সিটি করপোরেশনে সৃষ্ট ঘটনা প্রসংগে যা বল্লেন ইকরামুল কবির।
৩ আগস্ট সিলেট সিটি করপোরেশনে মূলধারার সাংবাদিক ও জনৈক ‘মোবাইল সাংবাদিক’ এর মধ্যে এক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। ঘটনায় পাল্টাপাল্টি বক্তব্য এখন সোশ্যাল মিডিয়ায়। দায়ের হয়ে জিডি পাল্টা জিডি। আসলে কি ঘটেছিল সেদিন? কেন ঘটেছিল?
এ ঘটনার আদ্যপ্রান্ত তুলে ধরেছেন সেদিনকার প্রত্যক্ষদর্শী, সিলেট প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি, সময় টেলিভিশনের সিলেট ব্যুরো প্রধান ইকরামুল কবির । তাঁর ফেসবুক টাইমলাইনে দেয়া ঘটনার বিবরণ প্রভাতবেলা পাঠকদের জন্য হুবুহু উপস্থাপন করা হলো।♦ প্রভাতবেলা ডেস্ক♦
সাংবাদিকতায় উগ্র আচরনের সুযোগ নেই।
সভার শুরুতে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর উদ্বোধনী বক্তব্য চলাকালে অপিরিচিত এক ব্যক্তি মোবাইল দিয়ে দর্শকদের ছবি তোলার জন্য আলোচকদের টেবিলের ডান পাশে চলে আসেন। সেখানে বসা ছিলাম আমি এবং সিলেট বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হিমাংশু লাল রায়, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নির্বাহী সদস্য মাহা উদ্দিন আহমদ সেলিম, কাউন্সিলর কয়েস লোদীসহ অনেক গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ।
ওই ছেলেটি সবাইকে পিছন দিয়ে মোবাইল দিয়ে ছবি তোলার এক পর্যায়ে পরিচালক (স্বাস্থ্য) সহ কয়েকজনের গায়ে লেগে যায়, যা আমাদের কাছে ছিল দৃষ্টিকটু, কারন দিন শেষে অতিথিরা ভাববেন তিনিও হয়তোবা সাংবাদিক। উল্লেখ্য, এই জায়গা থেকে কোনো চিত্রও সাংবাদিক ছবি তুলে নাই, এবং তোলার কথাও না।
তার ছবি তোলার স্টাইল একসময় অসংযত পর্যায়ে চলে যায়, তখন সিনিয়র একজন হিসেবে আমি নিজে তাকে ভদ্রতার সহিত জিজ্ঞেস করি যে তুমি কে? এখানে বসা সবাইকে তোমার চোখে লাগে না নাকি? তুমি গিয়ে দূর থেকে বা আমাদের ক্যামেরাগুলো যেখানে আছে সেখান থেকে গিয়ে ছবি তুলো। তখন সে জবাবে আমাকে বলে ‘সবাই তুললে তো দোষ হয়না’ এবং এই কথার সুত্র ধরে সে আমার সাথে তর্কে লিপ্ত হয়।
ঘটনাটি আমার সতীর্থ রাসেলসহ অনেকেই মেনে নিতে পারেনি। তারা তখন সাথে সাথে তার বেয়াদবির প্রতিবাদ জানায়। এই অবস্থায় সে উল্টো প্রান্তে গিয়ে আমার দিকে কটাক্ষ দৃষ্টিতে থাকায় এবং রাসেলকে হুমকি দেয় ‘তোমাদের দেখে নিবো আমি’। এই অনৈতিক আচরণ ফলে তখন তাকে বলা হয় সভাকক্ষ থেকে বের হয়ে যেতে। এই অবস্থায় যখন সে বের হওয়ার সময় মূলধারার সকল টিভি সাংবাদিক ও পত্রিকার চিত্র সাংবাদিকদের সাথে অসৌজন্যমুলক আচরন দেখিয়ে বের হয়ে যায় ।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে তার এই আচরণের কারণ জানতে কয়েকজন ক্যামেরাপার্সন তার সাথে বাহিরে গিয়ে জানতে চান যে, কেন সে এমনটি করলো। ঘটনার পরিস্থিতি যাতে জটিল না হয় সে জন্য এই পরিস্থিতিতে আমি বের হয়ে তাকে চলে যেতে বলি। তখন আমি জানতে পারি তার নাম শাহপরান সুমন। তখন সে চলে না গিয়ে উল্টো দেখে নিবো বলে সবার ওপর মারমুখো আচরণ করতে থাকে। তার এই আচরণের প্রতিবাদ জানায় মূলধারার সাংবাদিকরা।
এক পর্যায়ে সে এক চিত্র সাংবাদিকের গায়ে ধাক্কা দিয়ে বলে সবাইকে দেখে নিবো। এতে সবাই ক্ষিপ্ত হয় উঠে। এ পর্যায়ে আমি, যমুনা টিভির মাহবুবুর রহমান রিপন, চ্যানেল এস’এর মইন উদ্দিন মঞ্জু, টিসিজেএ’র সভাপতি দিগেন সিংহ, ইমজা’র সাধারণ সম্পাদক আনিস রহমান, টিসিজেএ’র সাধারণ সম্পাদক ইকবাল মুন্সি, যমুনা টিভির মাইদুল ইসলাম রাসেলসহ উপস্থিত সবাই তাকে দমাতে চেষ্টা করি। তখন সে আরও মারমুখি হয়ে উঠলো দ্বিপ্ত টিভির ক্যামেরা পার্সনের ক্যামেরাতে আঘাত করে যাতে সে এসব ফুটেজ না তুলে । এর সাথে সাথেই দ্বীপ্ত টিভির ক্যামেরা পার্সন তাকে ধাক্কা দিয়ে বলে ক্যামেরাতে সে হাত দিলো কেন ।
এই পরিস্থিতিতে তখন সবাই মিলে তাকে করিডোরে রাখা সোফায় বসিয়ে রাখে এবং সিসিকের নিরাপত্ত কর্মী ও পুলিশ এসে সেখানে অবস্থান নেয়। তার সাথে ব্যাক্তিগত ঝামেলায় না জড়িয়ে সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেন তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার । তার হুমকী ধামকীতে নিরাপত্তহীনতা মনে করে টেলিভিশন চিত্র সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে টিসিজেএ’র সভাপতি দিগেন সিংহ কতোয়ালী থানায় জিডি এন্ট্রি করেন।
উল্লেখ্য, আমরা ৩৫ বছরের মাঠ পর্যায়ে ‘সাংবাদিক’ হিসেবে তাকে চিনি না। এক ব্যক্তি মোবাইল দিয়ে অসৌজন্যভাবে ছবি তোলা আমার কাছে দৃষ্টিকটু লাগায় আমি তাকে ওই অবস্থায় ছবি তুলতে নিষেধ করেছিলাম। মনে করি সাংবাদিকতায় বেআদবির সুযোগ নাই। সাংবাদিকতা যে কেউ করতে পারে তবে তাকে সকল নিয়ম নীতি মেনেই করতে হবে । সাংবাদিকতায় যেমন নিয়মনীতি জানা দরকার তেমন আচারআচরনও । কিন্তু ইদানিং সাংবাদিকতার নামে মোবাইল হাতে যা করা হচ্ছে তা সামাজিক অস্থিরতা, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, নিয়মনীতি ভঙ্গ করে যা খুশি তাই করা হচ্ছে । একজন সাংবাদিক বা সচেতন নাগরিক হিসেবে আমরা এর প্রতিবাদ করবো এটাই স্বাভাবিক । তিলকে তাল করে যারা নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করছে তাদেরকে সবাই চিনে ।