সেই বিভৎস স্মৃতি আর শখের সুরমাদানি

প্রকাশিত: ১০:৫২ অপরাহ্ণ, জুলাই ৩, ২০২১

সেই বিভৎস স্মৃতি আর শখের সুরমাদানি
সেই বিভৎস স্মৃতি আর শখের সুরমাদানি ।
♠ বনানী আহমেদ, ঢাকা ♠
সাল ১৯৫৯ , অধ্যয়ন করি প্রাথমিক পাঠশালা ক্লাস টু তে । চালিবন্দর রামকৃষ্ণ মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয় । টু পর্যন্ত ছিল আমার শিশু কালের অধ্যায় ঐ পাঠশালায় । পরবর্তী বছর ক্লাস থ্রিতে ভর্তি হই জিন্দাবাজার সিলেট সরকারি পাইলট উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে, সেখান থেকেই S S C পাস করি।
সবই পাকিস্তানি আমলের কথা । জাতীয় সংগীত ‘পাকসার জমিন সাদ বাদ’  স্কুলে ক্লাস শুরুর প্রাক্কালে এসেমব্লিতে উর্দু গানটি গাওয়ানো হতো । বাংলা ভাষী বলে অর্থ না বুঝেই লাইনে দাঁড়িয়ে গাইতে হতো প্রতিদিন স্কুলে ।
চালিবন্দর রামকৃষ্ণ মিশন স্কুলে আমার শিক্ষা জীবনের শুরু, প্রারম্ভে প্রথম যে, পুরস্কারটি অর্জন করেছিলাম বাৎসরিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সেটি হলো ছবিতে দৃশ্যত সুরমাদানিটি । দৌড় দিয়ে রসি থেকে ঝোলানো কলা নিয়ে আসা । আমি দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছিলাম । পুরস্কার পেয়েছিলাম একটা চিরুনি ও সুরমাদানি যা আজও সুরক্ষিত আছে।  বহু বৎসর গত হয়ে ও আমার বর্তমান বাসভবনে এনটিক হয়ে ।
চিরুনি বাল্যকালে হারিয়ে গিয়েছে । কবে কোন শিশু সময়ে পেয়েছিলাম প্রাইজ ঐ সময়ের আনন্দে আত্মহারা সুরমাদানিটি আজ ও আমাকে আনন্দ দেয় । চোখে পড়লেই এখন ও আমি সেই সময়ের কথা ভেবে আবেগে আপ্লুত হই। কত কিছু চলে গেল ,হারিয়ে গেল , দান করলাম আর কত প্রাইজ ও পেয়েছি , তবে পড়া লেখায় পাইনি কোনো পুরস্কার । ছিলাম না ভাল, না মন্দ।
ডাক্তার সাহেবের চাকুরি সুত্রে দীর্ঘ দিন ইরান ও ছিলাম । কত বাসা ও বদল হয়েছে। এখন না হয় বর্তমান বাসায়ই আমৃত্যু স্থায়ী থাকবো হয়তোবা। প্রাইজ সুরমাদানি কিন্তু আমাকে ছাড়েনি হারিয়ে ও যায় নি।
ইতিহাসের বিভৎসতা একাত্তরে বর্বর পাক হানাদার বাহিনী পিতৃ ভবনের আশে পাশের বাসা বাড়িতে প্রায় পুরো মহল্লায় আগুন ধরিয়ে দিল , যে আগুনের লেলিহান শিখা দেখে ভয়ে শিউরে উঠে ঠিকতে না পেরে পিতা মাতা চলে গিয়েছিলেন বেয়াই বাড়ি । তবে নিরাপদ মনে করেছিলেন মুনিপুরি রাজবাড়ী ।
সেখানে চিরদিনের জন্য এমন নিরাপদ স্থান দেখিয়ে দিল । বাবা সহ নয়জন রকেট সেলিংএ চিরস্থায়ী নিরাপদে চলে গেলেন।  ঐ দিনই দেশ পাক বাহিনী থেকে মুক্ত হলো । মানুষ উল্লাস করছে বিজয়ের, আর আমি অশ্রু জল ফেলছি আপনজনদের মৃত্যুতে । সদ্য স্বাধীন দেশে চিত্তে এক আকাশ কষ্ট নিয়ে স্বামী হারা শোকাহত মাকে নিয়ে গেলাম আমার পিতা হারানো পিতৃ ভবনে ।
তবে বাড়িটা অক্ষত ছিল , চোখ বুলিয়ে দেখি রাজাকার আলবদররা তছনছ করে চুরি করে নিয়ে গেল সখের জিনিস ও কত কিছু দ্রব্যাদি । আর ঘরের মাটিতে দেখি, পরে আছে আমার বাল্যজীবনের প্রথম পাওয়া স্কুলের বার্ষিকী খেলার পুরস্কারটি । সযত্নে পরম মমতায় পিতৃদেবের মাটি থেকে তুলে নিয়ে আসলাম স্বামী গৃহে।  জীবনের প্রথম পাওয়া মহামূল্যবান পুরস্কারটি । যা আমাকে ইঙ্গিত দিল তাকে নিয়ে আজ , কিছু লিখবো বলে ।
♠ বনানী আহমেদ, ঢাকা ♠ এর টাইমলাইন থেকে নেয়া।( কিঞ্চিত সম্পাদিত)
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

সর্বশেষ সংবাদ