সিলেট ২১শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ |
প্রকাশিত: ৪:০৩ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১১, ২০২৩
বাংলাদেশে থাকাবস্থায় সে ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে যাতায়াত শুরু করেছিল। দু-এক সপ্তাহ বাদে বুঝতে পারলাম বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার সাথে ইংল্যান্ডের প্রাথমিক-মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাব্যবস্থার অনেক তফাত। বইপত্র যা দেওয়া হয়েছিল তা স্কুলেই থাকতো তার নামে বরাদ্দকৃত স্থানে।
যাই হোক, এভাবে চতুর্থ শ্রেণির পাঠ শেষ করতে না করতেই আবারও ছন্দপতন। আমার পড়াশোনা শেষ। নিজ দেশে কর্মস্থলে ফিরে আসি। আমার ছেলের বাস্তব অভিজ্ঞতাভিত্তিতে শিখন পদ্ধতির দিন শেষ। আবারও শুরু হলো মুখস্থ নির্ভর শিক্ষা।
গাইবান্ধায় এক নিকটাত্মীয়ের বাসায় বেড়াতে গিয়ে কথা হলো বেশ কয়েকজন শিক্ষকের সাথে। কেউ বেশ প্রবীণ, অতিসম্প্রতি অবসরে গেছেন, কেউবা আবার দু-এক বছরের মধ্যে অবসরে যাবেন, আবার কেউ মধ্যবয়সী, উনাদের দুজন এনটিআরসি-এর মাধ্যমে বছর তিনেক আগে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হয়েছেন অর্থাৎ বয়সে বেশ তরুণ। এসব শিক্ষকের মধ্যে তিনজন নতুন শিক্ষাক্রম বিষয়ে প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন।
শিক্ষকদের সাথে আলোচনায় যে বিষয়টি আমার বোধগম্য হলো তা এমন যে, পূর্ববর্তী শিক্ষাক্রম অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছিল মুখস্থ নির্ভর, আর বর্তমান শিক্ষাক্রম অভিজ্ঞতা নির্ভর। আগের শিক্ষাক্রমে প্রত্যেক শ্রেণিতে পরীক্ষা দিতে হতো, আর বর্তমানে শিক্ষার্থীদের বছর শেষে বার্ষিক পরীক্ষা দিতে হবে না। বরং প্রতিদিনই তারা বাস্তব অভিজ্ঞতা নির্ভর শিক্ষা আয়ত্ত করবে এবং পরীক্ষা দেবে।
তবে আমার আলোচনার বিষয় পাঠ্যবইয়ের বিষয়বস্তু নয়। বরং আমার প্রশ্ন, বর্তমান শিক্ষাক্রম কতটা বাস্তবমুখী হবে? আমাদের দেশে বিদ্যালয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত, বিদ্যালয়ের অবকাঠামো, শিক্ষা উপকরণ—এসব সার্বিক দিক বিবেচনায় এই শিক্ষাক্রম বাস্তবায়ন আদৌ সম্ভব কি?
উদ্বেগের বিষয় হলো, শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষকের সংখ্যার অনুপাত কম হলে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকের মধ্যে সম্পর্কের দূরত্ব বাড়ে। শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে সমস্যা থাকে। কারণ ক্লাসে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হলে একজন শিক্ষক আলাদা আলাদাভাবে সব শিক্ষার্থীর প্রতি সমান মনোযোগ দিতে পারেন না। এর মধ্যে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীর প্রতিও আলাদা যত্নের প্রয়োজন, শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হলে কোনোভাবেই পাঠদানের মানদণ্ড বজায় রাখা সম্ভব হয় না।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৪ বছর সৃজনশীল শিক্ষাব্যবস্থা থাকার পরও সরকারের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, ৪১ শতাংশ শিক্ষকই সৃজনশীল ব্যবস্থা বোঝেননি। এই অবস্থা থাকলেও নতুন শিক্ষাক্রম শুরুর আগেও ই-উপকরণ ব্যবস্থাপনার ওপর শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। অর্থাৎ কয়েক বছরে যেসব বিষয়ে শিক্ষকরা প্রশিক্ষণ পেয়েছেন, তার থেকে বর্তমান শিক্ষাক্রম পুরোপুরি ভিন্ন।
একমুখী শিক্ষা হলেও শহরের শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপকরণ ও গ্রামীণ পর্যায়ে শিক্ষা উপকরণ সমানভাবে বণ্টন করা যায়নি। বেশিরভাগ বিষয়ের জন্য পাঠ সহায়ক উপকরণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় পাওয়া যায় না।
যদি শিখন ফল দীর্ঘস্থায়ী করতে হয় তাহলে কঠিন বিষয়গুলো উপকরণের সহায়তায় সহজে উপস্থাপন ও অনুধাবন যোগ্য করতে হবে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন, একমুখী শিক্ষা হলেও শহরের শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা উপকরণ ও গ্রামীণ পর্যায়ে শিক্ষা উপকরণ সমানভাবে বণ্টন করা যায়নি। বেশিরভাগ বিষয়ের জন্য পাঠ সহায়ক উপকরণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় পাওয়া যায় না।
একদিকে উপকরণ সংকট অন্যদিকে উপকরণ ব্যবস্থাপনার জন্য শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় জ্ঞান, দক্ষতার শূন্যতা কী উপায়ে পূরণ করবে নতুন শিক্ষাক্রম? শিক্ষক-শিক্ষার্থী, শিক্ষকের প্রশিক্ষণ ছাপিয়ে যে ভবন, পরিবেশে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাগ্রহণ করছে তাও কি পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা পরিবেশ দিতে পারছে?
একই সাথে অপর্যাপ্ত স্যানিটেশন সুবিধাগুলো স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, সাড়ে ১০ হাজার সরকারি বিদ্যালয়ে খেলার মাঠসহ মৌলিক সুযোগ-সুবিধা এবং বিনোদনমূলক স্থানের অভাব রয়েছে। এসব অভাব শিক্ষার্থীদের কল্যাণ এবং বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে। অপর্যাপ্ত অবকাঠামো বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিক্ষার্থীদের শিক্ষা গ্রহণে নিরুৎসাহিত করে।
তার উত্তর কিছুটা পাওয়া যায় সেন্টার ফল পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর সাম্প্রতিক একটি গবেষণার ফলাফলে। গবেষণাটির তথ্য বলছে, প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো অপর্যাপ্ত সরকারি তহবিল। এর ফলে যেমন প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণের জোগান দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, তেমনি প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক/প্রশিক্ষক নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
ড. প্রদীপ কুমার পাণ্ডে ।। অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদক : কবীর আহমদ সোহেল
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ আব্দুল হক
ঢাকা অফিস : ২৩৪/৪ উত্তর গোড়ান, খিলগাঁও, ঢাকা ।
সম্পাদক কর্তৃক প্রগতি প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিঃ, ১৪৯ আরামবাগ, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।
সিলেট অফিস: ২৩০ সুরমা টাওয়ার (৩য় তলা)
ভিআইপি রোড, তালতলা, সিলেট।
মোবাইল-০১৭১২-৫৯৩৬৫৩, ০১৭১২-০৩৩৭১৫
E-mail: provatbela@gmail.com,
কপিরাইট : দৈনিক প্রভাতবেলা.কম
আমাদের সর্ম্পকে গোপনীয়তা যোগাযোগ
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি