এইচএসসিতে সিলেটে পাশের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে

প্রকাশিত: ৭:৫৯ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৯, ২০১৬

প্রভাতবেলা ডেস্ক:২০১২ ও ২০১৩ সালে টানা দুইবার সারাদেশের মধ্যে প্রথম হয়ে ‘চমকে’ দেয় সিলেট। ‘ম্যাজিকেল’ এই ফলাফলের পরের দুই বছর অর্থাৎ ২০১৪ ও ২০১৫ সালে সারাদেশের মধ্যে দ্বিতীয় হয়ে আবারো সাড়া ফেলে দেয় সিলেট। অথচ মাত্র চার বছরের মাথায় সিলেট বোর্ড একলাফে নেমে এসেছে ৬ষ্ঠ স্থানে। শুধু চার ধাপ নামেনি, এইচএসসিতে এবার সিলেটে পাশের হার ও জিপিএ-৫ দুটোই কমেছে। সারাদেশে যেখানে গড় পাশের হার ও জিপিএ-৫ বেড়েছে, সেখানে সিলেটে পাশের হার কমেছে প্রায় ৬ শতাংশ। শিক্ষাবোর্ড সংশ্লিষ্টরা ফলাফল প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন সিলেটে এবারের ফলাফল ‘ভালোও না, খারাপও না।’
ঘোষিত ফলাফলে সিলেটে এ বছর গড় পাশের হার ৬৮ দশমিক ৫৯। যা গত বছর ছিলো ৭৪ দশমিক ৫৭। এবার সর্বমোট ৬৩ হাজার ৯শ ৫৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ৪৩ হাজার ৮শ ৭০ জন। এর মধ্যে ছেলে ২০ হাজার ৭শ ৭৯ এবং মেয়ে ২৩ হাজার ৯১ জন। পাশের হার ও জিপিএ-৫ এর দিক দিয়ে সিলেটে ছেলেরা এগিয়ে। মোট জিপিএ-৫ এসেছে ১ হাজার ৩শ ৩০টি। এবছরও শূন্য ভাগ কোন প্রতিষ্ঠান নেই সিলেটে। তবে শতভাগ পাশের কৃতিত্ব দেখিয়েছে সিলেটের পাঁচটি প্রতিষ্ঠান। এসএসসির মতো এইএচসিতেও সিলেটের টপ টুয়েন্টি নির্ধারিত হয়নি।
যে কারণে সিলেটে ফল বিপর্যয়ঃ
শিক্ষাবোর্ড সংশ্লিষ্টদের মতে, এবার নতুন চারটি বিষয়ে সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা নেয়ায় সিলেটে ফলাফলের অবনমন হয়েছে। বিষয়গুলো হলো লজিক, আইসিটি ও ভূগোল। তবে এগুলো ছাড়াও ফলাফলে বেশী প্রভাব ফেলেছে ইংরেজী। গত বছর ইংরেজীতে পাশ করে ৮৭ দশমিক ৫৭ ভাগ শিক্ষার্থী। আর এবার পাশ করেছে ৭৭ দশমিক ৯৫ ভাগ। ইংরেজীতে এবার পাশের হার কমেছে ৯ দশমিক ৬২ শতাংশ। এ ব্যাপারে সিলেট বোর্ডের উপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মইনুল ইসলাম বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার ইংরেজীর প্রশ্নপত্র কঠিন হয়েছে। তাই ইংরেজীতে খারাপ ফল করেছে শিক্ষার্থীরা। আর এর প্রভাব পড়েছে ফলাফলে। তিনি জানান, ইংরেজী ছাড়াও আরো তিনটি বিষয়ে খারাপ করেছে শিক্ষার্থীরা। লজিক, আইসিটি ও ভূগোল বিষয়ে এবার সৃজনশীল পদ্ধতিতে পরীক্ষা হয়। সৃজনশীল হওয়ার কারণে এই তিনটি বিষয়ে পাশের হার কমেছে। তিনি বলেন, সৃজনশীল বিষয়ে দক্ষ শিক্ষকের অভাবেই এমনটি হয়েছে। তবে পর্যায়ক্রমে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের আওতায় আনা হচ্ছে। কয়েক বছরের মধ্যেই এই সমস্যা দূর হবে বলে আশাবাদ তার। উপ পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক সিলেটের এবারের ফলাফলে প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘এবার ভালোও হয়নি, খারাপও হয়নি’। তবে আরো ভালো হলে ভালো হতো।
কোন গ্রেডে কতজন পাশঃ
ঘোষিত ফলাফলে জিপিএ-৫ ছাড়াও ‘এ’ গ্রেডে পাশ করেছে ৬ হাজার ১শ ৩৪ জন। এর মধ্যে ছেলে ২ হাজার ৯শ ৩৭ ও মেয়ে ৩ হাজার ১শ ৯৭। বিজ্ঞানে এ গ্রেড পেয়েছে ৩ হাজার ২৯ জন, মানবিকে ১ হাজার ৬শ ৬২ এবং ব্যবসায় শিক্ষায় ১ হাজার ৪শ ৪৩ জন।
‘এ মাইনাস’ গ্রেডে পাশ করেছে ৭ হাজার ৯শ ৭৮ জন। এর মধ্যে ছেলে ৩ হাজার ৭শ ৯ এবং মেয়ে ৪ হাজার ২শ ৬৯ জন। ‘ব্রি গ্রেডে’ পাশ করেছে ১১ হাজার ৩শ ৭৩ জন। এর মাঝে ছেলে ৫ হাজার ১শ ৭৫ এবং মেয়ে ৬ হাজার ১শ ৯৮। ‘সি গ্রেডে’ পাশ করেছে ১৫ হাজার ৫শ ৩০জন এবং ‘ডি’ গ্রেডে পাশ করেছে ১ হাজার ৫শ ২৫ জন।
কোন বিভাগে কতজনঃ
সিলেটে এবার বিজ্ঞানে ৮ হাজার ৫শ ৬৮ জন পরীক্ষার্থীর মাঝে পাশ করেছে ৭ হাজার ৪শ ৭৪ জন। এর মাঝে ছেলে ৪ হাজার ৯৩ ও মেয়ে ৩ হাজার ৩শ ৮১ জন। বিজ্ঞানে পাশের হার ৮৭.২৩। মানবিকে ৪৩ হাজার ১শ ৪৮ জন পরীক্ষার্থীর মাঝে পাশ করেছে ২৭ হাজার ১৪ জন। এর মধ্যে ছেলে ১১ হাজার ৫৪ এবং মেয়ে ১৫ হাজার ৯শ ৬০। পাশের হার ৬২.৬১।
ব্যবসায় শিক্ষায় মোট ১২ হাজার ২শ ৪৩ জনের মাঝে পাশ করেছে ৯ হাজার ৩শ ৮২ জন। এর মাঝে ছেলে ৫ হাজার ৬শ ৩২ এবং মেয়ে ৩ হাজার ৭শ ৫০। পাশের হার ৭৬.৬৩।
জেলা ভিত্তিক পরিসংখ্যানঃ
সিলেটঃ এই জেলায় ২৬ হাজার ৩শ ৯৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ১৯ হাজার ৩শ ৪৮ জন। এর মাঝে ছেলে ৯ হাজার ৫শ ৬ এবং মেয়ে ৯ হাজার ৮শ ৪২। পাশের হার ৭৩.৩০। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৭৭ জন।
হবিগঞ্জঃ এই জেলায় মোট ১২ হাজার ৬৭ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ৮ হাজার ১শ ৯ জন। এর মধ্যে ছেলে ৩ হাজার ৮শ ১ এবং মেয়ে ৪ হাজার ৩শ ৮। পাশের হার ৬৭.২০। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭৯ জন।
মৌলভীবাজারঃ এই জেলায় মোট ১৪ হাজার ৩শ ৪৪ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাশ করেছে ৮ হাজার ৬শ ৯৬ জন। এর মাঝে ছেলে ৩ হাজার ৮শ ৯০ এবং মেয়ে ৪ হাজার ৮শ। পাশের হার ৬০.৬২। জিপিএ-৫ এসেছে ৫৩টি।
সুনামগঞ্জঃ এ জেলায় মোট ১১ হাজার ১শ ৫১ জনের মধ্যে পাশ করেছে ৭ হাজার ৭শ ১৭ জন। এর মধ্যে ছেলে ৩ হাজার ৫শ ৮২ এবং মেয়ে ৪ হাজার ১শ ৩৫। পাশের হার ৬৯.২০। জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ২২ জন।
পাঁচ বছরের পাশের হারঃ
সিলেট বোর্ডে ২০১২ সালে পাশের হার ছিলো ৮৫.৩৭, ২০১৩ সালে ৭৯.১৩, ২০১৪ সালে ৭৯.১৬, ২০১৫ সালে ৭৪.৫৭ এবং ২০১৬ সালে ৬৮.৫৯।
আট বোর্ডের পাশের হারঃ
ঢাকা বোর্ডে এবারের পাশের হার ৭৩.৫৩, রাজশাহী বোর্ডে ৭৫.৪০, কুমিল্লায় ৬৪.৪৯, যশোরে ৮৩.৪২, চট্টগ্রামে ৬৪.৪০, বরিশালে ৭০.১৩, দিনাজপুরে ৭০.৬৪ এবং সিলেটে ৬৮.৫৯। এছাড়া সারাদেশে এবার গড় পাশের হার ৭৪.৭০।
পাঁচ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শতভাগ পাশঃ
সিলেট বোর্ডে এবার শতভাগ পাশ করেছে পাঁচটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। গত বছর এ সংখ্যা ছিলো ১৩টি। এবার পাঁচ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে সিলেট ক্যাডেট কলেজ, জালালাবাদ ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ, সিলেট খাজাঞ্চীবাড়ী ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ, উইমেন্স মডেল কলেজ এবং কোম্পানীগঞ্জের ভাতরাই স্কুল এন্ড কলেজ।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

সর্বশেষ সংবাদ