ধানের শীষে, ঘাসের বুকে, পাতার শরীরে শিশির জমে থাকার গভীর সৌন্দর্যের পটভূমি তুলে ধরে বলেই প্রতিটি হেমন্তের সকালের রয়েছে নিজস্বতা। প্রকৃতি এমন একটি অভাবনীয় রৌদ্রোজ্জ্বল হেমন্তের সকালের রূপ আমাদের সামনে তুলে ধরে যেন সফলতার চিত্রই উপহার দিচ্ছে। জীবনযাপনের যন্ত্রণাকাতর দীর্ঘ পটভূমি পেরিয়ে এমনই একটি আলোকময় চিরসুন্দর সকালের অনুপ্রেরণাই যেন কাম্য আমাদের। আমাদের আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে সত্য ও সুন্দরের অনুভূতি নিয়ে কর্তব্য-কর্মে ঝাঁপিয়ে পড়ার সংকল্প যেন প্রকাশ করছে সকালটি।
প্রকৃতির অপূর্ব দৃশ্যাবলীর সমন্বয়ে গাঁথা হেমন্তকালের প্রতিটি সকাল বেলাকার রূপ। হেমন্ত আসে, হেমন্ত যায়। হেমন্ত মানেই আমরা এখন অনেকেই ভাবি নবান্নের ঋতু। কিন্তু হেমন্ত যে এক বহুরূপী প্রকৃতির শ্রেষ্ঠ এক ঋতু, সে কথা ভুলে যাই। খানিকটা ঠাণ্ডা, খানিকটা গরম, অনেকটাই নাতিশীতোষ্ণ- এরকম এক আবহাওয়ার ঋতু হল হেমন্ত। কখনও ঝড়-মেঘ, কখনও কুয়াশা। সবুজ ধানক্ষেতগুলো ধীরে ধীরে সোনারঙে বদলে যাওয়া।
অতিথি পাখিদের আগমন শুরু। গাঁয়ে গাঁয়ে খেজুর গুড় আর পিঠের ঘ্রাণ। ঝকমকে তাজা মাছে সাজানো জেলেদের ডালা। এই তো আমাদের অনেক রূপের হেমন্তের প্রকৃতি আর সে প্রকৃতির আশ্রয়ে আমরা একটু অন্যরকম হই হেমন্তের মানুষগুলো। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার “হিমের রাতে” কবিতায় হেমন্তের সংমিশ্রণ ঘটিয়ে লিখেছেন- হিমের রাতে ওই গগনের দীপগুলিরে, হেমন্তিকা করল গোপন আঁচল ঘিরে। ঘরে ঘরে ডাক পাঠালো ‘দীপালিকায় জ্বালাও আলো, জ্বালাও আলো, আপন আলো, সাজাও আলোয় ধরিত্রীরে।
আমরা তো ক্রমশই দূরে সরে যাচ্ছি প্রকৃতির গভীর সান্নিধ্য থেকে। উপলব্ধির চেতনায়ও এখন আর ধরা পড়ে না প্রকৃতির সুনিবিড় দৃশ্যপটগুলোর তাৎপর্য। ছয় ঋতু বাংলার প্রকৃতির বুকে যে গভীর সৌন্দর্য শোভা ছড়িয়ে রেখেছে- তাও যেন হৃদয় দিয়ে দেখার ক্ষমতা আমরা হারিয়ে ফেলছি। আবার ভয় হয়, যেভাবে পৃথিবীর জলবায়ু বদলাচ্ছে তাতে আগামীতে আমরা আমাদের এই আপন হেমন্তকে খুঁজে পাব তো!