মার্কিন দূতাবাসের সাবেক কর্মকর্তাসহ দুজন খুন

প্রকাশিত: ১২:৫০ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৬, ২০১৬

প্রভাতবেলা প্রতিবেদক: রাজধানীর কলাবাগানে বাসায় ঢুকে দুজনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে কলাবাগান থানায় মামলা দুটি করা হয়। মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। গতকাল রাতেই তাঁদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে।কলাবাগান থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) হাসান জানান, কলাবাগানে জোড়া খুনের ঘটনায় নিহত জুলহাজ মান্নানের ভাই একটি মামলা করেছেন। অন্য মামলাটি করেছে পুলিশ। উভয় মামলায় অজ্ঞাত ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে।

রাজধানীর কলাবাগানে বাসায় ঢুকে দুজনকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুস্কৃতকারীরা। একই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরো দুজন। নিহতদের একজন মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সাবেক প্রটোকল অফিসার জুলহাস মান্নান (৩৫)। তিনি সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী দীপু মনির খালাতো ভাই। অপরজন তার বন্ধু তনয়। জুলহাস রূপবান পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। ওই পত্রিকাটি সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করতো। জুলহাস নিজেও সমকামীদের অধিকার নিয়ে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন কাজ করে আসছিলেন। পালিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তায় টহলরত পুলিশ দৃষ্কৃতকারীদের ধাওয়া করে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। কলাবাগানের উত্তর ধানমন্ডিতে তেতুল গলির ৩৫ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলায় সোমবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটেছে। কলাবাগান থানার এএসআই হাবিবুর রহমান জানান, হামলাকারীরা সংখ্যা ছিল পাঁচজন। গায়ে নেভি ব্লু টি শার্ট ও প্রত্যেকের কাঁধে ছিলো ব্যাগ। বিকেল ৫টা থেকে সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে এ ঘটনা ঘটে বলে জানতে পারেন তারা। ঘটনার সময় নিহতরা ছাড়াও বাসায় গৃহকর্মী ও জুলহাসের মা ছিলেন। প্রত্যক্ষ্যদর্শীরা জানান, এসময় হামলাকারীরা বাসার দারোয়ানের উপরও হামলা চালায়। তাদের একজনের হাতে পিস্তলও দেখেছেন তারা। ডিএমপির ধানমন্ডি জোনের সহকারী কমিশনার রেজাউল ইসলাম বলেন, অজ্ঞাত কয়েকজন দুর্বৃত্ত তাদেরকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে ফাঁকা গুলি করে পালিয়ে যায়। বাসার নিরাপত্তাকর্মী পারভেজ জানান, বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে কয়েকজন দুর্বৃত্ত গেটে এসে বলে জুলহাস সাহেবের একটি পার্সেল আছে। ব্যাগটি নিয়ে যখন আমি জুলহাস সাহেবের বাসায় প্রবেশ করি, তখন তিনজন আমার সাথে বাসায় প্রবেশ করে। বাসায় প্রবেশের সাথে সাথে তারা আমার মাথার পিছনে আঘাত করলে আমি অজ্ঞান হয়ে যাই। অপর দারোয়ান সুমন বলেন, বিকেল ৫টার দিকে তিনজন ওই বাসার গেটে গিয়ে জুলহাসের সাথে দেখা করার কথা বলে। তারা নিজেদেরকে কুরিয়ার সার্ভিসের লোক বলে পরিচয় দেয়। জুলহাসের সাক্ষর নেয়ার জন্য তারা তার বাসায় যাওয়ার কথা বললে গেট থেকে তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়। একটু পরে তারা চিৎকার ও গুলির শব্দ শুনতে পান। তখন তারা নিচের মেইন গেট আটকে দেন। এসময় ওই দুর্বৃত্তরা গুলি করতে করতে নিচে নেমে আসে। তারা গেট তালাবদ্ধ দেখে পারভেজকে আঘাত করে। এতে পারভেজের কপালের বা দিক কেটে যায়। পরে দুর্বৃত্তরা গেটের চাবি নিয়ে গেট খুলে চলে যায়। সুমন বলেন, তার ধারণা বাইরে আরো দুর্বৃত্তরা ছিলো। তিনি বলেন, দুর্বৃত্তরা চলে যাওয়ার পরে তিনি দোতলায় জুলহাসের বাসায় গিয়ে দেখেন সিড়ির উপর জুলহাস রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন। পরে তিনি চিৎকার দিলে অনেকে ছুটে আসেন। তাদেরকে দিয়ে পারভেজকে তিনি হাসপাতালে পাঠান। আমাদের হাসপাতাল সূত্র জানান, রাত ৮টার দিকে লাশ দু’টি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। নিহত তনয় মজুমদার জুলহাসের বন্ধু ছিলেন। জুলহাস দীর্ঘদিন ধরে সমকামীদের অধিকার রক্ষায় আন্দোলন করে আসছিলেন। বাংলাদেশে এ নিয়ে তিনি রূপবান নামের একটি পত্রিকাও বের করেন। ওই পত্রিকার তিনি সম্পাদক ছিলেন। এদিকে, ঘটনার পর ডা. দীপুমনিসহ অনেকেই ওই বাসায় ছুটে যান। পুলিশের ঊর্ধতন কর্মকর্তা, গোয়েন্দা সংস্থার কর্তারাসহ অনেকেই ওই বাসায় গিয়ে প্রাথমিকভাবে তদন্ত শুরু করেন। জুলহাস ছয়তলা ওই বাড়ির দ্বিতীয় তলায় বসবাস করতেন। বাড়ির দারোয়ান পারভেজ একমাস হয় ওই বাড়িতে কাজে যোগ দিয়েছেন। আর সুমন তিন মাস ধরে দারোয়ান হিসেবে কাজ করছেন।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

সর্বশেষ সংবাদ