সিলেট ২১শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ |
প্রকাশিত: ২:৩৬ পূর্বাহ্ণ, মে ১১, ২০২০
কবীর আহমদ সোহেল:
‘বস দোয়া করিয়েন। করোনা পজিটিভ হয়ে গেছে আমার।’
ইনবক্সে ক্ষুদেবার্তা। ঘুম থেকে জাগতেই নোটিফিকেশন রিংটোন। ইনবক্স অপেন করেই এই ৮ টি শব্দ। শরীরটা হিম হয়ে এলো। কিছুক্ষণ পর আবার গরম লাগতে শুরু। কপোলে বিন্দু বিন্দু ঘাম।
বিছানা ছাড়লাম। ফ্রেশ হবা আগেই রিপ্লাই করলাম।
‘ সত্যি! কোথায় তুমি? কোন উপসর্গ আছে?
কমে যাবে। সাহস রেখো।’
১০ মে রোববার দুপুরের এ ভার্চুয়াল বার্তা বিনিময়। ক্ষুদে বার্তাটি পাঠিয়েছে গোপাল। পুরো নাম গোপাল সুত্র ধর। দৈনিক প্রভাতবেলা’র এক সময়ের স্টাফ রিপোর্টার। এখনো যুক্ত আছে প্রভাতবেলায়। তবে অনিয়মিত। মধ্যবিত্ত পরিবারের বড় পরিশ্রমি ছেলে। সংস্কৃতি চর্চা করে। বেশ ধর্মপ্রাণ। তবে ধর্মের নামে ভন্ডামী বড় অপছন্দ তার। আমার প্রতি অগাধ শ্রদ্ধা তার। ধর্ম সংস্কৃতি অর্থ বিত্ত এসব নিয়ে সুযোগ পেলেই কথা বলে। নিখাদ সত্যটা বলে অকপটভাবে। সনাতন ধর্মের অনেক আচার নিয়ে তার সাহসী উচ্চারণ আমাকে অবাক করে দেয়।
সদ্য তারুণ্য পেরুনো টানটান যৌবনের সুঠাম এই গোপাল হাসপাতালে আইসোলেশনে। হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে করোনা আইসোলেশন কেন্দ্রে সুস্থতার যুদ্ধে দিন গুজরান করছে। গেল বছর একটা সরকারী চাকুরী পেয়েছে। কম্যুনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্য সহকারী। ঐ চাকুরী পেয়ে আমাকে বলছিল, ‘বস ছাত্রলীগ না করলে এটাও ভাগ্যে জুটতো না’। কি অসাধারণ সত্য প্রকাশ। জীবনে স্বচ্ছলতা এসেছে। আমাকে পেলেই কিছু খাওয়াবার কি আন্তরিকতা গোপালের। ভদ্র নম্র আদর্শবান এক যুবক গোপাল। স্বপ্নে বুনা জীবনের বাতি গুলোতে জ্বালাতে শুরু করেছে সবে মাত্র। করোনা নামক ধমকা ঝড়ের ছোবলে আক্রান্ত গোপাল।
‘গত ২ তারিখ ধরা খাইয়া বন্দী আছি হাসপাতাল নামক জেলে। হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল।” ইনবক্সে এভাবেই রিপ্লাই গোপালের। কম্যুনিটি স্বাস্থ্য ক্লিনিকে কাজ করে। তার মা ডায়েবেটিকস সহ নানা রোগে আক্রান্ত। মনের ভাবনা যদি মায়ের কিছু হয়। তাই করোনা টেস্টের নমুনা মানুষের সংগ্রহ করছি। নিজেরটা করে নেই। এমনি ভাবনা থেকে টেস্ট করানো। কপাল খারাপ গোপালের। পরীক্ষার ফলাফল আসে পজিটিভ। হুলুস্থুল কান্ড। গ্রামের বাড়ীতে। কি জানি কি হয়েছে এমন ভাব। বাড়ী লকডাউন করা হয়েছে। গ্রামের মানুষের তীর্যক মন্তব্যে অতিষ্ট পরিবার। পরিবারের লোকজন যেখানে আমাকে শান্তনা দেবে, উল্টো প্রতিদিন ফোন করে তাদেরকে শান্তনা দিতে হয় আমাকে। বলছিলো গোপাল।
প্রথম ২/১ দিন অল্প কাশি ছিল। এখন নেই। কোন উপসর্গ আছে কী না। জানতে চাইলে উত্তরে গোপাল বলে। চিকিৎসা ব্যবস্থা কেমন? জবাবে গোপালের ভাষ্য, বস চিকিৎসার চি নেই। ২৫ হাত দুরে দরজায় দাঁড়িয়ে ডাক্তার পরামর্শ দিয়ে যায়। ১০/১৫ হাত দুরে থাকে নার্স সেবকরা। এজিথ্রমাইসিন আর পারাসিটামল দিয়েছে। কোন খোঁজ খবর বা রানিং হিস্ট্রি কেউ নেয় না। আমি একজন স্বাস্থ্য কর্মী। আমার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, সিভিল সার্জন ফোন করেছেন। এগুলো কর্মরতরা শুনেনা। আমার এ অবস্থা হলে সাধারণের কি অবস্থা হতে পারে, বুঝে নেন।
খাবার দাবার প্রসংগে জিজ্ঞাসা করলে সে জানায়, ১২ টায় দুপুরের আর বিকেল ৪ টায় রাতের খাবার দেয়া হয়। লঙ্গরখানার মত লাইন ধরে আনতে হয়।
গোপালের সাথে দিনে ইনবক্সে ম্যাসেজ বিনিময় হয়েছে। ইফতার পরে কল দিলাম। রিসিভ হলোনা। ম্যাসেজ করলো পানি গরম করতে গিয়েছিল। তারাবী পরে রাত সাড়ে ৯টায় কথা হলো অনেক্ষণ। সাহস আছে মনে। নিজেও অভয় দিলাম। কোন কিছুর প্রয়োজন আছে কি না জানতে চাইলাম। বরাবরের মত লাজুক উত্তর।
আজ সোমবার আবার নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করা হবে। পরীক্ষায় নেগেটিভ ফলাফল আসবে এমনটাই আশা করে গোপাল, কামনা করি আমরা। প্রভাতবেলা পরিবারের একজন সদস্য করোনা আক্রান্ত হয়ে গেল। আমাদের জন্য বিষয়টি উদ্বেগ ও উৎকন্ঠার। সুস্থ হয়ে উঠুক গোপাল। কর্মচঞ্চল জীবনের অবগাহনে আবার মেতে উঠুক। পরিশেষে গোপালের ভাষায়; সৃষ্টিকর্তাই এখন ভরসা।
সম্পাদক : কবীর আহমদ সোহেল
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ আব্দুল হক
ঢাকা অফিস : ২৩৪/৪ উত্তর গোড়ান, খিলগাঁও, ঢাকা ।
সম্পাদক কর্তৃক প্রগতি প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিঃ, ১৪৯ আরামবাগ, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।
সিলেট অফিস: ২৩০ সুরমা টাওয়ার (৩য় তলা)
ভিআইপি রোড, তালতলা, সিলেট।
মোবাইল-০১৭১২-৫৯৩৬৫৩, ০১৭১২-০৩৩৭১৫
E-mail: provatbela@gmail.com,
কপিরাইট : দৈনিক প্রভাতবেলা.কম
আমাদের সর্ম্পকে গোপনীয়তা যোগাযোগ
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি