মানুষ মুলত: তিন শ্রেণীর

প্রকাশিত: ৪:১০ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৫, ২০২০

মানুষ মুলত: তিন শ্রেণীর

জয়নাল আবেদীন জুয়েল ♦ কোরআন ও হাদীস ঘেঁটে আমরা আক্বিদাগত ভাবে তিন শ্রেণীর মানুষের সন্ধান পাই। যেমনঃ (১) কাফের (২) মুসলমান(৩) মোনাফেক।

কাফেরঃ কেউ যদি পবিত্র কোরআনকে আল্লাহ প্রেরিত গ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃতি না দেয় তাহলে সে ইসলামী পরিভাষায় কাফের। কেউ যদি বলে মুহাম্মদ(দঃ) কে আমি নবী হিসেবে স্বীকার করিনা। তাহলে সেও কাফের। কেউ বললো মানুষ বানিয়েছে ধর্ম, ধর্ম বানায়নি মানুষ, সেও কাফির। কাফির শব্দের ভেতরে নাস্তিকরাও আছে, অংশীবাদীরাও আছে। যারা বলে ফেরেশতা বলে কিছু নাই, জ্বীন বলে কিছু নাই, আদম ও শয়তানের কাহিনী মিথ্যা, তারাও কাফের। যারা বলে আমরা ভাগ্যে বিশ্বাস করিনা, তারাও কাফের। যারা বলে চৌদ্দশ বৎসর আগের কোরআন এখন অচল, তারাও কাফের। যারা বলে আদম বলে কেউ নাই, বিবর্তন প্রকৃয়ায় বানর থেকে মানুষ হয়েছে, তারাও কাফের। কেউ যদি বলে কার্ল মার্কসের আদর্শ আমার আদর্শ, লেনিন-মাও সেতুং এর আদর্শ আমার আদর্শ তাহলে সেও কাফের। কেউ যদি বলে ডারউইনের বিবর্তনবাদ সত্য তাহলে সেও কাফের। কেউ যদি বলে নামায-রোজা-হজ্ব-জাকাতের বিধান আমি মানিনা তাহলে সেও কাফের। একজন বললো মরলেই তো শেষ, হিসাব নিকাশ আবার কি? আমি পরকালে বিশ্বাস করিনা, সেও কাফের। কেউ বললো ইসলামের শিক্ষা দেশকে পিছিয়ে দিয়েছে, চাই বিজ্ঞানমুখী শিক্ষা, সেও কাফের। কেউ যদি বলে মুহম্মদ(দঃ) এগারটি বিয়ে করে অন্যায় করেছেন, তাহলে তারও ঈমান থাকবেনা। কেউ যদি বলে আল্লাহ সত্বাগত ভাবে সর্বত্র বিরাজমান তাহলে তারও ঈমান থাকবেনা। কেউ যদি বলে হাত কাটা আইন হলো বর্বর আইন, তাহলে সেও কাফের। কেউ যদি বলে ইসলামের ব্যাভিচারের শাস্তি হলো বর্বরতা তাহলে সেও কাফের। কেউ যদি পর্দা প্রথা নিয়ে বিদ্রুপ করে, যদি বলে এগুলো ভন্ডামী, তাহলে সেও কাফের। কেউ যদি বলে আল্লাহ বলতে কিছু নেই, একটা শক্তি আছে যার নাম প্রকৃতি, তাহলে সেও কাফের। উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে কেউ যদি দাড়ি টুপীর প্রতি বিষোদগার উচ্চারণ করে তাহলে সেও কাফের। কেউ যদি বলে মুহম্মদ(দঃ) শেষ নবী নন, আরও নবী আসবেন, তাহলে সেও কাফের। কেউ যদি বেহেশতের বাহাত্তর স্ত্রী, হুর, গেলমান নিয়ে হাসি ঠাট্টা করে, তাহলে সেও কাফের। কেউ যদি বলে আমাদের পীর প্রতিরাতে আল্লাহর দর্শন লাভ করেন, তাহলে সেও কাফের। কেউ যদি বলে আমার পীর সর্বত্র বিরাজমান, তাহলে সেও কাফের। কেউ যদি বলে আমি কোরআনের বিধান মানিনা- তার সম্পর্কে আল্লাহ বলেন- যারা আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন সে অনুসারে মিমাংসা করেনা তারাই কাফের( সুরা মায়েদা-৪৪)। কেউ যদি বলে আমি সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করি কিন্তুু কোন ধর্ম মানিনা, সেও কাফের। কেউ যদি বলে আমি আল্লায় বিশ্বাসী কিন্তুু মুহম্মদকে অনুসরণ করার যৌক্তিক কোন কারণ দেখিনা, সেও কাফের। রাসুলুল্লাহ(দঃ) বলেছেন- যার হাতে মুহম্মাদের প্রাণ তাঁর শপথ! যদি মুসা(আঃ) তোমাদের মধ্যে আসেন আর তোমরা তার আনুগত্য করো এবং আমাকে ছেড়ে দাও, তাহলে তোমরা সুদূর ভ্রষ্টতায় পথভ্রষ্ট হবে। (মাযমাউয যাওয়াইদ, হা/৮১০। কেউ যদি বলে ইসলামকে মডিফাই করতে হবে যুগের সাথে সমন্বয় রেখে, সেও কাফের। কারণ আল্লাহ বলেন- আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন পূর্ণাঙ্গ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে দ্বীন হিসাবে মনোনীত করলাম( সুরা মায়েদা-৩)
যারা আমেরিকা ও ইউরোপীয় জীবন ব্যবস্থার জন্য আক্ষেপ করে বলে আহা আমাদের দেশেও যদি এরকম জীবন ব্যবস্থা কায়েম হতো। তাদের সম্পর্কে কোরআনে বলা হয়েছে- যে ব্যক্তি ইসলামকে বাদ দিয়ে অন্য কোন জীবন ব্যবস্থার অনুসরণ করবে তার কাছ থেকে কিছুই কবুল করা হবেনা; আর সে আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে(সুরা আল ইমরান- ৮৫)। কেউ যদি বলে কোরবানীর সময় এত নিরাপরাধ পশু হত্যা মোটেও ন্যায়সঙ্গত নয়, তাহলে সে কাফের হয়ে যাবে কারণ বিধানতো আল্লাহর। কেউ যদি বলে ইসলামে যে একাধিক বিয়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে এই বিধান যথোপযুক্ত নয় তাহলে সেও কাফের। কারণ আল্লাহ বলেছেনঃ যদি তোমরা ভয় করো যে ইয়াতিম মেয়েদের প্রতি সুবিচার করতে পারবেনা, তবে নারীদের মধ্য থেকে তোমাদের পছন্দ অনুযায়ী দুজন, তিনজন অথবা চারজনকে বিয়ে করে নাও(সুরা নিসা-৩)।
মুসলমানের ঘরে জন্মগ্রহণকারী কোন ব্যক্তি এইসব কুফরী বিশ্বাস লালন ও উক্তির কারণে যদি কাফের হয়ে যায় তাহলে তার পূর্বের সব নেক আমল বরবাদ হয়ে যাবে। পাহাড় পরিমাণ স্বর্ণও যদি সে মানুষের কল্যানে ব্যয় করে থাকে তাহলে তার এমন আমলের সওয়াবও নষ্ট হয়ে যাবে। তার বিবি তার জন্য হারাম হয়ে যাবে। এ অবস্থায় যত বাচ্চা জন্ম নেবে সব অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে। আর এ অবস্থায় মারা গেলে চিরস্থায়ী ভাবে জাহান্নামে থাকবে। আল্লাহ বলেন-নিশ্চয়ই যারা আমার আয়াত সমূহকে অস্বীকার করেছে এবং দম্ভভরে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তাদের জন্য কখনো আসমানের দরজা খুলে দেয়া হবেনা, যতক্ষণ পর্যন্ত একটি সুঁচের ছিদ্রপথ দিয়ে একটি উট প্রবেশ করতে না পারবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা। আমি এভাবেই অপরাধীদের প্রতিদান দিয়ে থাকি। সেদিন তাদের জন্য নীচের বিছানাও হবে দোযখের( আবার এই জাহান্নামই হবে) তাদের উপরের আচ্ছাদন, এভাবেই আমি অত্যাচারীদের প্রতিফল দিয়ে থাকি( সুরা আরাফ-৪০, ৪১)।

আরও পড়ুন  আরও ৯৮২ প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত

মোনাফেকঃ মুসলমানের ঘরে জন্ম নিয়ে যারা মুসলমানিত্বের দাবীদার, কিন্তুু উপরে বর্ণিত কুফরি বিশ্বাসে বিশ্বাসী, এরা হলো মোনাফেক। যতক্ষণ তারা মুসলমানের পরিচয়ে থাকবে ততক্ষণ তারা মোনাফেক। আর যখনই তারা বলবে আমরা এই মুহুর্তে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করলাম তখন তাদের পরিচয় হবে কাফের। যেমনঃ আহমদ শরীফ, হুমায়ুন আজাদ, আরজ আলী মাতব্বর, তসলিমা নাসরিন এরা মোনাফেক নয়, কাফের। কিন্তুু এদের বিশ্বাসকে যে সব মুসলমান লেবাসধারীরা সমর্থন করবে তারা মোনাফেক। কাফেরের চাইতেও মোনাফেকরা আরও বেশী নিকৃষ্ট, কারণ এরা প্রতারক। এদের শেষ ঠিকানা জাহান্নামের সর্বশেষ স্তরে। এরাও চিরদিন জাহান্নামে থাকবে। আল্লাহ বলেন- তিনি মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী, আল্লাহর সাথে শরীক করে এমন পুরুষও নারী এবং আরও যারা আল্লাহপাক সম্পর্কে নানাবিধ খারাপ ধারণা পোষণ করে তাদের সবাইকে শাস্তি প্রদান করবেন, খারাপ পরিণাম তো ওদের চারদিক থেকে ঘিরেই আছে, আল্লাহপাক তাদের উপর গজব পাঠিয়েছেন, তাদের তিনি অভিশাপ দিয়েছেন, অতঃপর তাদের জন্য তিনি দোযখ তৈরী করে রেখেছেন, আর দোযখতো হলো নিকৃষ্ঠ ঠিকানা(সুরা ফাতাহ-৬)।

আরও পড়ুন  ঘূর্ণিঝড় ‘নিভার’ আসছে

মুসলমানঃ যারা আল্লাহর বিধান পুরোপুরি ভাবে পালন করে। তারা কোরআন ও হাদীসের যা শুনে তা বিশ্বাস করে। কোন কুফরি বিশ্বাসকে তারা প্রশ্রয় দেয়না। তারা বলে কোরআনই হলো মানবজাতির মুক্তির সনদ। তারা ব্যক্তিজীবনে, পারিবারিক জীবনে, রাষ্ট্রীয় জীবনে, আন্তর্জাতিক জীবনে কোরআনের অনুসরণ করে। এরা হলো আল্লাহর ভাষায় মুত্তাকী। আল্লাহ বলেন- তিনি মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীদের এমন এক স্থায়ী জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যার তলদেশ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত রয়েছে, সেখানে তারা হবে চিরন্তন, তিনি তাদের গুনাহ সমূহ মাফ করে দেবেন, আর (সত্যিকার অর্থে) আল্লাহ পাকের কাছে(মুমিনদের) এটা হচ্ছে মহাসাফল্য(সুরা ফাতাহ- ৫)

পরিশেষে বলবো- আমরা কাফির হবো নাকি মোনাফেক হবো নাকি মুসলমান হবো এই সিদ্ধান্ত আমাদের নিজেদের। রাসুলুল্লাহ(দঃ) এর প্রিয় চাচা আবু তালিব আল্লাহ ও রাসুলে পূর্ণ বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তুু তার মৌখিক স্বীকৃতি ছিলোনা। এজন্য তিনি কাফের এবং চির জাহান্নামী। অপরদিকে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই মৌখিক স্বীকৃতি দিয়ে মুসলমান হয়েছিলেন। তিনি নামাযও পড়েছেন, রোজাও রেখেছেন, জেহাদেও গেছেন, কিন্তুু অন্তরে বিশ্বাস ছিলোনা। এজন্য তিনি গোপনে কাফের-মুশরিকদের সাথে সম্পর্ক রাখতেন। শেষ পর্যন্ত তার মৃত্যু হয়েছে কাফের অবস্থায়। তিনিও চির জাহান্নামীদের খাতায় তার নাম লিপিবদ্ধ করে গেলেন।

দুনিয়ার জীবন কয়দিনের? দু’দিনের এই জীবনের জন্য যারা চিরস্থায়ী জীবন হাতছাড়া করে, তাদের চেয়ে দূর্ভাগা আর কে হতে পারে?

জয়নাল আবেদীন জুয়েল, বিশিষ্ট লেখক ও ছড়াকার।

সংবাদটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন।

সর্বশেষ সংবাদ