সিলেট নির্বাচন অফিসে মনোনয়ন পত্র দাখিল করে একজন কাউন্সিলর প্রার্থী মিডিয়ার সামনে বক্তব্য দিচ্ছেন: আমি সবসময় আমার ওয়ার্ড বাসীর সেবা করি। যেমন, যার খাবার নেই তাকে খাবার দেই, গরীবদের পাড়ালেখার খরচ দেই, টাকার অভাবে কারো মেয়ে বিয়ে দিতে পারছে না, আমি বিয়ে দিয়ে দেই।
দর্শক সারির লোকদের মধ্যে একজন ৭০ বছর বয়সী মহিলা বসে বসে অপলক দৃষ্টিতে এই কথাগুলো শুনছিলেন। বক্তব্য শেষ হওয়ার সাথে সাথে ঐ বক্তা প্রার্থীর কাছে মহিলাটি হাত পেতে বললেন, বাবা আমার খুব খিদে পেয়েছে আমাকে ১০০ টা টাকা দেন আমি ভাত খাব।
উত্তরে বক্তা বৃদ্ধ মহিলাকে বললেন- “যা হর বেটি ইকান থাকি” এভাবে দাতা হিসেবে কয়েকটি চ্যানেলে উনি বক্তব্য দিলেন আর বৃদ্ধ মহিলাটি নাছোড় বান্দার মতো টাকা চাইতেই থাকে।
একটা সময় ঐ কাউন্সিলর প্রার্থী মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দেয়া শেষ করে সাথে থাকা কর্মী সমর্থক কে নিয়ে রেষ্টুরেন্টের দিকে গেলেন। বৃদ্ধ মহিলার সাথে আরেক বৃদ্ধ মহিলাও হাত পেতে পেতে উনাদের সাথে ঐ রেষ্টুরেন্টে গেল।
এবার ঐ প্রার্থী, কর্মী সমর্থক সহ টেবিলে বসে খাবার অর্ডার দিলেন, ঠিক সেই সময় এই ক্ষুদার্থ দুই মহিলা বললেন বাবারা- আমাদেরকে চারটা ভাত খবাও!
তখন ঐ কাউন্সিলর প্রার্থী রেগে গিয়ে হোটেল বয় কে বললেন: কি রে তোমাদের এখানে খাব নাকি চলে যাব?
হোটেল বয়: কেন স্যার কি হয়েছে?
উনি বললেন: দেখ না এই ভিক্ষুক মহিলারা কিভাবে ছাতাইতেছে!!
এবার হোটেল বয় এই বৃদ্ধ মহিলাদের কে তাড়িয়ে হোটেল থেকে বাহির করে দিতে লাগলো।
মহিলারা দু হাত তুলে বলল: হে আল্লাহ! আমাদের খুব খিদে পেয়েছে আর ওরা আমাদের কে চারটি ভাত না খাওয়াইয়া তাড়িয়ে দিচ্ছে। আল্লাহ তুমি এর বিচার করো।
আমি চোখের পানি আর ধরে রাখতে পারলাম না। কারণ, শুরু থেকে আমি এসব বিষয়গুলো উপলব্ধি করছিলাম।
এবার আর ধৈর্য ধরতে পারিনি। জোরে হাক দিয়ে হোটেল বয় কে বললাম: এই মহিলাদের কে আর একটি বার তাড়াবার চেষ্টা করলে খুব অসুবিধা হবে। এরা কি মানুষ নয়? আমার কথা শুনে সবাই আমার দিকে তাকিয়ে রইল। আমি ঐ মহিলাদের কে একটা টেবিলে বসাইয়া বললাম আপনারা কি কি খেতে চান বলেন।
হোটেল বয় কে ডেকে বললাম তোমাদের রেষ্টুরেন্টের খাবার মেনুটা মহিলাদের সামনে এনে দাও (যদিও বৃদ্ধ মহিলারা মেনু বুঝবেন না)। উনারা মেনু শুনে বললেন আমি গরুর মাংস খাব, আরেকজন বললেন আমি বোয়াল মাছ খাব, হোটেল বয় খাবার এনে দিল। হোটেল বয়দেরকে টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে থেকে সার্ভিস দিতে বললাম।
চেষ্টা করলাম মহিলারা যেন সেই প্রার্থীর চেয়ে ভালো সম্মানে সার্ভিস পায় এবং খাবার খেতে পারে। এদিকে আমার পকেটে বিল দেয়ার মতো সেই পরিমাণ টাকা ছিল না তাই বিকাশ থেকে টাকা উত্তোলন করতে বাহিরে গেলাম এবং টাকা নিয়ে এসে বিল দিলাম আর তাদের সাথে কিছু সময় গল্প করলাম।