গারো পাহাড়ে মরুভূমির ‘সাম্মাম’

প্রকাশিত: ৫:১৯ অপরাহ্ণ, মে ১৮, ২০২৪

গারো পাহাড়ে মরুভূমির ‘সাম্মাম’
প্রভাতবেলা ডেস্ক: উচ্চ ফলনশীল সুস্বাদু ফল সাম্মাম। দেখতে অনেকটা বেল কিংবা বাতাবি লেবুর মতো হলেও ভেতরে রসালো তরমুজের মতো। মরুভূমির এই ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করছেন শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার সীমান্তবর্তী গোমড়া গ্রামের তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেন।

 

 

সম্প্রতি বাগানে গিয়ে দেখা যায়, সুতা দিয়ে বানানো মাচায় ফুলে-ফলে ভরপুর সাম্মাম। বিভিন্ন আকারের কাঁচা-আধাপাকা কয়েকশ ফল ঝুলছে। সবুজ থেকে হলুদ বর্ণ ধারণ করছে বেশকিছু ফল। গাছের গোড়ার অংশের মাটি মালচিং পেপার দিয়ে ঢাকা। দুইজন সহকর্মী নিয়ে আনোয়ার গাছের পরিচর্যা করছেন।

 

তরুণ এই কৃষি উদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেন জানান, গত মৌসুমে ইউটিউব দেখে নিজের ১০ শতাংশ জমিতে চাষ করেছিলেন ‘সাম্মাম’। বীজসহ সব কিছু মিলিয়ে তখন খরচ হয় ২৫ হাজার টাকা। সেবার লাভও হয়েছিল বেশ। তাই এবছর উপজেলা কৃষি অফিসার হুমায়ুন দিলদারের পরামর্শ ও সহযোগিতায় আরেকটু জমি বাড়িয়ে ‘সাম্মাম’ চাষ করেন। ইতোমধ্যে খেতে এসেছে কাঙ্ক্ষিত ফল। এখন ফল বিক্রির পালা। আশা করছেন, এবার লক্ষাধিক টাকার ওপরে লাভ করবেন।

 

 

তিনি আরও জানান, পড়াশোনা শেষ করে বেসরকারি একটি সংস্থাতে চাকরি নেন। তবে তিনি নিজেকে সেখানে মানিয়ে নিতে পারেননি। অবশেষে চাকরি ছেড়ে চলে আসেন নিজ গ্রামে। যুক্ত হন বাবার সঙ্গে কৃষি কাজে। এরপর চিন্তা করেন ব্যতিক্রম কিছু চাষাবাদের।

 

 

আনোয়ারের বাবা মোজাম্মেল হক জানান, ফলটির দু’টি জাত লাগিয়েছেন তার ছেলে। ফলের বাইরের অংশ সবুজ আর ভেতরের অংশ হলুদ। খেতে খুব মিষ্টি ও রসালো। প্রতিটি সাম্মাম ২ কেজি পর্যন্ত ওজন হচ্ছে।

 

আরও পড়ুন  শায়েস্তাগঞ্জে কৃষকদের মাঝে কৃষি উপকরণ বিতরণ

 

ভিনদেশি রসালো ফল উৎপাদনের খবরে প্রতিদিন তার খেত দেখতে আসছেন আশপাশের কৃষকরা। তারা জানান, আগামীতে চাষ করবেন মরুভূমির এই লাভজনক ফল। আর পাইকারাও আগ্রহ দেখাচ্ছেন ফল নেওয়ার।

 

স্থানীয় পাইকাররা বলেন, এ ফল তিন থেকে চারশ টাকা কেজিতে বিক্রি করা সম্ভব। অনেকে চাষ করলে শেরপুরসহ আশেপাশের জেলায় বাজার ধরা যাবে।

আগ্রহী কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমাদের এ পাহাড়ি এলাকায় কাকরোল, করলা, বরবটি, চিচিঙ্গা, বেগুন চাষ করি। ভাতিজা আনোয়ার যে ফলটা লাগাইছে, সেটা খুব মিষ্টি। পাইকাররাও আসছে দেখতে, তাই চাহিদা থাকায় সামনের মৌসুমে আমি ১০ কাঠা জমিতে চাষ করবো এই ফল।

 

 

আরেক কৃষক আতাহার আলী বলেন, আমরা বর্ডার এলাকার মানুষ। ধানের আবাদ তো ঘরে তুলতেই পারি না পাহাড়ি ঢল আর হাতির আক্রমণে। বিভিন্ন সবজি চাষ করি আমরা। আনোয়ার বিদেশি যে ফলটা চাষ করছে, সেটা খেতে খুব মিষ্টি। সামনের বার আমিও চাষ করমু এ ফলটি।

 

 

জামিল হোসাইন নামে এক যুবক এসেছেন শেরপুর পৌর শহরের কসবা মহল্লা থেকে। তিনি বলেন, আমি খবর শুনে দেখতে আসলাম। এ ফলটি গতবছর রাজধানীর একটি সুপারমল হতে তিন কেজি ১২শ টাকায় কিনেছিলাম। খুব সুস্বাদু ও রসালো ফল।

আরও পড়ুন  হাওরাঞ্চলের ৯০ ভাগ ধান কাটা শেষ

 

 

ঝিনাইগাতী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার বলেন, উদ্যোক্তা আনোয়ার হোসেনকে সার্বিকভাবে পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে মাঠ পরিদর্শনের পাশাপাশি নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।

 

 

তিনি বলেন, এই ফলের চাষ সম্প্রসারণ করলে স্থানীয় কৃষকরা যেমন অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবেন, তেমনি পুষ্টি চাহিদা পূরণে ও বাজারে নতুন ফলের সরবরাহ বৃদ্ধি পাবে। আমাদের দেশে এটি নতুন এলেও সুপার শপগুলোতে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ইতোমধ্যে আনোয়ারের ফলগুলো শহর থেকে পাইকাররা এসে দরদাম করছে।

 

শেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শিবানী রানী নাথ বলেন, ‘সাম্মাম’ ছাড়াও খরবুজ, খরমুজ, কেন্টালোপ, সুইট মেলন, নেটেড মেলন নামেও ফলটি বিভিন্ন দেশে পরিচিত। এই বিদেশি ফলের কয়েক রকম জাত আছে। ফলটির খোসা বেশ পুরু হওয়ায় সংরক্ষণ ও পরিবহনে সুবিধা রয়েছে। ‘সাম্মাম’ বা রকমেলন জাতীয় ফলগুলো জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। পানি আটকে থাকলে গাছের গোড় পঁচে গাছ মারা যাবে। তাই এগুলো মরুভূমিতেই আবাদ হয়। তবে আমাদের গারো পাহাড়ের মাটির একটি বিশেষ গুণ রয়েছে, তা হলো পানি আটকে থাকে না। তাই এখানে ‘সাম্মাম’ বা রকমেলন জাতিয় ফলগুলো চাষ ভালো হবে।
সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

সর্বশেষ সংবাদ