বিশ্বনাথে পলো বাওয়া উৎসবে মানুষের ঢল

প্রকাশিত: ৬:৩৮ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৫, ২০২৫

বিশ্বনাথে পলো বাওয়া উৎসবে মানুষের ঢল

প্রভাতবেলা প্রতিবেদক: শুষ্ক মৌসুমে হাওর-বিলের পানি শুকিয়ে গেলে দলবেঁধে পলো ও ঠেলা জাল দিয়ে মাছ ধরতে নামতেন গ্রামের মানুষ। সেই দিন যেন হারিয়ে গেছে। এখন এভাবে মাছ ধরার দৃশ্য তেমন চোখে পড়ে না। তবে দুই শ বছরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে প্রতি বছরের পহেলা মাঘ ‘পলো বাওয়া’ উৎসব পালিত হয় সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের গোয়াহরি গ্রামে।

 

এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সকালে গ্রামের বড়বিলে মাছ ধরে এলাকাবাসী। ঝপ ঝপা ঝপ শব্দের তালে দুপুর পর্যন্ত চলে ‘পলো বাওয়া’। এ উৎসবে অংশ নিতে ও দেখতে সকাল ৮টা থেকেই গোয়াহরি গ্রামের বাসিন্দাদের পাশাপাশি আশপাশের কয়েক গ্রামের লোকজন বড় বিলের পাড়ে জড়ো হয়। পুরুষদের পাশাপাশি অনেক নারী ও শিশু আসে।

 

 

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিলের তীরে পলো আর মাছ ধারার নানা সরঞ্জাম নিয়ে অপেক্ষমান ছোট-বড় শত শত সৌখিন মাছ শিকারি মানুষ। পুরো বিল জুড়ে বিরাজ করছে উৎসবের আমেজ। পরে সকাল ১০টায় প্রায় পাঁচ শতাধিক শিকারি একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়েন বিলে।

আরও পড়ুন  করোনা ভাইরাসে মৃত ২৮৩৫, বিশ্বজুড়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি

 

শুরু হয় মাছ ধরার প্রতিযোগিতা। আনন্দ-উল্লাসে দুপুর পর্যন্ত চলে পলো বাওয়া। এ সময় শিকারীদেরও কেউ কেউ টান দেন গানে, কেউবা মাছ ধরতে পেরে মেতে ওঠেন উল্লাসে। শিকারিদের পলো, উড়াল জাল, লাটি জাল, ঠেলা জালে ধরা পড়তে থাকে বোয়াল, শোল, গজার, ব্রিগেড, রুই, কাতলা, কার্প, বাউশসহ নান প্রজাতির মাছ। এ দৃশ্য উপভোগ করতে গ্রামের নারী-শিশু থেকে শুরু করে সকলেই ভিড় করেন বিলের পাড়ে।

 

 

পলো দিয়ে মাছ ধরতে এসেছিলেন ইকবাল হোসেন। পেয়েছেন দুটি বোয়াল মাছ। তার বন্ধু সোহাগ ধরেছেন বড় একটি শোল ও একটি কাতলা। আলিম উদ্দিন নামে আরেক যুবক ধরেছেন দুটি বোয়াল।

 

 

বড় একটি বোয়াল ও কার্ফু মাছ ধরা নাজমুজ্জামান বলেন, ‘অন্য বছরের তুলনায় এবার মাছ কিছুটা কম। গত বছর তিনি চারটি মাছ ধরেছিলেন। বিলের ধারে দাঁড়িয়ে নানা বয়সী মানুষ উপভোগ করেন এই মাছশিকার।’

 

 

গ্রামবাসী জানান, এটি তাদের দুই শ বছরের পুরনো সংস্কৃতি। একে কেন্দ্র করে প্রতি বছর পূর্ব নির্ধারিত সময়ের কিছুদিন আগ থেকেই গ্রাম জুড়ে চলে উৎসবের আমেজ। যার যার মতো পলোসহ মাছ শিকারের নানা সরঞ্জাম সংগ্রহ করে প্রস্তুতি নেন মাছ শিকারিরা। উৎসবের দিন সকাল থেকেই শুরু হয় হাঁকডাক ও হই-হুল্লোড়। উৎসব উপভোগ করতে তীরে অবস্থান নেন সকল বয়সী মানুষ। উৎসব করতে দেশে আসেন প্রবাসীরাও।

আরও পড়ুন  ‘বস দোয়া করিয়েন। করোনা পজিটিভ হয়ে গেছে আমার।’

 

 

গ্রামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী সুজন মিয়া জানান, কেবল পলো বাওয়া দেখতে এ সপ্তাহে সপরিবাওে দেশে এসেছেন তিনি। এই উৎসব খুব ভালো লাগে।

 

 

আয়োজক কমিটির সদস্য ইকবাল হোসাইন বলেন, ‘আমাদের পূর্ব পুরুষের পুরনো সংস্কৃতি এ পলো বাওয়া উৎসব। আমরা এর ধারাবাহিকতা বজায় রেখে আসছি।’

 

 

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজ আরব খান বলেন, ‘মাঘ মাসের প্রথম দিনে পলো বাওয়া উৎসব পালিত হয়ে আসছে। এ উৎসব শত শত মানুষ অংশগ্রহণ করে থাকেন। এটি প্রায় দুই শ বছর ধরে পালিত হয়ে আসছে।’

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

সর্বশেষ সংবাদ