মিতব্যয়ী হওয়া ইসলামের শিক্ষা

প্রকাশিত: ১০:০১ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ১, ২০২৪

মিতব্যয়ী হওয়া ইসলামের শিক্ষা
প্রভাতবেলা ডেস্ক: দৈনন্দিন জীবনে আমরা প্রয়োজনের বেশি যা কিছু ব্যয় করি তাই অপচয়। যেকোনো ক্ষেত্রে যতটুকু প্রয়োজন, ঠিক ততটুকুই খরচ করা উচিত। তাই জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের মিতব্যয়ী হওয়া উচিত। মিতব্যয়ী শব্দের অর্থ পরিমাণমতো ব্যয় করা। মিতব্যয়ী কিন্তু কৃপণতা নয়। আমরা যখন ভোরে ঘুম থেকে উঠে দাঁত ব্রাশ করার জন্য ব্রাশ হাতে নিই, তখন ব্রাশে আমাদের যতটুকু পেস্ট প্রয়োজন, ঠিক ততটুকু নেব। ব্রাশ করা শেষ হলে কলের পানি ছাড়ব। সাবান ব্যবহার করে শুকনো জায়গায় রাখব। তাহলে সাবান সহজে গলে যাবে না। আমরা সবচেয়ে বেশি নষ্ট করি পানি। অনেকে আছেন অনবরত কল ছেড়ে রেখে পানির কাজ করেন। এটা ঠিক নয়। যেমন বাসন ধোয়া, কাপড় কাচা, গোসল করার সময় প্রয়োজনমতো পানি ব্যবহার করা কাম্য। খাওয়ার সময় অনেকেই প্লেটে খাবার বেশি নেয়। আর পরে খেতে না পেরে ফেলে দেয়। এগুলো খুবই খারাপ স্বভাব। খাবার নষ্ট করা উচিত নয়। যতটুকু খাব, ঠিক ততটুকুই নেব।

বাড়াবাড়ি কিংবা সীমালঙ্ঘন করা কোনোটিই ইসলামে অনুমোদিত নয়। মিতব্যয় মানুষের সম্পদ বৃদ্ধি করে। অন্যকে সাহায্য করার পথ উন্মুক্ত করে। মিতব্যয়ীরা কখনোই নিঃস্ব হয় না। ভারসাম্যপূর্ণ ও মধ্যমপন্থার জীবন দর্শন হচ্ছে ইসলাম। আর মিতব্যয়িতা ইমানদারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ইসলামে সম্পদ খরচের ক্ষেত্রে কৃপণ হওয়া নিষিদ্ধ। আবার প্রাচুর্যের সময় অপচয়-অপব্যয় করে সম্পদ নষ্ট করাও জায়েজ নেই। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা পানাহার করো, অপচয় করো না।’

অপচয় ও কৃপণতা এই দুই প্রান্তিকতার মাঝখানে মধ্যপন্থা হিসেবে মিতব্যয়ী হয়ে ভবিষ্যতের জন্য কিছু অর্থ সঞ্চয় করে রাখা ভালো। যারা অপচয় ও

কৃপণতার পথ পরিহার করে মিতব্যয়িতার পথ অবলম্বন করবে আল্লাহ তাদের নিজের বান্দা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘(রহমানের বান্দা তো তারাই) যারা অপব্যয়ও করে না আবার কৃপণতাও করে না। তাদের পন্থা হয় এই দুটির মধ্যবর্তী।’ (সুরা ফুরকান ৬৭)

আরও পড়ুন  এবারের হজে কাবাঘর ছোঁয়া যাবে না

অপব্যয় না করে সন্তানদের জন্য কিছু সঞ্চয় করাও ইসলামের শিক্ষা। সন্তানদের কারও মুখাপেক্ষী রেখে যাওয়া নবী (সা.) পছন্দ করেননি। তিনি বলেন, ‘তুমি তোমার উত্তরাধিকারীদের মানুষের করুণার মুখাপেক্ষী রেখে যাওয়ার চেয়ে তাদের সচ্ছল রেখে যাবে, এটাই উত্তম।’ (সহিহ বুখারি)

পরিমিত ব্যয় করে মানুষ দরিদ্র হয় না। অপচয়-অপব্যয় না করার মাধ্যমে মিতব্যয়ী হলে দারিদ্র্যমুক্ত জীবন আল্লাহ মানুষকে দান করবেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি পরিমিত ব্যয় করে সে নিঃস্ব হয় না।’ (মুসনাদে আহমাদ)

কৃপণ না হয়ে মিতব্যয়ী হয়ে সঞ্চয় করলে মানুষ হাজার কোটি টাকার মালিক হতে পারে। ইসলাম এভাবে সঞ্চয় করে বিত্তশালী হতে নিষেধ করে না। বরং সঞ্চিত অর্থ থাকলেই তো অর্থনির্ভর আমলগুলো করা যাবে। অর্থের প্রাচুর্য থাকলে জনকল্যাণমূলক নানা কাজে শরিক হওয়া যাবে। সদকায়ে জারিয়ার অফুরন্ত ধারা চালু করা যাবে। আবার উদ্ধৃত অর্থ নেসাব পরিমাণ হয়ে বর্ষপূর্ণ হলে জাকাতের মতো আরেকটি মহান ইবাদতেরও সুযোগ মিলবে।

মিতব্যয়িতা বলতে ইসলাম কখনোই কার্পণ্যকে বোঝায় না; বরং অপচয় ইসলামে যেভাবে নিন্দিত, কৃপণতা ঠিক তেমনি ঘৃণিত। পবিত্র কোরআনের একাধিক জায়গায় আল্লাহতায়ালা অপচয়ের ব্যাপারে কঠোরতা প্রদর্শন করেছেন এবং অপচয়কারীকে শয়তানের ভাই বলে অভিহিত করেছেন। অথচ এখন তা আমাদের সমাজের আভিজাত্যের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমোদ-প্রমোদ, বিভিন্ন অনুষ্ঠান কিংবা জৌলুস প্রদর্শনের নামে অপচয় করা আজ একটা ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। ব্যক্তিগত সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহার করার ক্ষমতা মানুষের আছে বটে; কিন্তু নৈতিক অধিকার নেই। কেননা ধনীদের এই বিশাল অর্থ-সম্পদে হক রয়েছে সমাজের নিচু শ্রেণির মানুষের। ইরশাদ হচ্ছে, ‘তাদের সম্পদে অধিকার রয়েছে প্রার্থী ও বাঞ্ছিতদের।’ (সুরা জারিয়াত ১৯)

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশে^ প্রতি বছর প্রায় ১৩০ কোটি টন খাদ্য নষ্ট হয়, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬০ লাখ কোটি টাকা। অথচ বিশে^ প্রতিদিন ১৭ কোটি মানুষ ক্ষুধার্ত অবস্থায় দিন কাটায়। বৈষম্যের এ ভয়াল থাবা থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রয়োজন মিতব্যয়িতার শিক্ষা। আমাদের সমাজে যদি এই একটি মূলনীতি যথাযথ অনুসরণ করা হতো, তাহলে আর কোথাও শোনা যেত না ক্ষুধার্তদের আহাজারি, সমাজের চিত্র হয়ে উঠত আরও সুন্দর-সমৃদ্ধ। কারও ভোগের পেয়ালা উপচে পড়ত না, শূন্য থাকত না অন্যের ভোগের হাঁড়ি। ফলে একদিকে যেমন আমরা অপচয়ের অভিশাপ থেকে রেহাই পেতাম, পাশাপাশি হতে পারতাম আল্লাহর প্রিয় বান্দা। আল্লাহতায়ালা মুসলিম উম্মাহকে অপচয় ও কৃপণতা পরিহার করে মিতব্যয়ী হওয়ার মাধ্যমে ইসলামের সৌন্দর্য মানুষের মাঝে তুলে ধরার তাওফিক দান করুন।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

সর্বশেষ সংবাদ