌম্য ফিরে যাওয়ায়, বাংলাদেশের হার সময়ের ব্যাপার হয়ে দাড়ায়। কিন্তু নয় নম্বরে নামা তাইজুল প্রতিপক্ষের বোলারদের সামনে মারমুখী হয়ে উঠেন। তার ব্যাটিং দৃঢ়তায় হারের ব্যবধান কমতে থাকে বাংলাদেশের। কিন্তু শেষ ব্যাটসম্যান রুবেল হোসেন রান আউটের ফাঁদে পড়লে ৩৬ ওভারে ১৭২ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। ফলে ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ২৮ বলে ৩৯ রান করে অপরাজিত থাকেন তাইজুল। শ্রীলংকার শানাকা ৩টি ও রাজিথা-কুমারা ২টি করে উইকেট নেন। ম্যাচ সেরা হয়েছেন শ্রীলংকার ম্যাথুজ।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

এ সংক্রান্ত আরও সংবাদ

সর্বশেষ সংবাদ