সিলেট ৫ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ |
প্রকাশিত: ৭:২১ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৭, ২০২৩
খন্দকার মাজেদুল ইসলাম :
নতুন প্রজন্মের সঙ্গে পালকির পরিচয় নেই বললেই চলে। তারা পালকির কথা বইয়ের পাতায় এবং লোক ও কারু জাদুঘরে গিয়ে দেখতে ও শুনতে পাচ্ছে। কিন্তু আগের দিনে বিয়ের বরযাত্রায় পালকির ছিল একটি ভিন্ন জলুস। বর পালকি চড়ে কনের বাড়ি যেত, আবার কনেও পালকি চড়ে শ্বশুরবাড়ি আসত।
সাধারণত একটি বা দুটি লম্বা বাঁশ বা কাঠের দণ্ডে বড় চেয়ার বা খাট ঝুলিয়ে এবং কাঠ, বাঁশ বা কাপড় দিয়ে আবৃত করে পালকি তৈরি করা হতো। পালকি দেখতে অনেকটা কাঠের বাক্সের মতো। প্রতিটি পালকির দৈর্ঘ্য ৬ ফুট ও প্রস্থ তার অর্ধেক। কাঠামো লম্বা ও দুই পাশে বাঁশের সাহায্যে গাঁথা। পালকির ওপরে দামি কাপড় দ্বারা মোড়ানো হয়। পালকি বহনকারীদের ডাকা হতো ‘কাহার’ বা ‘বেহারা’ নামে। প্রতিটি পালকি চালাতে চারজন বেহারা বা কাহার প্রয়োজন হতো।
একসময় পালকি আমাদের দেশের জাতি, ধর্মবর্ণ, ধনী-গরিব সবার কাছে সমান পছন্দনীয় বাহন ছিল। তখন আবার সব পরিবারে পালকি ছিল না। বিত্তশালী, জমিদার ও উচ্চবংশীয় লোকদের প্রত্যেকের বাড়িতে পালকি ছিল। সে সময় পালকি বংশের মর্যাদার প্রতীক হিসেবেও ব্যবহৃত হতো। নিম্নবিত্ত পরিবারের লোকদের বাড়িতে পালকি ছিল না। তাই তাদের জন্য ছিল অন্য ব্যবস্থা। তারা বিভিন্ন প্রয়োজনে পালকি ভাড়া করত অর্থ বা কড়ির বিনিময়ে। কিন্তু বিয়ে বা যে কোনো উৎসবে পালকি থাকতেই হতো।
পালকি আমাদের দেশের হাজার বছরের পুরোনো ঐতিহ্য। পালকি নিয়ে লেখা হয়েছে গান, ছড়াসহ হাজারো কবিতা। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর থেকে শুরু করে ছন্দের জাদুকর সত্যেন্দ্রনাথ দত্তসহ অনেক কবি পালকি নিয়ে লিখেছেন। পালকি চলার সময় বেহারারা ‘হুন হুনা হুন হুনরে’ বা ‘চার বেহারার পালকি চড়ে যায় রে কন্যা পরের ঘরে’ এসব গান গাইত। এ ছাড়া ‘পালকি চলে, পালকি চলে, গগনতলে আগুন জ্বলে’… আরও সুন্দর ছন্দবদ্ধ কথা ‘… তুমি যাচ্ছ পালকিতে মা চড়ে …’।
সে সময় পালকির কথা সুন্দরভাবে বর্ণনা করেছেন বিশ্বখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা তার এ দেশে আসা ভ্রমণকাহিনী ‘রোহেলা’য়। তিনি পালকি বহনের দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন।
এ ছাড়া সমাজের জ্ঞানী-গুণী মানুষকে বরণ করতে সে সময় পালকির বিকল্প যেন পালকিই ছিল। আমাদের দেশে এমন এক সময় গেছে, যখন বিয়ের অনুষ্ঠান পালকি ছাড়া হতোই না, পালকি ছাড়া বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন হলে যেন নিজেদের হতভাগা বলে মনে হতো। পালকি ঘিরে অনেক লোক জীবিকা নির্বাহ করত।
সম্পাদক : কবীর আহমদ সোহেল
নির্বাহী সম্পাদক: মোঃ আব্দুল হক
ঢাকা অফিস : ২৩৪/৪ উত্তর গোড়ান, খিলগাঁও, ঢাকা ।
সম্পাদক কর্তৃক প্রগতি প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিঃ, ১৪৯ আরামবাগ, ঢাকা থেকে মুদ্রিত ও প্রকাশিত।
সিলেট অফিস: ২৩০ সুরমা টাওয়ার (৩য় তলা)
ভিআইপি রোড, তালতলা, সিলেট।
মোবাইল-০১৭১২-৫৯৩৬৫৩, ০১৭১২-০৩৩৭১৫
E-mail: provatbela@gmail.com,
কপিরাইট : দৈনিক প্রভাতবেলা.কম
আমাদের সর্ম্পকে গোপনীয়তা যোগাযোগ
Design and developed by ওয়েব হোম বিডি